আন্তর্জাতিক কিংবা আঞ্চলিক পর্যায়ের যেকোনো শীর্ষ সম্মেলন সাধারণত বিশেষ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়। সেরকম একটি নিয়ম হচ্ছে শেষ দিনে সবরকম আলোচনার শেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সম্মেলনের ঘোষণা প্রচার করা। এর মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটে নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সমবেত সাংবাদিক সহ অন্যদের কর্মব্যস্ততার। বাংলাদেশ এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটারের একটি ছোট্ট দেশ। কিন্তু ভূরাজনৈতিক কারণে এর গুরুত্ব ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ কারণে শুধু ভারত নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে চীন-রাশিয়া সবাই বাংলাদেশকে মর্যাদা দেয়। বিষয়টি দলমত নির্বিশেষে বিবেচনায় নিয়ে দেশের স্বার্থে সবার একযোগে কাজ করা উচিত। দলীয় বিশ্বাসে ভিন্নতা থাকবে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আত্মঘাতী। ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসে গেছেন। আরো অনেকে এসেছেন এবং আসবেন। বাংলাদেশের এই নতুন ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এ দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে হবে। না হলে এটা হিতে বিপরীত হয়ে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদিও ভারতে জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন; সম্মেলনের আগের দিন যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটিকে উভয় দেশের শীর্ষ বৈঠক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের আগে এটি হয়তো দুই শীর্ষ নেতার শেষ আনুষ্ঠানিক বৈঠক। শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব নতুন নয়। এরপরও এ বৈঠকে সেই সম্পর্ক আরো উষ্ণতা পেয়েছে বলে আমি মনে করি। জি২০ সম্মেলন তাদের সেই নতুন সুযোগ করে দিয়েছে। তিনটি এমওইউ সই হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ মিনিট রুদ্ধদ্বার আলাপ হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
এ ছাড়া অর্থনীতি, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক সব দিক দিয়েই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে, সে ক্ষেত্রেও ভারত গুরুত্বপূর্ণ। বহুমাত্রিক সম্পর্কের বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। শুধু যে আমাদের কাছে ভারত গুরুত্বপূর্ণ এমনটি নয়; ভারতের কাছেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ। ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি এর মূল নিয়ামক। গত জুনের শেষে আন্তর্জাতিক সংহতির ওপর অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন প্যারিস অ্যাজেন্ডা ফর পিপল অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটকে উপসংহার হিসেবে গ্রহণ করেছে। দিন কয়েক আগে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম আফ্রিকা জলবায়ু সম্মেলনে নাইরোবি ঘোষণাকে পরিগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার নেতারাও প্যারিস জলবায়ু চুক্তির গতিশীলতার প্রতিধ্বনি করেছেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ ও ১৯ তারিখের এসডিজি সম্মেলন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের সামিট ফর দ্য ফিউচার এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ ফিন্যান্সিং ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স সামনে রেখে নয়াদিল্লিতে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বরের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন এই অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। প্যারিস সম্মেলন যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা হলো- এমন একটি বিশ্ব গড়ব, যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না; পৃথিবীর এই গ্রহের স্বাস্থ্য হবে সুরক্ষিত এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাতের প্রভাবসংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো নাজুক হয়ে পড়া দেশগুলো আরো ভালোভাবে মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য অবশ্যই সরকারি উন্নয়ন সহায়তা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক উৎসকে কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া পৃথিবীর সবাইকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পারস্পরিক বিভক্তি রোধে আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর দক্ষ, অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক, অধিকতর ন্যায়সংগত এবং আজকের বিশ্বের জন্য অধিকতর উপযুক্ত হিসেবে রূপান্তরিত করতে হবে।
দিল্লির এই জি-২০ সম্মেলনের কাছে সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি। কারণ, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটকে স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর নাইরোবিতে বসা সম্মেলনে আফ্রিকার অংশীদারদের পাশে জি-২০ দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে স্থিরপ্রতিজ্ঞ যে জি-২০ সংগঠনটির রূপান্তরগত যে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোসহ সব অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপকারে আসবে। এবারের জি-২০ সম্মেলনের যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো-দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার এবং ধরিত্রীকে রক্ষা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব কোনো একক দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। বিভিন্ন প্রয়োজনের মুখোমুখি হয়ে জি-২০ দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনমুখী পথ অনুসরণ করতে পারে এবং এর মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলো পূরণ করা যেতে পারে। এটি মেনে নিতে হবে যে নাজুক অর্থনীতিগুলোকে সহায়তা করতে এবং তাদের জনগণকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে অধিকতর আর্থিক সম্পদ দরকার। গ্রিনহাউস গ্যাসের শূন্য মাত্রার নির্গমন অর্জন থেকে শুরু করে আর্থিক বৈষম্য কমানো পর্যন্ত আজকের তাবৎ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাফল্য উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের পুঁজি প্রবাহ বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করবে। গত জুনে প্যারিসে এবং চলতি মাসে নাইরোবিতে এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক আর্থিক উদ্দীপনা প্রয়োজন। সৌভাগ্যের বিষয়, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য, বিশেষ করে আফ্রিকার জন্য ইতোমধ্যে এক লাখ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হয়েছে। এই বছর জলবায়ু মোকাবিলায় এক লাখ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটিও পূরণ হবে বলে জোরালো আশা রয়েছে।
এই তহবিল গঠনের লক্ষ্যপূরণের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। তবে এই তহবিল ব্যবহারে আরো দক্ষ হতে হবে। কারণ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে দেওয়া ঋণের প্রতিটি ডলারের বিপরীতে প্রাইভেট খাতের অন্তত এক ডলার পরিপূরক হিসেবে নিয়োজিত হওয়া উচিত। সেটি হলে আশা করা যায়, উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে প্রতিবছর কমপক্ষে অতিরিক্ত আরো এক লাখ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরে এমডিবিগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে দুই লাখ কোটি ডলারে বৃদ্ধি পাবে। এমডিবিতে এখন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের আরো মূলধনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে অল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য ঋণ পুনর্গঠন সমন্বয় প্রক্রিয়ার সময়ানুবর্তিতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক পূর্বাভাসযোগ্যতা উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনের সময় ঋণ স্থগিতকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে, যাতে ঋণসংকটে থাকা দেশগুলোর জন্য আর্থিক সুযোগ বাড়ানো সম্ভব হয়। এখানে এটা স্পষ্ট যে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের মিশনে জলবায়ু সংকটের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তা এসব সংস্থার প্রকল্পগুলোকে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম করবে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করবে। এর বাইরে বাস্তুসংস্থান পরিসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন ও বনায়ন খাতে নতুন একটি আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি প্রশমিত বা হ্রাস করাও প্রয়োজন হবে। প্রতিশ্রুতিগুলো যাতে সুনির্দিষ্ট সাফল্যে রূপান্তরিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, দেশ এবং নাগরিক সমাজ নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জি-২০ সম্মেলনকে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক লক্ষ্য অর্জনে প্যারিস অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রস্তুত এবং আন্তরিক।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে চীনের সীমানা নিয়ে বিরোধ আছে। ভারত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেই তাদের বিরোধগুলোর মীমাংসা করে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চায়। ইরান থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মরিশাস, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনামসহ ভারত মহাসাগরবর্তী সব কটি দেশই শান্তির পথে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাতিরে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক সমস্যাগুলো সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে চায়। চীনের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন দিয়ে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে নিমন্ত্রণ করা হয় ১৯ মে জেদ্দায় আয়োজিত আরব লিগ সম্মেলনে। তিনি বক্তব্যে একটি পরস্পর নির্ভরশীল, উন্নয়নশীল ও বিদেশি হস্তক্ষেপমুক্ত আরব লিগ গঠনের আশা প্রকাশ করেন, যেখানে আর যুদ্ধ ও ধ্বংস থাকবে না। যদিও বেশ কিছু দেশ এই সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাশারের কারণে যোগ দেয়নি। সব আঞ্চলিক জোট শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিচ্ছে যুদ্ধের ওপরে। যুদ্ধরত দেশগুলো এখন শান্তির পথে হাঁটতে চাইছে। পূর্বের দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পশ্চিমের বাজারের ওপর নির্ভরশীল, আর পশ্চিমের সমাজ পূর্বের উৎপাদনের ওপর। পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে, পৃথিবীতে তা এমনিতেই ন্যায্য না। এখানে সম্পদের অসম বণ্টন থেকে শুরু করে, দারিদ্র্য, দাসত্ব, বাল্যবিবাহ, নারী, শিশু ও মাদক পাচারের মতো নানা সমস্যা এখনই আছে। ‘যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান’ নীতি ছাড়াও নানা উপায় নিশ্চয় আছে মানবজাতির এই সর্বাত্মক ধ্বংস রোধ করতে। ন্যাটো জোট যেভাবে রাশিয়া ও চীনকে বিশ্বশান্তির পথে হুমকি হিসেবে দেখছে, তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় হয়তো এই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হয়ে যাবে যদি আর কোনো পথ খোলা না হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধে যখন রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে, এমন সময়ে ইউক্রেন ব্যাপক সামরিক সাহায্য পেল। এদিকে চীনের বিরুদ্ধেও একই সময়ে শুরু হলো বাণিজ্যযুদ্ধ। শত্রুর শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার এখনই মোক্ষম সময়। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া ও চীন এক হয়ে কাজ করবে। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র দুই হাজার ৫০০ সামরিক বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তাদের যুদ্ধাস্ত্রের মহড়া করেছে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে। ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়াও ভারী ভারী সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় চীনের বাড়ির সামনেই সংঘর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে। তাইওয়ান সমস্যা বাষ্পায়িত হয়ে চলছে, এখন কেবলই চীনের ধৈর্য পরীক্ষার পালা। চীন যদি রাশিয়ার স্বার্থে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ায় তাহলে রাশিয়া কি তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে? যে পারমাণবিক বোমা হিরোশিমাকে ক্ষতবিক্ষত করে বিশ্বকে হতবাক করেছে, বিশ্বে এমন হাজার হাজার বোমা আছে বেশ কয়েকটা দেশের কাছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। বিশ্বের মানুষ ক্ষমতা-অন্ধ এই রাষ্ট্রনায়কদের স্বার্থে জিম্মি। বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি আশঙ্কা করেন, বিশ্ব হয়তো এবার আর পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি থেকে রেহাই পাবে না। বিজ্ঞানের এই অসাধারণ উদ্ভাবনের যুগে যুদ্ধ কাম্য নয়। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যে ধ্বংস যন্ত্র তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে পুরো মানবজাতিকে ভালো খাবার ও জীবন দেওয়া সম্ভব। অথচ মানুষের সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে মানুষের সম্পদ ধ্বংসের জন্য। যুদ্ধে যে পক্ষই বিজয়ী হোক না কেন, কোনো পক্ষই ক্ষতি এড়াতে পারবে না। এক পারমাণবিক বোমায় হিরোশিমা তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এমন অনেক বোমা এই পৃথিবীকে গুঁড়া করে দিতে যথেষ্ট। আমরা যেন এমন ভয়াবহ পরিণতির পথে না হাঁটি এটাই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।
রায়হান আহমেদ তপাদার : গবেষক ও কলাম লেখক।
আজকালের খবর/আরইউ