মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্মার্ট রূপান্তর
গাজী আলিম আল রাজী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১০:১৩ AM আপডেট: ২৮.১১.২০২৩ ১০:২৫ AM
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের প্রাণবন্ত চেষ্টার ফসল আজ বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করতে শুরু করেছে। ই-সার্ভিসের মাধ্যমে সরকারি/বেসরকারি সেবার সহজলভ্যতা-স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এর প্রতিদিনের ব্যবহারিক বাস্তবতা, প্রায় ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম এমবিপিএস প্রতি ৭৮ হাজার টাকা থেকে ৩০০ টাকায় নেমে আসা, সারাদেশে প্রায় সাত লক্ষ ফ্রিল্যান্সারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বা ডিজিটাল গভর্নেন্সে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসাবে উপাস্থাপন এখন আর রপকথা বা আগামীর স্বপ্ন নয় এগুলো এখনকার প্রতিদিনের নিগুঢ় বাস্তবতা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই ধারাবাহিকতায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় শামিল হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের রোডম্যাপে অর্জিত অভিজ্ঞতা, ঘাত প্রতিঘাত, সক্ষমতা দিয়ে নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে সমর্থ হবো। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের এই যাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল হিসাবে কতটা ডিজিটাল ছিল, কতটা স্মার্ট হতে পারছে বা কতটা স্মার্ট হওয়া উচিত, এই বিষয়গুলো কিছুটা পর্যালোচনা করে দেখা যাক।

২০২৫ সাল নাগাদ যখন শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবে সেখানে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত মনোনয়ন নিতে স্বশরীরে আসতে হয় ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ক্যাশ টাকা পরিশোধ করে নিতে হয় মনোনয়ন ফর্ম। প্রতি মনোনয়ন প্রত্যাশীর সাথে ৫ থেকে ২৫ জন সমর্থক ৫/৭ দিন ঢাকাতে অবস্থান করেন যা ঢাকা শহররে মানুষের জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে। সরকার চাইছে ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়তে, সব কিছুকে ডিসেন্ট্রালাইজড করতে কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের এই এনালগ মনোনয়ন সিস্টেমে  উল্লেখিত দুটি উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করছিল।

আশার কথা, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচণে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন সিস্টেম  ডিজিটালিজড করা হয়েছে । মনোনয়ন ফর্ম কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও অনলাইন  থেকে নেয়া গেছে এবং ফিজিক্যলি ও অনলাইনে জমা দেয়া গেছে। শুধু মনোনয়ন ফর্ম নেয়া এবং জমা দেয়া নয় নির্ধারিত ফি অনলাইনে পরিশোধ  করে পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। একটি ইন্টারেটিভ ওয়েভ পোর্টাল ও স্মার্ট এপের মাধ্যমে প্রার্থী তার ঘরে বসেই মনোনয়নের পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে পেরেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচণে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়েছেন ৩৩৬২ জন প্রার্থী আর অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন ও জমা দিয়েছেন ১২১ জন মনোয়ন প্রত্যাশী। আশাকরি সময়ের প্রয়োজনে আগামীতে অনলাইনে মনোনয়ন প্রাপ্তির এই প্রক্রিয়া আরও বেশি সংখ্যক প্রার্থী বেঁছে নিবেন। মনোনয়নের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া যেমন ডিজিটালাইজড হয়েছে প্রার্থীর যোগ্যতা বিচারে মাঠ পর্যায়ের দলীয় বা বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট গ্রহণের প্রক্রিয়াও ডিজিটালাইজড করা দরকার। এর ফলে দৌরাত্ম কমবে মিডিলম্যান ও মনোনয়ন ব্যাবসায়ীদের ,নিশ্চিত হবে  শতভাগ স্বচ্ছতা। আর এর মধ্যমেই প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল হিসাবে নিজেদেরকে এগিয়ে রাখবে।

ত্রিবার্ষিক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সদস্যপদ গ্রহন করতে হয় আর সেই আবেদন সংরক্ষণের কোন ডিজিটাল ব্যাবস্থাপনা নেই যার ফলে এখন পর্যন্ত এই দলের কোন ইউনিটে স্পেসিফিক কত সদস্য আছে তা বলা সম্ভাব হয় না। যার ফলে বিভিন্ন দুর্বৃত্ত, অপকর্মকারীরা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চলে যেতে পারে অনেক দূর। আমরা উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের স্বপ্ন দেখি, সেই উন্নত দেশগুলিতে সব দলের কর্মীদের ডিজিটালী নাম নিবন্ধন করার পদ্ধতি আছে। একটি দলে কত কর্মী আছে সেই সংখ্যা এবং তাদের তথ্য উপাত্ত ডাটাবেজ সংগ্রহ করা হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ তাদের প্রত্যেকটি কর্মীর জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্রের প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। ডিজিটাল পরিচয়পত্রের মধ্যে প্রত্যেকটি কর্মীর একটা ইউনিক নাম্বার থাকবে। যখন তিনি কর্মী হিসেবে দলে নিবন্ধিত হবেন তখন তার এই নাম্বার বসানো হবে। তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ডাটাবেজে এন্ট্রি করা হবে। কাজেই যখন একজন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগার বলে পরিচয় দেওয়া হবে তখন ওই ডাটাবেজ পরীক্ষা করে দেখবে আসলে তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী কিনা- নাকি আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করছেন। তাহলে সবার পদ পদবীতে স্বচ্ছতা থাকবে এবং জবাবদিহিতা আসবে।

ডিজিটাল পদ্বতিতে একজন কর্মী যখন আওয়ামী লীগের সদস্য হবেন, তখনই তার ফরম ফিলআপ করতে হবে এবং ফরম ফিলআপে তার যাবতীয় তথ্য দেওয়া হবে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি দিয়ে তাকে আবেদন করলে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে  প্রথমে তাকে অস্থায়ী সদস্য করা হবে। তার অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে যে, তিনি সঠিক তথ্য দিয়েছেন কিনা। সঠিক তথ্য দিলে তিনি পূর্ণাঙ্গ সদস্য হবেন। পূর্ণাঙ্গ সদস্য হলে তিনি  ইউনিক আইডি সহ একটি ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড পাবেন। যার ফলে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ জানবে যে তাদের কর্মী সংখ্যা কত, অন্যদিকে ওই কর্মীটিও আওয়ামী লীগের সদস্য বলে যেমন গর্ববোধ করতে পারবেন তেমনি দায়িত্ববোধ তৈরী হবে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সদস্য পদ ফাইনাল হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। আশাকরি দ্রুততম সময়ে এই ডিজিটাল সদস্য সংগ্রহের ব্যাবস্থাপনা শেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের স্মার্ট রুপান্তরের সুত্রপাত হবে।

অনলাইনে মনোনয়ন ব্যবস্থাপনা, কর্মীদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র, জেলা পর্যায়ে স্মার্ট কর্নার এবং ভার্চুয়াল জগতের প্রযুক্তিগত জ্ঞান সমৃদ্ধ কর্মী তৈরির মাধ্যমে দল হিসাবে বাংলাদেশ  আওয়ামী লীগ স্মার্ট হয়ে উঠবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেশের মানুষ এখন ফিজিক্যাল জগতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতে বসবাস করে। আর এই ভার্চুয়াল জগতে রয়েছে সত্য-মিথ্যার বিশাল প্রতিযোগিতা। এখানে  আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নেতাকর্মীদের মুখোমুখি হতে হয় বিএনপি, জামাত, শিবিরের ডেডিকেটেড সাইবার কর্মীদের । প্রতিনিয়তই তারা বাংলাদেশে থেকে বা পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসেই সহজে অসত্য তথ্য, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা হওয়াটাই স্বাভাবিক। চালিয়ে যাচ্ছে।

৭৪ বছর আগে দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যাত্রা  এনালগ হলেও ছিল সেই সময়ের আধুনিক এবং প্রগতিশীল। এই দলের  অধিকাংশ নীতিনির্ধারকরা বয়জেষ্ঠ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞাণে বা ব্যাবহারে ততোটা পটু ছিলেন না। ফলে ভার্চুয়াল জগতের বিএনপি, জামাত, শিবিরের ডেডিকেটেড সাইবার কর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেক সময় পিছিয়ে পড়তে হয়। বর্তমানে এই ভার্চুয়াল যুদ্ধ মোকাবেলায়  বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অনেক ইনিশিয়েটিভ আছে। আওয়ামী লীগের জেলা ইউনিট পর্যায়ে স্মার্ট কর্নার করা হয়েছে। সেখানে তারা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার, রাউটার, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা করছে। এসব স্মার্ট কর্নার হাব হিসেবে কাজ করছে, এখান থেকে তৈরি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ভার্চুয়াল স্মার্ট কর্মী। জেলা পর্যায়ে কাজ শেষ হওয়ার পর দলটি উপজেলা পর্যায়েও এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরির চেষ্টা চলছে। এই সকল অ্যাক্টিভিস্টরাই ভার্চুয়াল জগতে তুলে ধরবে প্রকৃত সত্য, লড়বে মিথ্যা প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে।

আশাকরি বাংলাদেশ  আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা প্রযুক্তিগত জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়ে ফিজিক্যাল জগতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতেও নিজের আদর্শের উপস্থাপন করবেন। আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজে এবং নিজের দলকে স্মার্ট করে প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।


লেখকঃ গাজী আলিম আল রাজী, প্রযুক্তিবিদ, সদস্য-অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, বাংলাদেশ  আওয়ামী লীগ।

ইমেইলঃ gazialim96@gmail.com

আজকালের খবর/বিএস