মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মে’র পর বাংলাদেশসহ ১৫ দেশের শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। ভিসা পেয়েও যারা মালয়েশিয়া আসতে পারছেন না, তাদের দ্রুত নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শুক্রবার রাতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন মো. শামীম আহসান। রাতভর বিমান বন্দরে তিনি অবস্থান করেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, কাউন্সেলর লেবার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, প্রথম সচিব প্রেস সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ ও ওয়েলফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট শিহাব হোসাইন।
সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ জানান, মালয়েশিয়া রাত ১২টার পর বাংলাদেশ থেকে আসা কর্মীরা নির্বিঘ্নে ইমিগ্রেশন পার করছেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। ৩১ মে বাংলাদেশ ত্যাগ করে যারা মালয়েশিয়ায় আসছেন ১২টার পরেও তারা ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন।
এখন পর্যন্ত যারা দেশটিতে পোঁছেছেন তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন। এই মুহূর্তে বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় এয়ারপোর্টের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখছে কর্তৃপক্ষ।
হাইকমিশনার বলেন, ভিসা পাওয়ার পরও যেসব বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় আসতে পারছেন না, তাদের যেন দ্রুত নিয়ে আসা যায় তার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ৫ লাখ ২৭ হাজারের বেশি ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন করেছে হাইকমিশন। এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় এসেছে। আমরা নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তারা যেন প্রতিশ্রুত কাজে যোগদান করতে পারেন। বিভিন্ন জটিলতায় হয়তো তারা আসতে পারছেন না। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা চলমান।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় এসেছেন।
শনিবার (১ জুন) থেকে বন্ধ হয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। প্রায় ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছেন।
বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। গত জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি পুনরায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী যায় মালয়েশিয়ায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার পিএইচডি গবেষক মো. আরিজ মিথুন বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যা হচ্ছে, তা দুর্বৃত্তপনা। এখানে সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না, ভিসার মেয়াদ থাকার পরও ওই দেশে ঢুকতে পারবে না।
তিনি বলেন, দুই দেশের এখানে দায় রয়েছে। এতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের জয় হয়েছে, হেরেছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। অথচ এই প্রবাসী শ্রমিকদের টাকায় দেশ চলে। আমরা চাই সরকার এ ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে প্রকৃত সত্য খতিয়ে দেখুক। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানান তিনি।
আজকালের খবর/বিএস