শনিবার ২১ জুন ২০২৫
‘হুমকি’ পেয়েছি, আতঙ্কে আছি: ছাড়া পাওয়ার পর জগন্নাথের শিক্ষার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ১:৩০ এএম
তথ্য উপদেষ্টার দিকে পানির বোতল ছুড়ে মারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হুসাইন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা-ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কাকরাইলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে এসে বলেছেন, তিনি ‘হুমকি’ পেয়ে আতঙ্কে আছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর তাকে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় থেকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপরই হুসাইন কাকরাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে আসেন। সেখানে তখন তাদের অনশন চলছিল।

এ সময় সাংবাদিকরা হুসাইনকে তার ডিবি কার্যালয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন করেন।

জবাবে তিনি বলেন, “আমি প্রায় ২৬ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে ছিলাম, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে আজকে প্রায় (সন্ধ্যা) ৬টা পর্যন্ত।”

আপনি এখনো আতঙ্কিত?

জবাবে তিনি বলেন, “অপরিচিত নম্বর থেকে যেহেতু হুমকি পেয়েছি, সেটা একরকম, কিছুটা আতঙ্কিত আছি যে মবের মাধ্যমে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করা হবে, এরকম বলেছে।

“তারপর আমার সমস্যা করবে। বাসা থেকে বের করে দেবে–এরকমভাবে আননোন নম্বর থেকে…।”

ডিবি অফিসে নির্যাতন করা হয়েছিল কি না– এ প্রশ্নে হুসাইন বলেন, “না ওরকম শারীরিক কোনো নির্যাতন করা হয়নি।”

আটক করা হয়েছিল কোথা থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার বাসা থেকে।”

মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে হুসাইন বলেন, “মানসিক নির্যাতন বলতে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন করে অনেক রাত পর্যন্ত সজাগ রাখা হয়েছে। ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে জেল হাজতে রাখার চেষ্টা করেছে।”

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলাম না, এখন কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা আমার নেই।

“আমার মোবাইল, আমাকে ডিজিটালি উনারা চেক করেছেন এবং কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পায়নি।”

আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবি আদায়ে বুধবার পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ করে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেন।

রাতে সেখানে যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার সময় হঠাৎ একটি পানির বোতল উড়ে এসে তার মাথায় আঘাত করে।

এর কিছু আগে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে তারা অভিযোগ করছিলেন উপদেষ্টার কাছে।

মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে নায্যতা দিলেন।”

এরপর সেখান থেকে সরে এসে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “আমি শুধু দুঃখ প্রকাশ করতে চাই এই কারণে এখানে অনেকেই আমাদের সাথে জুলাইয়ে আন্দোলন করেছেন। যারা জুলাইয়ে আমাদের সাথে আন্দোলন করেছেন তারা আমার ওপর হামলা করেননি, হামলা করেছেন তারাই যারা স্যাবোটাজ করতে চেয়েছেন। প্রথম থেকেই কথা ছিল গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমার সাথে তাদের মিটিং হবে, সেই মিটিং তারা করেননি। তারা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে মিটিং করেননি। বরং তারা তাদের কাজটাকে নায্য মনে করেছেন, এখানে চলে এসেছেন।

“আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, আজকে থেকে যমুনামুখী রাজনীতি, চল চল যমুনায় চল এই মুভমেন্ট আমরা আর হতে দেব না। এক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হব, যথেষ্ঠ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এই কাজ করেছেন তারা ভুল করেছেন।”

এ ঘটনায় হুসাইনকে আটকের তথ্য জানিয়ে পুলিশ বলেছে, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় হুসাইনকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করার কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান।

পরে তথ্য উপদেষ্টার নামে এক পেইজ থেকে হুসাইন ও তার মায়ের সঙ্গে উপদেষ্টার ছবি প্রকাশ করা হয়। তবে সেই পেইজটি ভেরিফায়েড পেইজ নয়।

সে পেইজে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, “তথ্য উপদেষ্টার উপর আক্রমণকারী মোহাম্মদ হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছ। ডিবি অফিসে তার সাথে ও তার পরিবারের সাথে কথা বলেছেন তথ্য উপদেষ্টা। আন্দোলন শেষে তিনি তাকে বাসায় আসার দাওয়াত দিয়েছেন।

“এর আগে দুপুরে তিনি হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।”

সেই পোস্টে ‘দ্রষ্টব্য’ লিখে ‘এডমিন’ বলেছেন, “শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জবির সমস্যার সমাধান নিয়ে সরকারের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানানো হবে। জবির শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দ্রুতই সমাধান হোক।”

তথ্য উপদেষ্টার এই শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎ করা ও ছবি তোলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা তালেবুর রহমান বলেন, “তথ্য উপদেষ্টা মহোদয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিবি কার্যালয় এসেছিলেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ আলী বলেন, “বোতল ছুড়ে মারার ঘটনায় একজনকে আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

ডিএমপির ডিবি (দক্ষিণ) এর যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, “ছেলেটি দোষ স্বীকার করে পরবর্তীতে আর করবে না বলে একটি মুচলেকা দিয়েছেন। এরপরই তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, তথ্য উপদেষ্টা এসেছিলেন, তবে তিনি বেশিক্ষণ থাকেননি।

উপদেষ্টার কোনো অভিযোগ ছিল কি না–জানতে চাওয়া হলে পুলিশের এই কর্মকর্তা  এ বিষয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।


আজকালের খবর/ এমকে








সর্বশেষ সংবাদ
সরকারকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করছেন তথ্য আপারা: উপদেষ্টা শারমিন
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার আটক
অন্য দেশ পারলেও ইরান কেন পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে পারবে না?
তারেক রহমান দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন: খসরু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালো সরকার
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল
টেকনাফে ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আটক
টেকনাফে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে দু’টি নৌকার সংঘর্ষে নিহত ১
ফেনীতে দু’টি নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft