বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫
শিক্ষার্থীর গবেষণা চুরি করলেন কুবি শিক্ষিকা নিমনী
তুষার ইমরান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ৭:০১ PM
ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান নিমনী।

ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান নিমনী।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতি, চাকরি স্থায়ীকরণে প্রয়োজন হয় মানসম্মত গবেষণা পত্র বা আর্টিকেল। এবার নিজের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য শিক্ষার্থীর গবেষণা পত্রকে নিজের গবেষণা পত্র বলে পাবলিশ করলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান নিমনী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা ছিলেন ইসরাত জাহান নিমনী। তৎকালীন তার অধীনে রিফাত সুলতানা জাহান নামে এক শিক্ষার্থী ‘Subjugation, Marginalization and Double Colonization: A Reading of The Avarodhbasini, The Dark Holds No Terrors and The God of Small Things’ শিরোনামে ২০১৯ সালে এম.এ থিসিস করেছিলেন।

তবে সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে নিজের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ইসরাত জাহান অনুমতি না নিয়ে তার এম.এ থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে “Breaking the Silence: A Quest for Self in Shashi Deshpande’s The Dark Holds No Terrors” শিরোনামে ‘International Journal of English Literature and Social Sciences’ জার্নালে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৭ নভেম্বর জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিলে তা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ এই প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে ওই শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে রাখেন নিমনী।

১৭ ফেব্রুয়ারি International Journal of Literature and Arts জার্নাল থেকে আর্টিকেলের এ্যাবস্ট্রাক্ট সাবমিট করার জন্য মেইল করে হলে গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানতে পারেন রিফাত জাহান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটা অভিযোগ পত্র পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

ওই অভিযোগ পত্রে রিফাত সুলতানা জাহান বলেন, ইসরাত জাহান আমার অনুমতি ছাড়া এম.এ থিসিসের ৩নং অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এছাড়াও থিসিসের অন্যান্য অংশও– যেমন, ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে প্রেরিত থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকে আমার নাম প্রকাশে সম্মতি নেননি। 

এ বিষয়ে রিফাত সুলতানা জাহান বলেন, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর নিমনী আমাকে একটা কল দিয়ে আমার থিসিসের মূল ফাইলটা নিয়ে নেন। এরপর আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয় নাই। ১২ নভেম্বর ম্যামের নাম্বার থেকে একটা মিসকল দেখলে আমি কল ব্যাক করি। তখন তিনি বলেন, আমি একটা রিসার্চ করতেছি তোমাকে দ্বিতীয় গবেষক হিসেবে রাখতে চাচ্ছি। পরে যখন বললো আমি তোমার থিসিসটা পাবলিশ করতে চাচ্ছি। তখন আমি বললাম আপনি কেন আমার গবেষণা পাবলিশ করবেন। তখন তিনি বললো তুমি এসব নিয়ে কি করবে? এসব তোমার কোনো কাজে আসবে না। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানা করে দিই। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি একটা মেইল পেয়ে বিষয়টা নিশ্চিত হয়। এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমার আরো তিনটি টপিক আছে এগুলো সে পাবলিশ করছে কিনা। 

তিনি আরো বলেন, ‘এটি আমার গবেষণার ওপর আঘাত এবং একাডেমিক নৈতিকতার প্রতি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। এই ধরনের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম এবং গবেষণার অধিকারকে ক্ষুন্ন করে।’

অভিযোগের বিষয়ে ইসরাত জাহান নিনমীর সঙ্গে ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই। 

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ সত্য। অভিযুক্ত শিক্ষক ওই জার্নাল থেকে গবেষণা প্রবন্ধ সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ওই প্রবন্ধ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সুবিধা নেন নাই। জালিয়াতির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটা তদন্ত করে দেখতে হবে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, আমি বিষয়টা আপনার থেকে জেনেছি। আগামীকাল গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অভ্যন্তরীণ প্রার্থী ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকবর হোসেন ও রেঁনেসা আহমেদ সায়মাকে স্থায়ী না করে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি সুপারিশ না করা সত্ত্বেও আওয়ামী পন্থী সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈনের হস্তক্ষেপে পদার্থ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামালের সহধর্মিণী ইসরাত জাহান নিমনীকে নিয়োগ দেন প্রশাসন।  এছাড়াও নিয়োগের যে শর্ত দিয়েছিল তাও পূরন করতে পারে নাই নিমনী। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের রেজাল্টের শর্তে একটিতে সিজিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.৩৫ চাওয়া হয়েছে। তবে ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের রেজাল্টের শর্তে একটিতে সিজিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই প্রার্থীর রেজাল্ট কম রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এই প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য অভিনব কায়দায় বিজ্ঞপ্তিতে দুইটি শর্ত উল্লেখ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে তিনি তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
কাতার থেকেই রোমে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেসসচিব
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
দেশের দুই বিভাগসহ ছয় জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ
আমাদের ভেতর অদৃশ্য অপরাধ জন্ম নিচ্ছে!
পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনের উপদেষ্টার সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচিতি সভা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ভবন নির্মাণের দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন
কুয়েট শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কুবিতে প্রতীকী অনশন
প্রাইম এশিয়া শিক্ষার্থী হত্যায় বৈষম্যবিরোধী নেতা রিমান্ডে
ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃত্বে তিতলী-রিমন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
সাতক্ষীরায় সাংবাদিক টিপুর কারাদণ্ডের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft