শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে
রেজাউল করিম খোকন
প্রকাশ: সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩, ৭:৪৬ PM
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায় ২০০ কোটি মানুষের বসবাস। অথচ এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই কম। এসব দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাব আছে। এই দেশগুলোর রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উপার্জনকারীদের অধিকাংশই আবার অদক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক বাধার পাশাপাশি অ-শুল্ক বাধাও আছে। বিশ্বের মোট বাণিজ্যের মাত্র আট শতাংশ হয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। শুধু ঔপনিবেশিক আমল নয়, দেশগুলোর সঙ্গে হাজার বছরের সম্পর্ক বাংলাদেশের। আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে নৌ, সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ১৮ শতাংশে নিয়ে আসতে পেরেছে। আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন করছি। আমরা ভারত, নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবাধে চলাচল করতে আগ্রহী। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ বাণিজ্যই হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় এবং অঞ্চল হিসেবে ‘দক্ষিণ এশিয়া’ এখনো শক্তিশালী কোনো জায়গা নয়। অথচ একে শক্তিশালী করার সুযোগ আছে।  বাংলাদেশ-ভারতের অবকাঠামো উন্নয়ন যতটুকু হয়েছে, তা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর জোর দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগ কম। এ জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতি দরকার। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুবিধার দিক থেকে আঞ্চলিক অখণ্ডতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে মোটামুটি মিল আছে। এগুলো হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা। কিন্তু দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ খুবই কম। গভীর গবেষণার মাধ্যমে সমস্যাগুলো মোকাবিলায় ঐকমত্য দরকার। আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব নিয়ে অতীতে বহুবার আলোচনা হয়েছে। এখন নতুন বাস্তবতা। ফলে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে। অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশ হয় নিজেদের মধ্যে। তাই বাণিজ্য বাড়াতে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বের হওয়া দরকার। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে দরকার শক্তিশালী গণতন্ত্র। আঞ্চলিক সংঘাত আছে। আছে জলবায়ু পরিবর্তন। এসব সমস্যা দূর হওয়া উচিত। আর এ জন্য দরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একই ভৌগোলিক রেখায় অবস্থান করলেও তাদের মধ্যে একক মুদ্রা (কমন কারেন্সি) প্রচলনের মতো অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা এখনও তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা বাড়াতে হবে। কমাতে হবে ব্যবসার খরচ। পাশাপাশি নিয়মিত পারস্পরিক পরামর্শ চালু করতে হবে। একটি অঞ্চলের জন্য একক মুদ্রা প্রচলন করতে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। এর মধ্যে অর্থের অবাধ চলাচল, সীমান্ত অতিক্রম করার স্বাধীনতা, ঝুঁকি সহনশীলতা, পারস্পরিক আস্থা, একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ইত্যাদি। একই ভৌগোলিক সীমায় অবস্থানের পরও প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা ভিন্ন। মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতের মুদ্রা রুপি বেশ অস্থিতিশীল। তাই কোনো ব্যাংক রুপি কিনে রাখলে তাতে ঝুঁকি থাকতে পারে। এ ছাড়া সার্বভৌমত্ব ইস্যু বিবেচনা করলে দক্ষিণ এশিয়ায় একক মুদ্রা চালুর প্রেক্ষাপট এখনো তৈরি হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। একক মুদ্রা বা কোনো দেশের মুদ্রাকে নীতিনির্ধারক ধরে চালকের আসনে বসানো যুক্তিযুক্ত হবে না। এখন একক মুদ্রা ব্যবহারের মতো ইউনিয়ন গড়ে তোলার সময়ও হয়নি। টাকা-রুপি ও চীনা মুদ্রায় লেনদেন চালু হলেও তাতে সাড়া মিলছে না। ভারতের সঙ্গে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ও চীনের বড় আকারের বাণিজ্য ঘাটতি আছে। এ জন্য মুদ্রা অদলবদলের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এখনো দক্ষিণ এশিয়ায় একক মুদ্রা প্রচলনের মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ মিলে ‘রুপা’ নামের মুদ্রার প্রচলন করতে চেয়েছিল। সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। এখন যে পরিমাণ রুপি আয় আছে, রুপিতে শুধু সে পরিমাণ আমদানি করা হচ্ছে। রাশিয়া, আফগানিস্তান ও চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিজস্ব মুদ্রার লেনদেন হয়। একক মুদ্রার আশা না ছেড়ে আমাদের সবার বিকল্প খোঁজ করা উচিত। যাতে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমে। চ্যালেঞ্জ থাকলেও বসে না থেকে স্বল্প পরিসরে নতুন উদ্যোগ হিসেবে শুরুর চিন্তা করা উচিত। বাণিজ্যকে সামনে রেখে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য স্বল্প পরিসরে হলেও একক মুদ্রার প্রচলন হতে পারে। এর চেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে দেশগুলোর আমদানি-রপ্তানি ও শুল্কায়ন প্রক্রিয়া একই ধরনের হওয়া। প্রতিটি দেশের পণ্য শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ডকুমেন্ট বা কাগুজে প্রমাণাদির সংখ্যাও ভিন্ন। এতে সময় ও অর্থ ব্যয় হয় বেশি। একটি নির্দিষ্ট ছকে সবাই শুল্কায়ন করলে তা নিয়ে আপত্তি উঠলেও নিষ্পত্তি করা সহজ হয়। এটি সব দেশ চাইলেই পারে। ডলারের বিকল্প লেনদেন চালু হলে খরচ কমবে। ধীরে ধীরে বৈশ্বিক বাজারে ডলারের লেনদেন কমছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে লেনদেনের নয় শতাংশ ছিল ডলার-বহির্ভূত, যা গত বছরের ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ব্যবসা বাড়াতে খরচ কমাতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসার স্বার্থে নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। ডলারকে দুর্বল করে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রার মর্যাদা থেকে তাকে নামিয়ে আনার চেষ্টাও ব্রিকস দেশগুলো করে যাচ্ছে। চীনা আধিপত্যের অধীনে থাকা ব্রিকস নামের এই গ্রুপ মার্কিন স্বার্থবিরোধী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের নীতি অনুসরণ করে থাকে বলে সাধারণভাবে  বলা হয়ে থাকে।

কেউ কেউ বলেন, ভারত কেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে না?  তাদের সঙ্গে ভিসা, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যু আছে। রুপি-টাকা লেনদেন চালু হয়েছে, কিন্তু লেনদেন হচ্ছে না। এই লেনদেন চালু করতে হলে ভারতকে বড় অঙ্কের লাইন অব ক্রেডিট দিতে হবে। বড় ধরনের ঝুঁকি সামলাতে ভারতীয় ও বাংলাদেশি মুদ্রার অদলবদল (সোয়াপ) করতে হবে। এসব উদ্যোগে ভারতকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি উভয় দেশকে করনীতি পরিবর্তন করতে হবে। দুই দেশ মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতি নিয়ে প্রতি তিন মাস অন্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে সভা করতে পারে। বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়েও এমন সভার প্রয়োজন আছে। আসামের চেয়ে আমাদের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কয়েক গুণ বেশি। ফলে এখন আর কেউ আসামে চলে যাচ্ছেনা। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গতি বাড়াতে আঞ্চলিক বাণিজ্য বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে প্রায় সময়েই। অনেক বাধা বিপত্তির কারণে মাঝে মধ্যে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য হোঁচট খাচ্ছে। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে উপকৃত হবে বাংলাদেশ। বাণিজ্যের হাত ধরে এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটতে পারে। ভারতের শুধুমাত্র ত্রিপুরাতেই বছরে ৫০০ কোটি রুপির পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ রপ্তানির মাত্রা আরো বাড়াতে পারে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় এসব রাজ্যে পণ্য পরিবহনেও বিদ্যমান ব্যবস্থা অনেকটা অনুকূল। যে কারণে এসব রাজ্যে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভারসাম্য অনেকটা বজায় রাখা সম্ভব। বাংলাদেশ থেকে বিবিধ পণ্য রপ্তানি হয়ে মায়ানমারে। এর মধ্যে রয়েছে যার মধ্যে গার্মেন্টস সামগ্রী, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য চামড়াজাত পণ্য, জুতা, ঔষধপত্র প্রভৃতি রয়েছে। বর্তমানে নানা জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। অথচ বাণিজ্য সহজীকরণ করা হলে এই রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব। মিয়ানমারের ওষুধ বাজার মূলত আমদানিনির্ভর। প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের ওষুধের বিরাট বাজার রয়েছে সেখানে। তারা প্রধানত থাইল্যান্ড, চীন থেকে ঔষধ আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সেখানে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে মিয়ানমারে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে এখন উন্নতমানের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী প্রস্তুত হচ্ছে। মিয়ানমারে যার বিরাট চাহিদা রয়েছে। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী সেখানে রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ভালো পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারে। এক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশি মিয়ানমারের বাণিজ্যিক লেনদেন বেশ চাঙ্গা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। এক সময়ে মিয়ানমারের সারা বিশ^ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। তারপরেও মিয়ানমারের সঙ্গে কিছু কিছু পণ্যের আদান প্রদানের মাধ্যমে বৈধ বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকদিন কোনোভাবে চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর বাইরেও অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু পণ্য মিয়ানমারে যাচ্ছে। আবার একইভাবে মিয়ানমার থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ আসছে। মাত্র কয়েক বছর আগেও প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ছয়গুণ। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরের ব্যবধানে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি পুষিয়ে গত অর্থ বছরে মিয়ানমারে আমদানির তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য আরো অনেক বেশি সম্প্রসারিত করা সম্ভব। পাশাপাশি অবস্থান হওয়া সত্বেও দীর্ঘদিনেও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, দুই দেশের মধ্যে নৌ-ট্রানজিট না থাকা। বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কানেক্টিভিটি বা সংযোগ ঘটানোকেই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এর মধ্যে নৌ-প্রটোকল এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাইলেও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।  বাংলাদেশ-ভারত নেপাল-ভুটান রেলে বাড়বে বাণিজ্য। ভারত বাংলাদেশের আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। আমদানি পণ্যের একটি অংশ রেলপথে বাংলাদেশে আসে। তবে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রেনগুলো বাংলাদেশে পণ্য নামিয়ে অধিকাংশ সময় খালি অবস্থায় ফিরে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। আবার ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাচ্ছে পণ্য। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সিংহভাগ পণ্যই সড়ক পথে রপ্তানি হয়। এতে পণ্য রপ্তানিতে পরিবহন খরচ বেশি হয়। আবার পণ্যের ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ বন্দরে লোড-আনলোডের সময়ও বেশি লাগে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার চাইছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে রেলপথে রপ্তানি বাড়াতে। এ জন্য ভারতের সঙ্গে চলমান রেলপথগুলোকে আরো কার্যকর করা, চালু  রুটে পণ্য সংরক্ষণসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো, বন্ধ রেলপথ চালু এবং নতুন রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশেও রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে রপ্তানি ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য সব রেল  রুট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে অনেক বড় আকারের ভোক্তা শ্রেণী রয়েছে এবং বিশেষত ভোগ্যপণ্য উৎপাদন খাতে নেপালের উদ্যোক্তারা এ দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। দু’দেশের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চুক্তির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে। ওদিকে প্রতিবেশি দেশ নেপালের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ লেনদেন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। নেপালে বাংলাদেশের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য, খাদ্য দ্রব্য, সৌখিন, গৃহস্থালি পণ্য ও নির্মাণ সামগ্রীর বিরাট চাহিদা রয়েছে, নেপাল অনেকদিন ধরেই আমদানিতে একচেটিয়া ভারত নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষিতে নেপালে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার বিস্তৃতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে দিনে দিনে। বাংলাদেশ ও নেপালের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে সময়োচিত, দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করাই এ মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্দেহ নেই। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও ভূটানের সাথে বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, পানীয়, রাসায়নিক দ্রব্য, সিরামিকস সামগ্রী, ওষুধ, আসবাবপত্র, স্টিল ও আয়রন সামগ্রী, সাবান, মেলামাইন, প্লাস্টিকজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, টেরিটাওয়েল ও পোশাক সামগ্রী, খেলনা, পাটজাত দ্রব্য, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পণ্য, বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্য, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, আইটি সামগ্রী ইত্যাদির বিরাট বাজার রয়েছে এসব দেশে। আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির নতুন সোপানে উন্নীত হতে পারে খুব দ্রুত।

দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে শক্তিশালী আঞ্চলিক সংযোগ, সহযোগিতা এবং বাণিজ্যপ্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তি গ্রহণের পাশাপাশি ঔপনিবেশিক আমলের আমলাতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব গ্রহণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক জাতি আছে। প্রায় ২০০ কোটি জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। কিন্তু ‘দক্ষিণ এশিয়া’ পরিচয়টা এখনো ব্যাপকভাবে পরিচিত নয়। আঞ্চলিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রবাহ, আর্থিক সংযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সার্কটাকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। এমন বাস্তবতায় এই অঞ্চলের দেশগুলোকে ওপরের দিকে নিতে হলে দরকার রাজনৈতিক ঐকমত্য। পাশাপাশি সব সময় তদারকির জন্য দরকার আলাদা একটা শক্তিশালী দপ্তর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে একটা দপ্তর থাকা দরকার।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন শ্রমনীতি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হয়রানি
একদিনে দশটি পথসভা, উঠান বৈঠক ও একটি জনসভা করেন সাজ্জাদুল হাসান এমপি
নতুন বছরে সুদহার বাড়ছে
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজপথের আন্দোলনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে: মুরাদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকায় ইসলামী ব্যাংক
ইতিহাসের মহানায়ক: একটি অনন্য প্রকাশনা
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এক দিনে সারাদেশে ২১ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft