দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে কেপিআইভুক্ত করা হয়। যেখানে থাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। কাজের সুবাদে প্রবেশের এখতিয়ার শুধু এর মানুষদের। এমন একটি এলাকা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএফডিসি)। যা চলচ্চিত্রের শুটিং ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শিল্পী, নির্মাতা ও কুশলীদের জন্য থাকে নিরাপত্তা বেষ্টনী।
তবে গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) চিত্রটা ছিল একেবারে ভিন্ন। নিরাপত্তাকে ‘থোড়াই কেয়ার’ করে সেখানে আয়োজন করা হয় প্রায় চার হাজার মানুষের পিকনিক ও মিলনমেলা। সারাটা দিন তারা বিএফডিসির অফিসের পাশে যে যার মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাদ যায়নি জহির রায়হান কালার ল্যাব, শুটিং ফ্লোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোও।
তবে মজার বিষয় হলো, এত কিছু দিন-দুপুরে এমনকি রাতে ঘটলেও এফডিসি প্রশাসন জানে না, কীভাবে হলো? প্রশাসন অবাক, বিস্ময়ে প্রশ্ন করল, ‘আরে এরা কারা, কোথা থেকে এলো এরা!’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে - এটির আয়োজন করে এসএসসি ’৯৩ সালের ব্যাচ। তবে ফ্লোর ও মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয়েছে রিয়্যালিটি শোয়ের নামে। ছিল খেলাধুলা, আড্ডা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। এফডিসির মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি মোড়েই নানা ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন।
চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আগত অতিথিরা। গাছ ও ঘাস মাড়িয়ে বসে আছেন কোনো কোনো দল। বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ফোনে পাওয়া যায়নি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনকে। কথা হয় কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং ফ্লোর ও সেট ইনচার্জ হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে।
ঘটনা শুনে অবাক হলেন তিনি। তবে নানাভাবে এটি হালকাভাবে দেখার চেষ্টাও করলেন। তার ভাষ্য, ‘শুক্রবার আমার ডে অফ ছিল। আজও তাই। এ কারণে শুক্রবার কী ঘটেছে তা আমি জানি না। এটা ঠিক এখন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পিকনিকের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এত মানুষ সেখানে গিয়েছিল নাকি?’
কেপিআই এলাকায় পিকনিক সম্ভব কি না এবং ফ্লোর ইনচার্জ হলেও বিষয়টি তার গোচরে নেই কেন জানতে চাইলে সদ্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ফ্লোর ইনচার্জ এটা ঠিক আছে। তবে ভাড়ার বিষয়টি দেখেন অন্য এক কর্মকর্তা।’
প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘কেপিআই হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে পিকনিক বা মিলনমেলা হয় কীভাবে? এখানে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্ট ও নথি আছে। এখানে তো জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।’
বিষয়টি এফডিসির নিয়মে হয়েছে কিনা তা কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহিন সুমন।
দেখা যায়, ‘বন্ধুদের মিলনমেলা’ শিরোনামে এ আয়োজন করে ‘স্বপ্নের ৯৩’ নামের সংগঠন।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আয়োজন শুরু হয়। যা চলে রাত অবধি। বিকালের পর রাতেও ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। যেখানে অংশ নেয় শোবিজের কিছু শিল্পী। সে আয়োজনে ছিল নাচ ও গান।
জানা যায়, এফডিসির দুটি ফ্লোর ও মিলনায়তন নেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু খোলা প্রাঙ্গণ। ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার দায়িত্বে আছেন এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (বিক্রয়) ও ল্যাবরেটরি প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘একটি রিয়্যালিটি শোয়ের আয়োজন হবে বলে ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন একটি বিজ্ঞপনী সংস্থার কর্মকর্তা। বিষয়টি সহযোগিতা করেছেন রফ নামের একজন প্রডাকশন ম্যানেজার। নিয়ম মেনে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর বাইরে আমি তেমন কিছু জানি না। এখানে তো পিকনিক হওয়ার কথা নয়।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি স্থানে করা এ আয়োজনটির নেতৃত্ব দেন পরিচালক সমিতির সদস্য বিপ্লব শরীফ। অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আমি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি মাত্র এর বেশি কিছু জানি না।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই তিনি রান্নার আয়োজন ও এফডিসিতে সামিনা টাঙিয়ে খাবার স্থান তৈরি করেন। রাত অবধি সাজানো হয় পুরো এফডিসি। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিরাপদ এ স্থানে চলে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের মহাযজ্ঞ।-
সূত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন
আজকালের খবর/আতে