
শিল্প কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে মূল্য পরিশোধ বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নদী ও জলাভূমি সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আজ শনিবার গাজীপুর শহরের পিটিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘নদী ও জলাভূমি সিম্পোজিয়াম ২০২৫’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “শিল্প কারখানাগুলো ভূগর্ভস্থ পানি অনিয়ন্ত্রিতভাবে উত্তোলন করে পরিবেশের উপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে। এ কারণে সরকার এ ব্যবহারের জন্য মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে জলাধার ও নদী দূষণ রোধ এবং শিল্পবর্জ্য পরিশোধন ও পুনঃব্যবহারে বাধ্য করার জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।”
উপদেষ্টা আরও জানান, “ঢাকার চারটি প্রধান নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমাদের মেয়াদে তুরাগ নদীর পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন এক তথ্যবহুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “গাজীপুর জেলার উপর দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বংশীসহ প্রায় এক ডজন নদী প্রবাহিত হলেও বর্তমানে সেগুলো দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে। এলাকাটি ছিল স্বাদু পানির বিশাল ভাণ্ডার, যা এখন দূষিত হয়ে পড়েছে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, গাজীপুর জেলার অনেক এলাকায় পানিতে দ্রবণীয় অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। পানির গুণগত মান ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।
সিম্পোজিয়ামে নদী ও জলাভূমি সংরক্ষণে ১৬ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয় এবং তা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ডুয়েটের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হাসান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, বহুমুখী পাট পণ্য উৎপাদন রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. রাশেদুল করিম মুন্না।
সিম্পোজিয়ামে পরিবেশবাদী, প্রশাসনিক ও শিক্ষাবিদদের অংশগ্রহণে নদী রক্ষায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান জানানো হয়। ভূগর্ভস্থ পানির মূল্যায়ন ও ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি, নদী পুনরুদ্ধার এবং পানি পুনর্ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা এসব সিদ্ধান্ত পরিবেশ সংরক্ষণের পথে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে।
আজকালের খবর/ওআর