সোমবার ১৬ জুন ২০২৫
শিক্ষা সংস্কারে কমিশন একটি বিশেষ দিক
মো. জাহারুল ইসলাম
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ৮:২৩ পিএম
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ঠ ছয়টি কমিশন গঠন হয়েছে অনেক আগেই। নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন সংস্কার, সংবিধান সংস্কার কমিশনÑ ছয়টি কমিশনের প্রধান বিশিষ্ট নাগরিররা। শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক চাহিদার একটি হলেও এ নিয়ে কোনো কমিশন গঠনের ঘোষণা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে শিক্ষা সচেতন নাগরিকদের মধ্যে শিক্ষা কমিশন গঠনের যথেষ্ঠ উৎসুক্য রয়েছে। কারণ সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতি রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো কার্যকর ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষাকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়নের কার্যক্রমের কথা চিন্তাও করাও যায় না। এ কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন জরুরি। বর্তমানে দেশের সব স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে গড়েছে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিতির ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা দিন দিন কোচিংনির্ভর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশী বিপাকে নবম শ্রেণি। দশম শ্রেণিতে উঠে তাদের মূল্যায়ন সর্ম্পকে স্পষ্ঠ নির্দেশনা আসেনি। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অবস্থাও নড়বড়ে। 

এ পরিস্থিতিতে দ্রুত উত্তরনের পথ খুজে বের করতে হবে। পলাশির প্রান্তরে ভাগ্যবিপর্যয়ের পর বাঙালি মুসলমানদের ভাগ্যোন্নয়নের কোনো সুযোগ আসেনি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতার মাধ্যমে বাঙালির জন্য সে সুযোগ আসে। জাতিগত উন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই শিক্ষাকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য উপযোগী ও উন্নয়নমুখী করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে শিক্ষাবিদ ড. কুদরত-এ- খুদার নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশন ১৯৭৪ সালে তাদের রিপোর্ট দাখিল করে। নতুন প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয় এই রিপোর্ট। লক্ষ করার বিষয় হল, কমিশন এদেশের কোটি কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পাশ কাটিয়ে উল্টো পথে চলে। তারা শিক্ষানীতিতে ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা ও ইসলামের প্রতি অশ্রদ্ধা রেখে রিপোর্ট প্রণয়ন করে। মূলত কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন ইসলামি আদর্শবিরোধী নৈতিকতাহীন এক কালো শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করে। যার দীঘল ছায়া বাংলাদেশের পরবর্তী প্রতিটি শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রমকে অন্ধকার করে রাখে। 

কুদরত-এ-খুদা কমিশনের সুপারিশের আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস প্রণয়নের জন্য প্রফেসর শামসুল হুদাকে প্রধান করে ১৯৭৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৫১ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে গঠিত এই জাতীয় কমিটি মার্চ মাসে এর কার্যক্রম শুরু করে। লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কমিটি দশটি সাব-কমিটি ও ২৭টি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি ১৯৭৬, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে সাত খণ্ডে এর সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করে। কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে একমুখী ও সমরূপ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন এবং ১৯৮০ সালের স্কুল সেশন থেকে নবম শ্রেণি স্তরে এই পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ করে। ১৯৭৮ সালে সরকার কুদরত-এ-খুদা কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং শিক্ষার সমস্যাবলি নতুনভাবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি উপদেষ্টা কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কমিটি ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ‘অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি সুপারিশ’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় যাতে জনগণ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। রিপোর্টে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলিত কাঠামোকে তিনটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়, নিম্ন মাধ্যমিক তিন বছর, মাধ্যমিক দুই বছর এবং উচ্চ মাধ্যমিক দুই বছর। 

এরপর ১৯৮৩ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু এই কমিশনের রিপোর্ট ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করেনি এবং তা বাস্তবায়নের কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, পুনর্বিন্যাস ও উন্নয়নের উপায় পুনর্বিবেচনার লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মফিজউদ্দিন আহমদকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এটি মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিতি লাভ করে। কমিশনের দুই সদস্য বিশিষ্ট দুটি দল উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার লক্ষ্যে থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন ও জাপান সফর করেন। এই কমিশন ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে। ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারিতে জারিকৃত এক আদেশের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এম. শামসুল হককে চেয়ারম্যান করে ৫৬ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। বাস্তবধর্মী, গণমুখী ও গতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে এই কমিটিটি কাজ শুরু করে। তারা দেশের জন্য উপযোগী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং ১৯৯৭ সালে কমিশন রিপোর্ট প্রদান করে। এই রিপোর্টের আলোকেই পাশ হয় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’। 

এ সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি মহল ইসলামি শিক্ষাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু করে। দশম শ্রেণির ১০টি সাবজেক্টের সবগুলোকে অক্ষুণ্ন রেখে তারা হাত দেয় ‘ইসলামি শিক্ষা’র প্রতি। ১০০ নম্বরের ইসলামি শিক্ষাকে ৫০ নম্বরে সঙ্কুচিত করার হীন প্রয়াস শুরু করে। কিন্তু এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রতিবাদে তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এরপর ২০০১ সালে ড. এম. এ. বারীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার চিহ্নিত করা। শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তনের সুপারিশ করে ২০০২ সালে তারা রিপোর্ট প্রদান করে। এম. এ. বারী শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের উপায় বের করা ছিল যার উদ্দেশ্য। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে এই কমিশন সরকারের কাছে রিপোর্ট প্রদান করে। সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষাÑ তিন ভাগে বিভক্ত এই রিপোর্টে সর্বমোট ৮৮০টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। স্বাধীনতার পর উল্লেখিত শিক্ষা কমিশন ও কমিটি সমূহ গঠিত হলেও ২০০০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি ছাড়া কোনো শিক্ষানীতি প্রবর্তিত হয়নি। তবে সেটিও ২০০১ সালের পর আর বাস্তবায়িত হয়নি। 

বাস্তবায়িত না হওয়া ২০০০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদকে কো-চেয়ারম্যান করে ১৮ সদস্যের একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিশন গঠিত হয়। তারা ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ নামে একটি খসড়া সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করেন এবং সরকার তা অনুমোদন করে বাস্তবায়ন করে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবের প্রতিফলন দেখে এ দেশের জনগণ বিস্মিত না হলেও হতাশ হয়েছেন। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শিক নৈতিকতা থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে রেখে একটি ধর্মবিবর্জিত ‘ইহ-জাগতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডল’ তৈরির উপযোগী জনবল সৃষ্টিই হয়ে দাঁড়ায় এ শিক্ষানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। ইসলামি শিক্ষা নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র এখানে প্রকটভাবে প্রকাশ পায়। এই শিক্ষানীতি অনুসারে ২০১৩ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ের নাম পরিবর্তন করে নাম দেয়া হয় ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’। অথচ হিন্দুধর্ম শিক্ষা ও খ্রিস্টানধর্ম শিক্ষা বইতে এ রকম কোনো নাম দেওয়া হলো না। এখানে প্রচ্ছন্নভাবে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ দুটো নামের মাঝখানে ‘ও’ অব্যয় দিয়ে দুটো ভিন্ন জিনিস বোঝানো হলো। আর উভয়ের মধ্যে বিরোধ আছে মর্মে একটি কারসাজির বীজ বপন করা হলো।

২০৪১ সাল পর্যন্ত শিক্ষার একটি রূপকল্প নিয়ে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে পাশ হয় নতুন শিক্ষানীতি-২০২২। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয় এতে। নতুন এই শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তি করে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে। আর শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক না বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, সেই বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন। বরাবরের মতো দুষ্টচক্রটির চূড়ান্ত পদক্ষেপ ছিল ধর্মীয় শিক্ষাকে পাঠ্যসূচি থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়া। চক্রটি এ পর্যায়ে এসে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শতভাগ সফল হয়। বর্তমানে ২০২২ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের সিলেবাস থেকে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’কে বাদ দিয়েই তবে ক্ষান্ত হয়। একটি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে সে জাতির সমাজ-সংস্কৃতি, বোধ-বিশ্বাস এবং বাস্তবতা ও প্রয়োজনবোধের ওপর ভিত্তি করে। তবেই সে শিক্ষাব্যবস্থা জাতির জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির আদর্শ সোপান হিসেবে কাজে আসে। পক্ষান্তরে স্বজাতির প্রয়োজন ও বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় ভিন্ন কোনো জাতির অনুকরণ করা এবং জাতে ওঠার কসরত চালিয়ে যাওয়াÑ হীনমন্যতা ও মানসিক দাসত্বেরই প্রকাশ ঘটে। এ ধরনের শিক্ষা জাতির বৃহৎ কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আমরা আশ্চর্যভাবে লক্ষ করছি, দুইশ বছর পূর্বে লর্ড মেকলে সহ বিদেশি ইংরেজরা যা করতে পারেননি স্বাধীনতা পর ‘দেশীয় ইংরেজরা’ সেই কাজ করে দেখালেন সফলভাবে। কিন্তু চরম সত্য হল, জাতির বাস্তবতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আমলে নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় সংশোধনী না আনলে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন ধর্ম, জীবন ও সমাজবিমুখ একটি প্রজন্ম তৈরি হবে। যারা জাতির ধ্বংস ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট হবে।

বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। মাধ্যমিক স্তরের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে। একটি আদর্শ, ন্যায়বান ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণের জন্য বেসরকারি শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ একই কারিকুলামের অধীনে একই শিক্ষা প্রদান করেও আর্থিক দিক থেকে বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় তীব্র বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অনার্স/মাস্টার্স শেষ করে তিন স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন প্রার্থী বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আসেন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষকের বেতন মাত্র ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০২৫ সালের বর্তমান বাস্তবতায় একজন শিক্ষক কীভাবে এতো সামান্য অর্থ দিয়ে দিনাতিপাত করেন সেটা অবশ্যই ভাববার বিষয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২২ দিন আন্দোলন করেন। তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির নানা আশ্বাস দিলেও তা আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি দেখা গেছে, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রতি চাকরিপ্রত্যাশীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গত ৩১ মার্চ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শূন্য পদ ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। কিন্তু বিজ্ঞপ্তির চেয়ে তিন গুণ কম আবেদন পড়েছে। আবেদন কম পড়ায় পদ খালি থাকছে বিপুল পরিমাণ। আবেদন পড়ে মাত্র ২৩ হাজার ৭৩২টি। এর মধ্য থেকে ২২ হাজারের কিছু বেশি প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়। বেসরকারি শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি বদলি প্রথা চালু করা। সাম্প্রতিক কালে পারস্পরিক বদলি নামে একটি প্রহসন চালু করা হয়েছে। যা দ্বারা ০.১ শতাংশ শিক্ষকও উপকৃত হবেন না। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের শর্তহীন বদলি ব্যবস্থা চালু করা অতীব জরুরি। এনটিআরসি-এর পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী একজন শিক্ষক যে কোনো গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে তার মেধার ভিত্তিতে যে কোনো বিদ্যালয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির পূর্বে এই নিয়ম রহিত করা হয়। ফলে যে সব শিক্ষকরা নিজ উপজেলা থেকে শত শত মাইল দূরে শিক্ষকতা করছেন তারা সেখানে সারা জীবনের জন্য আটকে গেলেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের পাঠদানের আগ্রহ হারিয়ে যাবে। সরকারের প্রতি শিক্ষকবৃন্ধের আবেদন দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক স্তরে চলমাল বৈষম্য নিরসন করা হোক। বর্তমান সরকারের তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া শিক্ষক পরিবারের সন্তান। তিনি নিশ্চয়ই শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত। সকল উপদেষ্টামণ্ডলী বিশেষ করে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে মাধ্যমিক স্তরে দীর্ঘ দিন চলমান বৈষম্য নিরসন অর্থাৎ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। যেহেতু অন্তবর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য একটি উপযুক্ত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা জরুরি, যদিও অন্তর্বতী সরকার কমিশন গঠনের বিষয় বিবেচনায় রেখেছেন। তাই দ্রুত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করে শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করবেন।

মো. জাহারুল ইসলাম: প্রভাষক, পোড়াদিয়া ওয়াসিম উদ্দিন খান ডিগ্রি কলেজ, নরসিংদী।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর ‘সম্ভাবনা’ রয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান
ইসরায়েলের সব বিমানবন্দর ও আকাশসীমা বন্ধ
ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশপথে ইরানকে সহায়তা করছে চীন-রাশিয়া
রিজার্ভ বেড়ে ২৬.১৫ বিলিয়ন ডলার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
এক ভবঘুরের বস্তায় পাওয়া গেলো তিন লক্ষাধিক টাকা
কি এমন হয়েছিলো দীপার সঙ্গে, যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন!
ইরানের হামলায় আটকে গেল নেতানিয়াহুর ছেলের বিয়ে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার জন্য জরুরি নির্দেশনা
আখাউড়া সীমান্তে খুলে ফেলা হলো সিসি ক্যামেরা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft