সোমবার ১৪ অক্টোবর ২০২৪
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন এবং উদ্দেশ্যমূলক সত্যগোপন
এস ডি সুব্রত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:৪৫ PM
পলাশীর যুদ্ধে প্রহসন আর বিশ্বাসভঙ্গের সেই নির্মম খেলায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার কথা এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের ইতিহাস অনেকরই জানা। পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে  উদ্দেশ্যমূলক সত্য গোপন করে  পলাশীর  যুদ্ধের মিথ্যাচারের ইতিহাস রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল।

সিরাজের পতনের মধ্য দিয়ে যেহেতু উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়, সেহেতু ইংরেজ এবং ইংরেজ অনুগত ঐতিহাসিকগণ প্রাণপণে বাংলা বিজয়ের কাহিনী নির্মাণ করতে গিয়ে সিরাজের চরিত্র, যোগ্যতা ও দেশপ্রেমকে অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। বাংলার ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গদেশ দখলের পরই  ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখলের অভিপ্রায়ে উচ্চাভিলাষী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং লক্ষ্য অর্জনে নানা ঘাত প্রতিঘাত  পেরিয়ে ভারতবর্ষকে করায়ত্ব করে। স্বদেশের বিশ্বাসঘাতকদের দেশদ্রোহী  কাজে সহজেই সফল  হয়েছিল ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষ দখল অভিযান। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে পতন ঘটে নবাব সিরাজউদ্দৌলার। অস্তমিত হয় স্বাধীন বাংলার শেষ সূর্য। ১৭৫৬ সালে উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে বিবাদ পেরিয়ে তরুণ সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। নবাবের খালা ঘসেটি বেগম, যোধপুরের ধণাঢ্য মাড়োয়ারি মুর্শিদকুলি খাঁ যাকে ‘জগৎশেঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, সেই জগৎশেঠ এবং তার ভ্রাতা মহতব রাই ও স্বরূপ চাঁদ, রাজা জানকীরাম, রায়দুর্লভ, রাজা রামনারায়ণ, রাজা মানিক চাঁদ, নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, উমি চাঁদ, রাজা রাজবল্লভ প্রমুখ ষড়যন্ত্রকারীদের  নানা প্রলোভনে বশ করে পলাশীর প্রহসন যুদ্ধে নবাবকে পরাজিত করে ইংরেজ বাহিনী। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় মাত্র তিন হাজার সৈন্যের ক্লাইভের বাহিনীর কাছে বিনা যুদ্ধে নবাবের ১৮ হাজার অশ্বারোহী ও ৫০ হাজার পদাতিক  বাহিনীর পরাজয় ঘটে। পলাশীর যুদ্ধে মীর মদন এবং মোহনলালের বীরত্বপূর্ণ অবদান স্মরণীয়। মীর জাফরকে বাংলার মসনদে নবাবের আসনে অধিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ষড়যন্ত্রকারীদের তালুবন্দি করে প্রহসনের পলাশী যুদ্ধে ইংরেজরা  জয়লাভ করেছিল। ইংরেজদের  পুতুল নবাব মীর জাফরকে অচিরেই পদচ্যুত করে তারই জামাতা মীর কাসিমকে নবাবের আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়। বিনিময়ে মীর কাসিম বাংলার গভর্নর ও কাউন্সিলকে দুই লাখ পাউন্ড এবং বর্ধমান, মেদিনীপুর এবং চট্টগ্রাম জেলা কোম্পানিকে হস্তান্তরে বাধ্য হন। স্বাধীনচেতা মীর কাসিম মূলত নবাবি ক্রয় করেছিলেন। ইংরেজদের ক্রীড়নকের বিপরীতে বঙ্গের প্রকৃত শাসক হতে চেয়েছেন। যেটি ইংরেজ বিরোধিতার শামিল। ইংরেজবিরোধীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ইংরেজবিরোধী সমর অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পরিণতিতে তাকে হারাতে হয় নবাবি এবং বক্সার যুদ্ধে পরাজয়ের পর দিল্লিতে পালায়ন করেন। বক্সার যুদ্ধের পর ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিরোধে নিম্ন গাঙ্গেয় উপত্যকায় আর কেউ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এর পরের ইতিহাস ইংরেজদের শোষণ-লুণ্ঠন, অর্থ-সম্পদ, পণ্য ব্রিটেনে পাচারের ইতিহাস। যার মেয়াদকাল ১৯০ বছর।

পলাশী যুদ্ধের  পর থেকেই সিরাজ চরিত্র হননের একটি অসুস্থ প্রবণতা তৈরী হতে থাকে এবং যুদ্ধে পরাজয়ের সকল দায়-দায়িত্ব তার ওপরেই নিক্ষেপ করা হয়। এটি সহজেই বোধগম্য যে, সিরাজের বিরোধিরাই পলাশী যুদ্ধ-পরবর্তী প্রায় দুই শতাব্দীকাল শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সিরাজ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত ও মূল্যায়নকে প্রভাবিত করেছে।

সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ উত্থাপনের বিভিন্ন উৎসের মধ্যে একটি অন্যতম হচ্ছে ১৭৫৭ সালের পয়লা মে অনুষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম সিলেক্ট কমিটির বৈঠকের ধারা বিবরণী। এই বৈঠকে সিরাজকে উৎখাতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের হীন পরিকল্পার পক্ষে যে সকল যুক্তি দাঁড় করায় তা হচ্ছে-  সিরাজ অসৎ এবং ইংরেজদের নির্যাতনকারী,  তিনি ফরাসীদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যার অর্থ হচ্ছে ইংরেজদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ এবং  সিরাজ বাঙালিদের কাছে তার জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন  যার ফলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সহজেই ঘটতে পারে।

পলাশী যুদ্ধ জয়ী ইংরেজ বেনিয়ারা তাদের অনুগত লেখকদের দিয়ে ইতিহাস রচনায় অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠে। নিজেদের গুণকীর্তন এবং সিরাজউদ্দৌলার প্রতি চরম বিদ্বেষপূর্ণ নানা অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। সেসব ইতিহাসে লম্পট, মাতাল, চরিত্রহীন, নিষ্ঠুর, অপদার্থ, অর্বাচীন এসব  নেতিবাচক অভিধায় সিরাজউদ্দৌলাকে অভিহিত করা হয়েছিল। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ইংরেজ বেনিয়ারা বাধ্য হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে রক্ষা করেছিল বঙ্গভূমিকে, ইংরেজদের আজ্ঞাবহ লেখকদের রচনায় এমন কথাও প্রকাশ পেয়েছিল। ইংরেজ বন্দনায় লেখক তালিকাবেল  দীর্ঘ। উল্লেখযোগ্য ইউসুফ আলী রচিত তারিখ-ই-বাঙ্গলা-ই-মহব্বত জঙ্গি। আমির গোলাম হোসেন খাঁ তাবাতাবাই রচিত সিয়ার-উল-মতাখেরিন (শেষ শাসকবর্গের জীবনী)। ইংরেজ জর্জ উডনির নিরুদ্দেশে,   মুনশি গোলাম হোসেন সেলিম জইদপুরী রচিত রিয়াজ-উম-সালাতিন। এ ধরনের ভারতীয় প্রচুর লেখক ফার্সি ভাষায় ইংরেজদের দেয়া নজরানার বিনিময়ে মিথ্যা, বিকৃত ইতিহাস রচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের রচনায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি তীব্র ঘৃণা ও বিষোদ্গার করে পলাশীর যুদ্ধের সব দায় নবাবের ওপর চাপিয়ে ইংরেজ বেনিয়াদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে কল্পিত নেতিবাচক সমালোচনামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখ। এমন  মিথ্যাচারে সিরাজউদ্দৌলার চরিত্র হননের কল্পিত কাহিনী সমাজে সিরাজউদ্দৌলা বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি এবং সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করছিল।

দখলদার ইংরেজদের ইমেজ রক্ষায় এবং প্রহসনের পলাশীর যুদ্ধের ঘৃণিত দায় থেকে ইংরেজদের অব্যাহতি লাভের অভিপ্রায়ে মিথ্যাচারের ইতিহাস রচনায় ইংরেজরা প্রত্যক্ষ মদদ জুগিয়েছিল। স্বয়ং ইংরেজদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সিংহাসনে আসীনের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা কখনো মদ্যপান করেননি। অথচ লম্পট, মদ্যপ ইত্যাদি কুখ্যাতির বোঝা তাকে যুগ-যুগান্তর বহন করতে হয়েছে।

পলাশীর যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিকৃত ইতিহাস রচনায় ইংরেজ এবং তাদের এদেশীয় অনুসারীরা যে বার্তাটি দৃষ্টান্তরূপে স্থাপন করতে চেয়েছেন তার মূল কাঠামোটি ছিল ইংরেজদের আগ্রাসন এবং মুর্শিদাবাদের প্রাসাদ চক্রান্তকে বিচ্ছিন্ন করা। প্রাসাদ চক্রান্তের ঘটনা না ঘটলে ইংরেজদের পক্ষে সমর ও রাজশক্তি রূপে আবির্ভূত হওয়ার প্রয়োজন হতো না। এই কথাগুলো বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

সারা দুনিয়াব্যাপী ইংরেজদের উপনিবেশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাই প্রমাণ করে ভারতবর্ষে বাণিজ্যের উছিলায় দেশ দখলই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। কার্ল মার্কস ১৮৫৩ সালে বলেছেন- ‘ইউরোপের দুই জোটের উপনিবেশ ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও যুদ্ধে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিণত হয়েছে সমর ও রাজশক্তি রূপে।’ বণিকবেশে ডাচ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে এসে পর্তুগিজদের উচ্ছেদ করেছিল। এরপর ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে আগমন করে। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে ফরাসি সামরিক অফিসারদের অধীনে ভারতীয়দের যুক্ত করে গড়ে তুলেছিল সৈন্যবাহিনী। ফরাসি সৈন্যবাহিনীর রণনৈপুণ্যে ব্রিটিশরাও সেনাবাহিনী গঠন শুরু করে। ইউরোপের পরাশক্তি বণিকের ছদ্মবেশে ভারতবর্ষে এসেছিল। তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। সৈন্যবাহিনী গঠনের মূলে ছিল সামরিক অভিযানে ভারতবর্ষ দখল এবং উপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। একে একে যখন গোটা ভারতবর্ষ ইংরেজদের অধীন হয়ে যায়। মৃত্যুশয্যায় নবাব আলিবর্দী খাঁ সিরাজউদ্দৌলাকে ইংরেজ বেনিয়াদের অশুভ তৎপরতা শক্ত হাতে দমন এবং মাতৃভূমি রক্ষার তাগিদ পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছিলেন। নবাব আলিবর্দী খাঁর নির্দেশ অনুযায়ী নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে চেয়েছেন। পারেননি দরবারের গোপন শত্রু বিশ্বাসঘাতকদের কারণে। শুরুতে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার নানা উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদে সিরাজউদ্দৌলা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির অবস্থানগত কারণেই কাশিমপুর কুঠির এবং কলকাতা অভিযানে (২০ জুন ১৭৫৬) বাধ্য হয়েছিলেন। ফরাসীদের সঙ্গে সিরাজের গোপন আঁতাতের ইংরেজ অভিযোগটিও ছিলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কার্যকল্পিত। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাজ্যের শাসক হিসেবে সিরাজ তার রাজনৈতিক ধারণার ভিত্তিতেই রাজ্যর মধ্যে নিরপেক্ষতার নীতি যথাসম্ভব দ্রুত প্রয়োগ করেন। কিন্তু ক্লাইভ নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করে চন্দননগরে ফরাসীদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ চালিয়ে তাদের কুঠিগুলো দখল করে নেন। এই পরিস্থিতিতে নবাব তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ক্লাইভের আক্রমণ প্রতিহত করতে উদ্যত হন। তিনি ফরাসীদের গ্রেফতার করতে ইংরেজদের বাধা দেন। দক্ষিণ ভারতে একজন ফরাসী জেনারেলের কাছে নবাবের একটি চিঠি ইংরেজদের হস্তগত হলে ক্লাইভ এর মধ্যে নবাবের শত্রুতার সূত্র আবিষ্কার করেন। দুর্ভাগ্যবশত চিঠিটি ইংরেজদের হাতে পড়ে যায় এবং ইংরেজরা এই চিঠির মধ্যেই নবাব-ফরাসী গোপন আঁতাতের সন্ধান পায়। প্রহসনের পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও হত্যার দায়মুক্তির জন্য অসংখ্য মিথ্যা ও বিকৃত ইতিহাস রচনার মাধ্যমে দেশবাসীকে ইংরেজরা বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। পলাশীর যুদ্ধের ১৩৯ বছর পর (১৮৯৬-৯৭ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশিত বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় অনন্য ইতিহাস রচনায় কেবল পলাশীর যুদ্ধের সত্যই উন্মোচন করেননি; নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে উপনিবেশিক ইংরেজের বিরুদ্ধে আত্মদানকারী প্রথম বীর রূপেও গণ্য করেছেন। পলাশীর যুদ্ধের ১৩৯ বছর পর দেশবাসী প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় রচিত সিরাজউদ্দৌলা গ্রন্থে সর্বপ্রথম পলাশীর যুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে পূর্বেকার লোভ ও স্বার্থপর  লেখকদের বিকৃত ইতিহাস দ্রুত আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়  প্রমাণ করেছেন ইংরেজ বেনিয়া ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যায়ভাবে  দেশ দখল, অনাচার, শোষণ, লুণ্ঠন করেছিল । অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং অপর ঐতিহাসিক নিখিল নাথ রায় প্রকৃত ইতিহাস রচনায় পলাশীর যুদ্ধের কলঙ্কের দায় অপরাধী ইংরেজদের ওপর চাপাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নবীনচন্দ্র সেন পলাশীর যুদ্ধ কাব্যে সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অযথা কলঙ্ক লেপনের জন্য ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তীব্র  ভাষায় নবীনচন্দ্র সেনকে ভর্ৎসনা করেছেন। খ্যাতিমান ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থেও পলাশীর যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশ পেয়েছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা দ্বিধাহীন চিত্তে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব রক্ষা করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন। ‘ইংরেজ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে তাকে প্রথম ভারতীয় বীর রূপে গণ্য করতে হবে।’ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তার গ্রন্থে উপরোক্ত কথাটি জোরের সঙ্গেই বলেছেন।

ব্যক্তিগত অদূরদর্শিতা ও অযোগ্যতার জন্য সিরাজ ব্যর্থ হননি। ব্যর্থতার কারণ নিহিত ছিলো তার লোকজনদের চারিত্রিক ত্রুটি, দেশপ্রেমের অভাব, ক্ষমতার মোহ। নবাবের নিজস্ব লোকজনদের বৈরিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা, প্রভাভশালী বাঙালিদের স্বার্থপরতা, মোগল সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে বাংলার দুর্বলতর অবিচ্ছেদ্যতা, বাংলার অবিকশিত নৌবাহিনী, বিশ্বব্যাপী দেশ জয়ের ইউরোপীয় উন্মাদনা এবং ঔপনিবেশিক আধিপত্য বিস্তারের ফলাফল হিসেবেই সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটেছিল।

এস ডি সুব্রত : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
আজকালের খবর/আরইউ