‘আবুল মিয়ার শালী’ আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়ে লিখেছে, ভাইজান, একসেপ্ট করেন।আমি ‘আবুল মিয়ার শালী’র রিকোয়েস্ট পেয়ে টাস্কি খেয়ে গেলাম। আইডির নাম যে এমন উদ্ভট হতে পারে, কল্পনায়ও ছিল না। সবার আগে মাথায় আসল, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত!
বউ মাঝেমঝেই আমাকে বলে, এই খবরদার! ভুলেও সুন্দী মেয়েদের সাথে মিশবে না। ওরা কিন্তু বহুত খারাপ! ওদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দূর কি বাত, আনফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও একসেপ্ট করবে না। মনে থাকবে?
আমি এদিক-ওদিক মাথা ঝাঁকিয়ে তাকে বলি, বুঝবো কেমন করে সুন্দরী মেয়েরা খারাপ? ওরা যে আসলেই খারাপ এটা প্রমাণ করতে হলেও তো ওদের সাথে মিশতে হবে, নাকি!
বউ মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, কোনো মিলামিশার দরকার নাই, পুরুষ জাত আর সুন্দরী মেয়ে জাত, কালসাপের চেয়েও ভয়ংকর। এইটা ঐতিহাসিক প্রমাণিত, তোমার প্রমাণ না করলেও চলবে।
আমি অতি নিরীহ গলায় জানতে চাই, তাহলে যে পুরুষ জাতের সাথে ঘরসংসার করছো তার কী হবে?
আমার কথা শোনে বউ এমন একটা লুক দিল, যার অর্থ দাঁড়ায়, ব্যাটা দেব লাড়া লবণ ছাড়া?
ফেসবুকের কল্যাণে অনেক মেয়ের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাই।
বউ একদিন আমাকে বলল, কিছুই বুঝলাম না, সুন্দরী মেয়েরা খালি তোমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় কেন? দুনিয়ায় আর কেউ নাই? তুমি কে? হু আর ইউ? তুমি কি সেলিব্রিটি?
আমি বললাম, না। আমি তোমার অতি নিরীহ, শান্তশিষ্ট জামাই।
বউ মুখ বাঁকা করে বলে, তুমি যদি নিরীহ হও তাহলে ছাগলও সিংহ। আমার জামাই বলে সুন্দরী মেয়েরা তোমাকে রিকুয়েস্ট দেয়?
আমি চেহারায় একটা দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললাম, কী আর করা! নিরীহ শান্তশিষ্ট ছেলে হয়ে যখন জম্মেছি, সুন্দরী মেয়েরা একআধটা ডিস্টার্ব তো দিবেই!
ফেসবুক আইডি খোলার সময় বউ পইপই করে বলে দিয়েছে, সুন্দরী মেয়েদের রিকু একসেপ্ট করবে না। প্রয়োজনে সাপ, বিচ্ছুকে বিশ্বাস করবে, ওদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে, সুন্দরী মেয়েদের ভুলেও বিশ্বাস করবে না। এদের কাছ থেকে সবসময় তের হাত দূরে থাকবে। বাঘকে যেমন ভয় পাও, সুন্দরী মেয়েদের তারচেয়েও বেশি ভয় পাবে। ঠিক আছে?
আমি নিরীহ গলায় জানতে চাইলাম, আচ্ছা বউ তের হাত না হয়ে যদি এক হাত কম, আইমিন বারো হাত দূরে থাকি, সমস্যা হবে?
বউ কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, রসিকতা করার চেষ্টা করছো? তুমি আমাকে কী মনে কর? তোমার শালী?
আমি অতি কোমল গলায় বললাম, মোটেও না। আমি সবসময় তোমাকে আমার বউয়ের মতো দেখি!
বউ মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, লেখকরা সবসময় লুচু টাইপের হয়, কিন্তু দেখায় অতি ভদ্র। অতি ভদ্রতা লুচ্চামির লক্ষণ। লেখালেখি করো ভালো কথা, সুন্দরী মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকবে। ভুলেও ওদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করবে না। মনে থাকবে? যদি কিছু কানে আসে, হাত পা কেটে হাতের জায়গায় ঠ্যাং, ঠ্যাংয়ের জায়গায় হাত লাগিয়ে মলম দিয়ে দিবো। ক্লিয়ার?
আমি কোমল গলায় বললাম, অবশ্যই ক্লিয়ার। আমি সুন্দরী মেয়েদের সারাজীবন ঘৃণা করে এসেছি। ভুলেও কোনোদিন তাদের দিকে ফিরে তাকাই নাই। সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ করি না বলেই তো তোমাকে বিয়ে করলাম!
কথা শুনে বউ আমার দিকে আগুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পারে তো তক্ষুণি খুন করে!
আমি ভয়ে পাওয়া গলায় বললাম, অবশ্য তুমিও সুন্দরী, তবে অন্যরকম! তোমার সাথে কার তুলনা? আমার কি ইচ্ছা করে জানো বউ, আমার ইচ্ছা করে তোমার মতো সুন্দরীদের রেখে বাকী সবাইকে আইডি থেকে আনফ্রেন্ড করে দেই!!
মিশনে নেমে পরলাম।
আমি ‘আবুল মিয়ার শালী’ আইডিতে ঢুকলাম। যে করেই হউক, তাকে খুঁজে বের করতে হবে।
আইডি লক করা। মেজাজ চড়ে গেল।
আপনি বিয়ে করছেন, বাচ্চাকাচ্চা নিবেন। বিয়ের পর জামাই ব্যাটারে একদিনও আপনার কাছে ঘেঁষতে দেন না, বাচ্চাকাচ্চা হবে? আছে কোনো পদ্ধতি? যারা প্রোফাইল লক করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় তাদেরকে আমার এমনই মনে হয়।
আমি ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্ট ঘেঁটে আবুল মিয়াকে খুঁজতে শুরু করলাম। আবুল মিয়ার কাছে জানতে হবে তার শালীর চেহারা ছবি কেমন। সুন্দরী হলে বাদ।
ফ্রেন্ডলিস্টে এক আবুল মিয়াকে খুঁজে পাওয়া গেল। আমি মেসেঞ্জারে তাকে নক করলাম। ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করল। সালাম দিয়ে বললাম, ভাইজানের শরীর স্বাস্থ্য ভালো?
উত্তর এল, আলহামদুলিল্লাহ!
আমি বললাম, ভাইজান, আপনার শালীর চেহারা চরিত্র কেমন?
কেন? কোন শালী? আপনি তাকে নিয়ে কী করবেন? বিয়া করবেন?
জি না, একসেপ্ট করবো। ভাই, আপনার শালী কয়টা?
একসেপ্ট করবেন মানে কী? কীসের একসেপ্ট করবেন? হু আর ইউ?
আপনার শালী আমারে রিকু দিছে।
কী দিছে?
রিকু দিছে, রিকু।
রিকু কী?
আমি বিরক্ত গলায় বললাম, আরে ভাই, ফেসবুক চালান আর রিকু চিনেন না? আপনার তো পেপসি খেয়ে আত্মহত্যা করা উচিত। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছে। একসেপ্ট করবো?
একসেপ্ট করবেন না দুইসেপ্ট করবেন তার আমি কি জানি? করলে করবেন, না করলে নাই।
সে কি কথা ভাই, আপনি দুলাভাই হয়ে শালীর খবর রাখেন না? ভেরি ব্যাড। আমরা তো বউ থেকে শালীর খবর বেশি রাখি...বউ মরলে বউ পাইবেন, শালী পাইবেন কই? আপনার বউ এই বিষয়ে কিছু জানে নাকি? তারে একটু ফোনে ধরিয়ে দেন তো, কথাটথা বলি... দূর ভাই! বউ পাইলেন কই? সে নাই।
নাই মানে কী? কারো সাথে ভেগে গেছে? আহা! ভেরি স্যাড!
কী বলছেন এইসব? ভেগে যাবে কেন? আমি তো বিয়া-ই করি নাই!
বিয়া করেন নাই অথচ শালী বানিয়ে বসে আছেন? ভাই, আপনি তো লোক সুবিধার না! আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।
আবুল মিয়া ভয় পাওয়া গলায় বললো, একটা কথার উত্তর দেন তো ভাই, আপনি আসলে কে? হু আর ইউ?
আমি অতি কোমল গলায় বললাম, আপনার কথার শুধু উত্তর কেন, প্রয়োজনে দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমও দিব। আপনি কি আসলেই বিয়া করেন নাই?
ভাই রে! আমার বউ শালী কিছুই নাই। আমি খুবই প্যারায় আছি। একজনকে পছন্দ করি। সে আমাকে পাত্তা দেয় না। সারাক্ষণ উসাইন বোল্টের মতো দৌড়ের উপর রাখে। কী করি বলেন তো? তারে না পেলে আমি বিষ খাবো ভাই।
আমার কাছে বুদ্ধি চান?
জি ভাই।
তারে পাইতে হলে উনিশ, বিশ একুশ খেয়েও লাভ নাই। এক কাজ করেন। একটা মুরগি জবাই দেন। তারপর মুরগির রক্ত দিয়ে করুণভাবে একটা চিঠি লিখেন। মেয়েরে বুঝান, আপনি আপনার শরীরের রক্ত দিয়া চিঠি লিখছেন। মেয়ে বাপ বাপ করে দৌড়ে আসবে।
বাপ বাপ বলে দৌড়ে আসবে মানে? এসব কী বলেন? আমি কি তার বাপ হইতে চাই?
সরি ভাই। ভাই ভাই বলে দৌড়ে আসবে।
আমি তো তার ভাই হতে চাই না, তারে বিয়া করতে চাই।
জামাই হতে চান?
জি ভাই।
তাহলে জামাই জামাই বলে দৌড়ে আসবে। মরদ কা বাত, হাতি কা দাঁত!
না রে ভাই। এতো সহজ না। এই মেয়ে কঠিন চিজ। তা ছাড়া এখন তো মোবাইলে মেসেজের যুগ। চিঠিতে কাজ হবে না। মেয়ে বহুত চালাক।
তাহলে মেয়েকে মোবাইলে কঠিন একটা মেসেজ দেন। তাকে লিখুন, যদি আপনি তাকে না পান, তাহলে তার ওপর রাগ করে আপনি আপনার নুনু কেটে ফেলবেন। দায়ী হবে সেই মেয়ে।
তারপর?
এতে ভয় পেয়ে মেয়ে রাজি হয়ে যেতে পারে। ভাই রে বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করেন। মনে রাখবেন হাগতে না জানলে জানলে দুনিয়া অন্ধকার। আর যদি হাগতে জানেন, পুরো দুনিয়া আপনার বাথরুম!!
এতে কাজ হবে?
অবশ্যই কাজ হবে। দাদু দাদু বলে দৌড়ে আসবে। বিফলে মূল্য ফেরত।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। গুড আইডিয়া। আচ্ছা, ভাই, যদি ভয় না পায়? যদি রাজি না হয়?
আমি বললাম, তাও তো কথা! তখন আর কী আর করবেন, নুনু কেটে ফেলবেন!
আবুল মিয়া বলল, দূর হালা! কস কি! তুই হালায় আস্ত খবিশ!!
আমি ভয় পেয়ে আবুল মিয়াকে আনফ্রেন্ড করে দিলাম। বলা যায় না, আরো গালি দিতে পারে।
কী যে দিনকাল পড়লো! আজকাল কাউকে বুদ্ধি দেওয়াও মসিবত দেখছি! ফ্রি বুদ্ধি দিলেও গালি খেতে হয়!!
ইদানীং আমার আসলে প্রচুর টেনশন হয়। চুল পড়ে পড়ে মাথা ফুটবল মাঠ হয়ে গেছে। বুঝলাম না, টেনশন করি বলে আমার চুল পড়ে গেল, নাকি চুল পড়ে গেল বলেই টেনশন হয়!
চুল পড়ে যাওয়ায় আমার বউ অনেক খুশি। লটারিতে দশ লাখ টাকা পাইলেও এতো খুশি হইতো না। পারে তো সকাল বিকাল টাকলু মাথায় চুম্মা দেয়।
কেন জানেন?
চুল পড়া টাকলু মাথার লেখককে দুনিয়ার কোন সুন্দরী পাত্তা দেয়!
আজকালের খবর/আরইউ