রবিবার ২৫ মে ২০২৫
বিনিয়োগের নামে সার্কাস হচ্ছে, নির্বাচনের আগে কেউ বিনিয়োগ করবে না : আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ১২:২০ AM
দেশে বিনিয়োগ সম্মেলনের নামে সার্কাস হচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এর আগ পর্যন্ত দেশি হোক, বিদেশি হোক- কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবে না। একই সঙ্গে বিনিয়োগের জন্য দেশের মানুষদের দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে।
তাহলেই অর্থনীতি শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও তরুণরা।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বহুমাত্রিক শিল্পায়নের দিকে যেতে হবে। তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ এবং ভাবনা থাকলেও তাদের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থনীতিকেও গণতান্ত্রিক করতে হবে।

শুক্রবার (৯ মে) চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী রোডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে তারুণ্যের সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। কর্মসূচিতে তরুণ, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদরা অংশ নেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা স্বৈরাচার সরকারকে বিতাড়িত করেছি।
দেশে কিন্তু এখনো নির্বাচিত সরকার হয়নি। বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক কোনো সরকার এখনো হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বিনিয়োগও হবে না। এটা দেশের মধ্য থেকেও হবে না, বাইরে থেকেও হবে না।

তিনি বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বিনিয়োগের অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি।
আমার কথাগুলো অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। যারা বিনিয়োগ বোঝে, তারা জানে এ সার্কাসের মাধ্যমে বিনিয়োগ হবে না। এজন্য সরকারকে স্থিতিশীল হতে হবে। তখনই বিনিয়োগকারীরা আস্থাশীল হবেন। নির্বাচিত  সরকারের অ্যাটিটিউড দেখে তারা বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহী হন। এখানে (বাংলাদেশে) বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে, আমরা ওদের (বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী) সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছে তোমাদের নির্বাচন কবে। এটাই তাদের শেষ কথা। নির্বাচন না হলে তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা বিনিয়োগ করবে না। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

খসরু বলেন, আমরা তো বলেছি যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ চাই এক নাম্বার। সব বিনিয়োগের ওপরেই আমাদের নির্ভরশীলতা। এজন্য আমরা সম্মেলনে অংশ নিয়ে তাদেরকে বলেছি, তোমাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা চাই তারা বিনিয়োগ করুক, কারণ বিএনপির দেশপ্রেমিক দল। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই তারা যেন বিনিয়োগে যেতে পারে, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। বাংলাদেশ একটি হাইলি রেগুলেটেড কান্ট্রি, এটি এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর কারণে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশন নিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের বাধা আছে, সমস্যা আছে। এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। এজন্য প্রথম ইনসেনটিভ হলো সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। অর্থাৎ ডেমোক্রেটাইজেশন অব দ্য ইকোনমি। শুধু পলিটিক্সকে ডেমোক্রেটাইজেশন করবেন, আর ইকোনমিকে করবেন না এটা হবে না। অর্থনীতিকে গণতান্ত্রায়ন করতে হবে। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে।

আমির খসরু বলেন, দেশের রিপ্রোডাক্টিভ, সেটা ব্যবসা হোক কিংবা চাকরি- এটাকে প্রোডাক্টিভ করার জন্য প্রধান কাজ হল শিক্ষা। সারা বিশ্বে শিক্ষার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে নিচের দিকে। এ জন্য বিএনপির ৩১ দফায় উল্লেখ করা হয়েছে- আগামী দিনে জিডিপির ৫ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ করা হবে। এটা একটা বড় অ্যাকাউন্ট। এটা ব্যয় করা স্কিল ডেভেলপ করতে, রি-স্কিল ডেভেলপ করতে। এই বিনিয়োগে বিএনপি কমিটেড।

বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, টেকনোলোজিক্যালি জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে। যে দেশ টেকনোলজিতে পিছিয়ে থাকবে, তাদের সামনে যাওয়ার সুযোগ নাই। সেটা অ্যাগ্রিকালচার কিংবা সেবা হোক, সেটা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল মেনুফেকচারে হোক বা সরকার পরিচালনায় হোক। স্বচ্ছতা বাড়াতে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে অবশ্যই বিশ্বের মানদণ্ড অনুযায়ী টেকনোলজি উন্নয়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করেছি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি সরকারের আসার সম্ভাবনা বিএনপির। এ দলটির নেতা তারেক রহমানের ভীষণ আমরা দেখিছি। সম্প্রতি সময়ে তার বক্তব্য আমরা দেখেছি। আমরা আশা করি সামনের সময়ে ভালো পরিবেশ তৈরি হবে, দক্ষ তারুণ্য তৈরি হবে। বাস্তবতা হলো তরুণদের মধ্যে দক্ষতার অনেক ঘাটতি রয়েছে। যারা শুধু বিসিএস নিয়ে সময় পার করেন, তাদের মধ্যে দক্ষতা নেই।

কর্নেল ইউনিভার্সিটির লেকচারার জামাল উদ্দিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, ভয়কে জয় করার সাহসিকতা থাকতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ প্রতিদিন ২ হাজার লোক চাকরি বাজারে প্রবেশ করে। দেশের জনগণের বড় অংশ তরুণ। আমাদের বেকার যুবসমাজের ডাটা থাকা প্রয়োজন। ডাটা থাকলে প্রকৃত সংখ্যাটা জানতে পারব। এতে কোন কোন এলাকায় কত বেকার আছে, সেটা জানা যাবে৷ এতে পলিসি মেকাররা সঠিকভাবে পলিসি তৈরি করতে পারবে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেন, তারুণ্য চায় কর্মসংস্থান, তারুণ্যরা বেকার থাকতে চায় না। ২০১১ সাল থেকে আমি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করি। তখন চাপ ছিল, বাকস্বাধীনতা ছিল না। নানা চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে৷ আমরা আর সেই অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। খুব সহজেই একজন মানুষ কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে পারেন। এর মধ্যে সহজেই বেকারত্ব দূর করতে পারে। যে কেউ এক পেশায় থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে পারেন। সহযোগী পেশা হিসাবে এটা নিতে পারেন। ফেসবুক, গুলল, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, নেটফ্লিক্স, টিকটকের মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অফিস বাংলাদেশ নাই। এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস বাংলাদেশ থাকলে কনটেন্ট ক্রিয়েটদের জন্য কাজ করা সহজ হত। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস বাংলাদেশ আনার ব্যবস্থা করতে বলেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরিন খান বলেন, জিয়া পরিবারের তিন প্রজন্ম থেকে থেকে তিনটা জিনিস নিতে পারেন। জিয়াউর রহমান থেকে নিতে পারেন দেশ প্রেম। খালেদা জিয়া থেকে নিতে পারেন আপসহীনতা৷ তারেক রহমান থেকে নিতে পারেন, স্বজন হারানোর বেদনাকে পুঁজি না করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঘটার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর প্রধান কারণ ছিল বেকারত্ব। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে তরুণদের বেকারত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। শেখ হাসিনা ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচার হয়ে ওঠেন। কিন্তু কেন এতদিন পরে এসে তরুণরা অনুভব করল, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার? এর কারণ হচ্ছে দেশে চাকরির বাজার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, কাজ করার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা নতুন করে নিয়ে আসা হচ্ছে। তখন তরুণরা বুঝল এবার আর শেখ হাসিনাকে মেনে নেওয়া যায় না। এখন লম্বা লম্বা সংস্কারের আলাপ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সংস্কারের আলাপ দরকার অর্থনীতির ক্ষেত্রে। তরুণরা যাতে বেকার না থাকে সেই সংস্কার করার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তরুণদের উদ্দেশ্যে আরো বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ওমর ফারুক ইউসূফ, স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতার হোসনে খান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এস এম নসরুল কদির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।

এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, পাঠাও-এর সিইও ফাহিম আহমেদ, বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, ওরাকলের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার মুনতাসির মুনীর, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডার সাঈদ আল নোমান তুর্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ডালাসের শিক্ষক শাফকাত রাব্বী। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, হারুনুর রশিদ হারুন, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদুল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিম প্রমুখ।

আজকালের খবর/ এমকে








সর্বশেষ সংবাদ
মাদক গ্রহণের অভিযোগে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেই নারী সমন্বয়ক ফের স্বপদে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলি, আহত ২
দুপুর ১টার মধ্যে ১০ জেলায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
নজরুল জয়ন্তী আজ
শুষ্ক আবহাওয়ায় বাড়বে ঢাকার গরম
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শাকিব খানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের ফিরিস্তি
সাভারে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ব্র্যাকের উদ্যোগে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা
দুমকিতে ২ নম্বর ইটে চলছে রাস্তা নির্মাণ কাজ
আমাদের সিজিপিএ বেশি দিতে সমস্যা কোথায়: প্রশ্ন ইবি ভিসির
৬ দফা দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে ভোলাবাসী, ইন্ট্রাকোর স্টেশনে তালা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft