প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:০৬ PM
জার্মানির কোলন শহরের দূর্গাপুজোর জন্ম দেখলাম। তার শৈশবকে সযত্নে লালন পালন করলাম। আর আজ ৩২ বছরে তার খ্যাতির ঝলমলে আলো সুদূর প্রসারিত। পঞ্জিকা মতে, কাল তিথি মিলিয়ে ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় মাকে আবাহন করে দুর্গোৎসব আরম্ভ। পুরোহিত মশাই সকাল সন্ধ্যে অঞ্জলির মন্ত্র পড়েন। অনুরোধের অপেক্ষা মাত্র। অঞ্জলি দেওয়ার অভিলাষ থেকে কেউ বঞ্চিত হন না।
রোজ সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা, পাঠ, নাটক, নাচ গানে পূজামন্ডপে আনন্দের মহোৎসব। সব মিলিয়ে অনবদ্য পাঁচটা দিন। বিদেশে জন্মরত ভারতীয় ছেলেমেয়েদের দেশের সংস্কৃতির প্রতি যে এত অনুরাগ তার পরিচয় পাই এই অনুষ্ঠান গুলিতে। তরুণ ও প্রবীণ একসাথে মহা আনন্দে হাতে হাত মিলিয়ে মাকে খুশী করার অদম্য চেষ্টা কোলনের পুজোকে অনন্য করেছে।
দেশি ভাইদের শাড়ি পরিহিতা স্মিতা বিদেশিনী বৌদিরা ও আগ্রহে এগিয়ে আসেন পুজোর বিভিন্ন কাজে এবং দেশি বোনেদের বিদেশি জামাইরাও হাতা গুটিয়ে কাজে লেগে যান। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমব্যুর্গ এবং আশেপাশের বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্তরা নিজেদের গাড়িতে অথবা দল বেঁধে বাস ভাড়া করে, হোটেলে থেকে পুজোয় অংশ নেন।
বিভিন্ন পোশাকে, সুন্দর শাড়িতে -গহনায় বিরাট একটা হল- এর মধ্যে এভাবে দেশের মানুষের সম্মুখীন হওয়া - বিদেশে অবশ্যই বিরল এক অভিজ্ঞতা। আমরা এন আর আইরা দেশে বেড়াতে গেলেও কিছু শাড়ি, গহনা কিনে থাকি। সেটার প্রদশর্নীও এই ফাঁকে হয়ে যায়। মাকে দর্শন, নিজেকেও প্রদর্শন। দেশি ফ্যাশন আর বিদেশি প্যাশনকে মিলিয়ে দিচ্ছি এক মেরুতে। ঢাকাই থেকে বোমকাই, পাঞ্জাবি থেকে পালাজ্জো সবাই পাচ্ছে নিজ নিজ স্থান ।
ফিরে আসি পুজোর কথায়। প্রতিমা সজ্জা, পুজো, প্রসাদ বিতরণ,ঢাকের লাইভ বাজনা, দুপুরে রাত্তিরে পাতপেড়ে খাওয়া, বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার - কোলনের দূর্গাপুজোকে অনন্যা করেছে। এই পাঁচদিন খাওয়া দাওয়ার দ্বার সবার জন্যই অবারিত। চাঁদাটা কিন্তু ভলান্টারি। খাওয়ার কথাই যখন উঠল, সেই প্রসঙ্গে ছোট্ট করে বলে রাখি, অষ্টমী নবমীতে দর্শকের সমাবেধ হয় প্রায় হাজার ছুঁই ছুঁই। আর খাওয়া? সে তো এলাহি ব্যাপার। লুচি,ছোলার ডাল, বেগুন ভাজা, আলুরদম, পাঁপড়, ঘুগনি.. এতো গেল দুপুরের খাওয়ার কথা।
সন্ধ্যার মেনুটাও বলে রাখি। সাদা ভাত, পোলাও, ডাল মাখনি, মটর পনির, ছানার ডালনা, কপির ডালনা, কুমড়োর ছক্কা, মুরগী মাখখন মাশালা।কী নেই? শেষ পাতে নানারকম মিষ্টির আয়োজন। এই ধরুন রসগোল্লা, পায়েস, কাঁচাগোল্লা, রাবড়ী, মালাই আম, হালুয়া, গজা ইত্যাদি। কী জিভে জল আসছে তো?
দূর্গা মা কে কোলনে আমরা এত কাছে পাই যে, পুজোর কটা দিন সবার মন আনন্দে ভরে থাকে। সকাল থেকে পুজোর যোগাড় চলে। ফলমূল কাটা, নৈবেদ্য সাজানো, ভোগ রান্না, মালাগাঁথা। সবাই কাজ করে গভীর আনন্দ নিয়েই। ছেলের দল সাজাচ্ছে টেবিল চেয়ার, ঝাঁট পড়েছে মেঝেয়। বাতাসে উড়ছে মশলা চায়ের সুঘ্রাণ। ওদিকে রান্নাঘরে ব্যস্ত আরেক দল। কারণ তাগিদটা শুধু আন্তরিক।
গলা উঁচু করে বলতে পারি, আক্ষরিক অর্থেই আন্তরিক। আসলে সক্কলে মিলে যে পরিবার টা একটাই। আর সে পরিবারটার নাম হল বাঙালিকে কেন্দ্রে রেখে, আন্তর্জাতিক পরিবার। আসলে, বছরে একবার পাঁচটা নির্ভার দিন জুড়ে ওই রুপসী তন্বী র জন্য আবেগ, অস্থিরতা আর ভালোবাসা এত বেশি কেন জানেন? এই অনুভূতি শুধু দূর্গাপুজেতে সম্ভব। এখন তো সেই প্রেম আর ও জমাট, আর ও রঙিন। তাই আমাদের অনুভূতি আর প্রগাঢ়, আরও জোরদার।
আজকালের খবর/আরই