
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সময় যমুনা টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক রকি হোসেনসহ একাধিক সাংবাদিক হামলার শিকার হন। হামলায় গুরুতর আহত রকি হোসেন বর্তমানে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় দেশের সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক মহল ও প্রশাসনে চরম প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুর প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া থানায় মামলা, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দুঃখ প্রকাশ, সমগ্র বিষয়টি গাজীপুরসহ সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে কাপাসিয়ার চাঁদপুর ইউনিয়নের চেরাগআলী মোড়ে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যে হঠাৎ সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এই সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের মধ্যে একটি দল ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে লাঠি ও রড দিয়ে আঘাত করে। এতে যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন রকি হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার (১৮ মে) বেলা ১২টায় গাজীপুর প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাব সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ শামসুল হক রিপন।
এতে বক্তব্য রাখেন- সাবেক সভাপতি নাসির আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি রেজাউল বারী বাবুল, মাজহারুল ইসলাম মাসুম, আমিনুল ইসলাম, সাংবাদিক মুজিবুর রহমান, আলমগীর হোসেন, রুহুল আমীন সজীব, যুগ্ম সম্পাদক হাসমত আলী, বাংলাভূমির সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজহার, ডিবিসি নিউজের মাহমুদা সিকদার ও ডেইলি স্টারের মঞ্জুরুল করিমসহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
মানববন্ধন শেষে গাজীপুর প্রেসক্লাবের প্রতিনিধিরা কাপাসিয়া থানায় গিয়ে মামলা করেন। মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
কাপাসিয়া থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, ‘মামলা দায়েরের পরপরই আমরা অভিযান চালিয়ে দুই অভিযুক্ত- ফরিদ শেখ (৪৫) ও কর্মী আসফি রায়হান (১৯) কে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
রবিবার দুপুরে গাজীপুর প্রেস ক্লাবে আসেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলা নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। বিএনপি হাইকমান্ড এ ঘটনায় লজ্জিত ও দুঃখিত। দলীয়ভাবে তদন্ত করে যদি দলের কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকেরা জাতির বিবেক। তাদের ওপর হামলা মানে জনগণের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে দল।’
গাজীপুর প্রেস ক্লাব ছাড়াও কাপাসিয়া প্রেস ক্লাব, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছেন, ‘দেশব্যাপী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এ ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই হামলার ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে-সাংবাদিকরা কি আর নিরাপদ? যারা সত্য তুলে ধরেন, তারা কেন বারবার হামলার শিকার হবেন?
আজকালের খবর/ওআর