শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫
একটি ঘোরলাগা সম্পর্ক
নাহিদ হাসান রবিন
প্রকাশ: শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ৩:৫৭ PM
হেমন্তের চাঁদনী রাত, এই পাড়াতে এখন কোনো শব্দ নেই। সারাদিনের ক্লান্তি ঝেরে রাতের খাবার শেষ করে নিতু সোফায় বসে লাল চায়ে চুমুক দিয়েছে। এমন সময় টি টেবিলে রাখা মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের আওয়াজ। আরাম করে চা পানের সময় এমন ম্যাসেজ বেশ বিরক্তিকরই বটে। অবশ্য এমন ম্যাসেজ হরহামেশাই আসে। কখনো সেগুলো দেখা হয়, কখনো দেখা হয় না। এই আরামের সময় এসব ম্যাসেজ দেখার খুব বেশি আগ্রহ হয় না নিতুর। জরুরি কোনো ম্যাসেজ নয় মোটেও, একটু আগেই নিকটজনদের সাথে কথা হয়েছে ফোনে। আরাম করে আরেকটি চুমুক দেয় চায়ের পেয়ালায়।

রুমের বড় বাল্বটি বন্ধ। হালকা আকাশি রঙের ডিমলাইট জ্বলছে। নিতু জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আকাশটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ। খোলা জানালা দিয়ে পাশের বাসা থেকে শিউলি ফুলের সুবাস এসে পুরো ঘর সুবাসিত হয়ে যায়। নিতুর মনটা ভরে যায়। হাত থেকে চায়ের পেয়ালাটা টি টেবিলে রেখে মোবাইল ফোনটা হাতে নেয়। তন্ময় ভট্টাচার্যের ম্যাসেজ। ভদ্রলোক নিতুর ফেসবুক ফ্রেন্ড। কখনো কথা বা দেখা হয়নি। এর আগে কখনো ম্যাসেজ করেছে কিনা ঠিক মনে করতে পারছে না নিতু। ম্যাসেঞ্জারে অনেকগুলো ম্যাসেজ এসে জমে আছে। সিন করা হয়নি। কি আর সিন করবে, সিন করলেই তো, প্রেমের অফার চলে আসবে। এই বয়সে জুলিয়েট হওয়ার কোনো সখ নিতুর নেই। তার মধ্যে যে প্রেম নেই, তা নয়। নিতুর প্রেম এখন তার বর আর সন্তানদের সাথে। সংসারের প্রেমে মশগুল নিতু।

বাম হাতে চায়ের পেয়ালাটা নিয়ে আরেক চুমুক দেয়। কী মনে করে তন্ময় ভট্টাচার্যের ম্যাসেজটি সিন করে; যা ভেবেছিল এমনটি নয়। রোমিওর মতো কোনো ম্যাসেজ করেনি তন্ময়। তাই নিতুও স্বাভাবিকভাবে ম্যাসেজের উত্তর দেয়।

সপ্তাহখানেক পরে এক তপ্ত দুপুরে নিতু কর্মস্থলে কাজ করছিল। তন্ময়ের ম্যাসেজ আসে। কিছুটা কৌতুহলী হয়েই ম্যাসেজটা সিন করে। ব্যস্ততার মাঝেও উত্তর লিখে দেয়- ‘আসলে কাজের চাপে ভুলে গিয়েছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করছি। ভালো থাকবেন।’

দুদিন পর তন্ময়ের কাজটি সেরে নিতু ম্যাসেজ করে তন্ময়কে। এভাবে দুজনের মাঝে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই টুকটাক কথা বিনিময় হয় ম্যাসেজে। এখনো কণ্ঠের সাথে কারো পরিচয় হয় নাই। খুব কম সময়ে যোগাযোগটা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। নিতু ভাবে, এই লোকটার সাথে প্রতিদিনই এভাবে কথা বলছে কেন? দুদিন পর তো অন্যান্য ছেলেদের মতো এই ব্যাটাও রোমিও সাজবে। এসবের সময় কোথায়? এসব বুঝেও নিতু তন্ময়কে কিছুটা প্রশ্রয় দেয় মনের অজান্তেই। নারী মন বলে বলে কথা।

নিতুর ভাবনা মিথ্যা হয় না। কয়েকদিন পর তন্ময়ের মাঝে নিতু সত্যিই রোমিওর ঘ্রাণ পায়। নারীরা বুঝি একটু আগে থেকেই আভাস পায়। এটা তাদের সহজাত বৈশিষ্ট। তন্ময়ের মাঝে রোমিওর ঘ্রাণ পেয়েও নিতু বুঝতে দেয় না। বুঝতে না দেওয়ার কারণ, তন্ময়কে রোমিও না ভাবলেও, এতদিনে একজন বন্ধু হিসেবে জায়গা দিয়েছে মনে। এটা তন্ময় অর্জন করতে পেরেছে। এর মধ্যে তন্ময় একটা ছোট্ট উপহার পাঠিয়েছে নিতুকে। উপহারটা পেয়ে নিতু বেশ খুশিই হয়েছে। আবার নতুন বছরে নিতুও দুটো উপহার পাঠিয়েছে তন্ময়কে। দুজনের মধ্যে এখন একটা ঘোরলাগা সম্পর্ক। মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তন্ময়ের কণ্ঠটাও নিতুর বেশ পছন্দ।

কয়েকদিন পর নিতু অসুস্থ হয়ে পড়ে। বেশ বড় অসুখ মনে হচ্ছে। কয়েকজন ডাক্তার দেখিয়েছে। অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েছিলেন ডাক্তার। সেগুলো করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হবে। নিতুর এই অসুস্থতার সময়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিয়েছে তন্ময়। নিতু-তন্ময় দুইজন দুই মেরুর বাসিন্দা। কোনোদিন তাদের সরাসরি দেখা হবে, এমন সুযোগ নেই বললেই চলে। তারপরেও অদেখা একজন মানুষের প্রতি তন্ময়ের এমন আন্তরিকতা নিতুকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। একদিকে অসুস্থতার চিন্তা, অন্যদিকে কোথাকার কোন তন্ময় এসে মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। আরে বাবা দেশে এই নিতু ছাড়া আর কোন নারী ছিল না। এখানেই আসতে হলো তোমাকে?

এ ধরনের সম্পর্কে মানুষের সামনে সাধারণত একটা দেয়াল থাকে। নিতু আর তন্ময়ের মাঝে দেয়াল রয়েছে দুইটি। ধুর এসব কি ভাবছি আমি। নিতু নিজেই লজ্জা পায়। কত তন্ময় কতভাবে চেষ্টা করেছে, কোনো পাত্তা পায় নাই। আর যার সাথে কোনো দেখা নাই, তার জন্য এত চিন্তার কী আছে! কিন্তু বললেই কি আর সব করা যায়, তন্ময়কে যতই ভুলতে চায় নিতু, তত বেশি মনে পড়ে। মনে পড়বেই না বা কেন, ছেলেটা সব সময় খোঁজ-খবর নেয়। এমনকি সময় মতো ওষুধ খাবার কথাটিও মনে করে দেয়। এমন একজন তন্ময়কে কি করে ভোলা যায়?

এরমধ্যে নিতুর সারা জীবনের সখের একটি কাজে তন্ময় দারুণভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে। সহযোগিতাও করেছে সাধ্যমতো। তন্ময়কে কখনো কখনো নিতুর কাছে মেয়ে পটানোর ওস্তাদ মনে হয়। আবার কখনো একজন দায়িত্ববান ছেলেও মনে হয়। মোটকথা তন্ময় নামটি নিতুর শিরা উপশিরার সাথে মিশে গেছে।

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। নিতু চাদর মুড়ি দিয়ে সোফায় বসে একটি বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে থাকে। যা বাবা, মনোযোগটা কেড়ে নেয় তন্ময় ভট্টাচার্য। আরে বাবা, তোমার জায়গায় তুমি থাকো। মাঝে মাঝে ম্যাসেজ দাও ভালো কথা। প্রয়োজনে কথাও তো হয়। তারপরেও তুমি এসে বইয়ের পাতায় আশ্রয় নিলে। এই ব্যাটাকে দূর করতে হবে। তা না হলে আমার জীবনটা উল্টাপাল্টা করে দিবে ত্যাদোর ছেলেটা।

হাতের বইটা সোফায় রেখে বামহাতে চুলের মধ্যে আঙ্গুল চালায় নিতু। মাথা কোন কাজ করছে না। একটা কড়া লিকারের চা খেলে মাথাটা ঠিক হবে হয়তো। সোফা থেকে উঠে কিচেন রুমে যায় নিতু। কেতলিতে পানি বসিয়ে মনের অজান্তেই গুন গুন করে গেয়ে ওঠে খন্দকার ফারুক আহমেদের বিখ্যাত একটি গান ‘আমি নিজের মনে নিজেই যেন গোপনে ধরা পড়েছি।’ 

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
‘পাকিস্তানে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও যেতে দেবে না ভারত’
তারেক রহমানকে নিয়ে দ্য উইকের কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’
যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম, এই সরকার তেমন করে হয়নি: ফরহাদ মজহার
তামিমদের হস্তক্ষেপে হৃদয়ের শাস্তি এক বছর পেছাল বিসিবি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জাবিতে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তিসহ ৫ দফা দাবি
ইবিতে গুচ্ছভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, উপস্থিতি ৯৬.১৮ শতাংশ
টেকনাফে গাছ পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বড় সুখবর, বাড়ছে ভাতা
তারেক রহমানকে নিয়ে দ্য উইকের কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft