
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যা মামলায় তার ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্নাসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শামসুল ইসলামের ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, মো. জাহের আলী এবং মো. আনসার আহমেদ। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক এ রায় ঘোষণা করেন।
এছাড়া মাইক্রোবাসচালক মো. বোরহান উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর মামলার আরেক আসামি মো. ইসমাইল হোসেন রানুকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেন আদালত।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট আনছারুজ্জামান জানান, মামলার বিচারকাজে ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তবে রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, তারা সবাই পলাতক রয়েছেন।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই, শবে বরাতের রাতে সিলেট নগরীর মীরবক্সটুলা এলাকার নিজ বাসা থেকে নিখোঁজ হন প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরী। পরদিন তার ছোট ছেলে মুন্না কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পাঁচ দিন পর মুন্না নিজেই আত্মগোপনে চলে যান। পরে জানা যায়, তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন।
ঘটনার পর ৪ আগস্ট শামসুল ইসলামের বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে র্যাব-৯ এর সদস্যরা মো. আনসার আহমেদ, মো. বোরহান উদ্দিন ও মো. ইসমাইল হোসেন রানুকে গ্রেপ্তার করে। এরমধ্যে আনসার ও বোরহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পরবর্তীতে ২৭ আগস্ট সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা নদী থেকে শামসুল ইসলামের মরদেহের কিছু অংশ, একটি পাঞ্জাবি ও টুপি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এগুলো শনাক্ত করা হয়।
পিপি আনছারুজ্জামান জানান, হত্যাকাণ্ডের রাতে নামাজরত অবস্থায় পেছন থেকে পাথর দিয়ে আঘাত করে মুন্না তার বাবাকে অচেতন করেন। পরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে পুরোপুরি অচেতন করে গাড়িতে তুলে সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর এলাকার সুরমা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পর সুনামগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে সুরমা নদীতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় মুন্নাকে গাড়িচালকসহ তিনজন সহযোগিতা করেন।
তিনি আরো বলেন, বিচারক মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামাণিক এই মামলার ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। একজন প্রবীণ আইনজীবীর এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের রায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি সম্পন্ন করেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ১০ মার্চ মামলাটি সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসে। যুক্তি তর্ক ও শুনানি হয় ২৪ এপ্রিল এবং আজ রায় হলো।
সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মো. আহমদ আলী জানান, মুন্না তার বাবাকে বলেছিলেন মীরবক্সটুলার বাসার সামনের অংশ তার নামে লিখে দিতে। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মুন্না প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন করতেন।
আজকালের খবর/বিএস