
প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর তীব্র ভাঙনে বালাগঞ্জ-খসরুপুর-শেরপুর সড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে পুরো বালাগঞ্জের সঙ্গে শেরপুরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) উপজেলার ফাযিলপুর এলাকায় ভয়াবহ ভাঙনের ফলে রাস্তা ও সেতু নদীতে ধসে পড়ে। পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বৈদ্যুতিক সংযোগও বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছিল গত বছরের নভেম্বর মাসে। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলার প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি শুধু মাটি ও পলি ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভরাট করা হলেও তা টেকেনি। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ এবং গত ২৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুবর্ণা সরকারের সরেজমিন পরিদর্শনের পরেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বালাগঞ্জ উপজেলার পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা সহসভাপতি মাওলানা সৈয়দ আলী আসগর পরিদর্শন করে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও জিও ব্যাগ বা ব্লক ফেলা হয়নি। ফলে আজ পুরো রাস্তা ও কালভার্ট বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, ইউনিয়নের হামসাপুর রশিদ পুর সহ আরও কয়েকটি গ্রামে প্রতিবছরই বাড়িঘর, রাস্তা এবং ফসলি জমি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া এই দুর্যোগ বন্ধ হবে না। সড়কটি নির্মাণাধীন অবস্থায় এলাকাবাসীর দাবি ছিলো নদীর তীর ঘেষে যাতে না করা হয়, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। ইউএনও, সড়ক কর্তৃপক্ষ এলজিইডি, পাউবো সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করেছি। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছিল।
এদিকে, জরুরি মেরামত নিয়ে এলজিইডি এবং পাউবো’র মধ্যে ঠেলাঠেলি চলছে। এলজিইডি’র উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এই স্থানটি মেরামত করেছিল। তাদের প্রজেক্ট চালু আছে, আমরা তাদেরকে জানিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম বারী বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে একটা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা নদীর তীর সংরক্ষণে কাজ করি। পাকা সড়কটি এলজিইডির, সড়কের দেবে যাওয়া অংশের জরুরি মেরামত তারা করবেন।
পরিদর্শন করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশিদ বলেন, উপজেলা সদরের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েগেছে। জরুরি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও জানান, ভাঙনের খবর পাওয়ার পর পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং বিকল্প রাস্তা তৈরির চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার হাজারো মানুষ উপজেলা সদর, জেলা শহর ও হাটবাজারে যাতায়াত করতেন। এই ভাঙনের ফলে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এলাকার জনগণ দ্রুত ও কার্যকর স্থায়ী প্রতিরোধ প্রকল্পের জোর দাবি জানিয়েছেন।
আজকালের খবর/বিএস