প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৩:৪৯ PM

‘'যায় যদি যাক প্রাণ, তবু দেবো না দেবো না দেবো না গোলার ধান’। ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা/ সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা।’ এমন গানের রচয়িতাকে ১৯৭১ সালে দেশমুক্ত হবার পর, স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার, গবেষক। শুধু তাই নয় কবিতা, প্রবন্ধ, গান লেখা ছাড়াও, সুবক্তা, টেলিভিশনের উপস্থাপক ও আলোচক হিসেবেও তিনি বিখ্যাত ছিলেন।
১৬ ডিসেম্বরের পর তাঁকে বন্দী করা বিষয়ে, আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে হত্যা করে এবং কয়েকজনকে অমানুষিক অত্যাচার করে। তারা আবু হেনা মোস্তফা কামালকে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজশাহী বেতার কেন্দ্র থেকে তাদের পক্ষে কথিকা লিখতে ও পড়তে বাধ্য করে।’ রাজশাহী বেতারে তার সেই অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘হিং টিং ছট’। মেট্রিক এবংইন্টারমিডিয়েটে পূর্ব পাকিস্তানের সম্মিলিত মেধা তালিকায় শীর্ষ দশে থাকলেও তার বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা পরিবারের কারো মনপুত হয়নি। সকলেরই ইচ্ছে ছিলো চিকিৎসা কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়বেন। কিন্তু তিনি জিদ করেই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হবার দু'এক বছরের মধ্যেই তিনি গীতিকবি হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ফলাফল:- ঈর্ষার শিকার। অনেক কৃতি শিক্ষার্থী তো বটেই, কিছু শিক্ষকের সঙ্গেও তার দূরত্ব গড়ে ওঠে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ১৯৫৭ সালে অনার্স ফাইনাল পরিক্ষা দিতে পারেননি, দূরত্বটা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু, ১৯৫৮ সালে পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। মাস্টার্সেও তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন, সে বছর দ্বিতীয় হন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আর তৃতীয় হন মাহমুদা খতুন। ফলাফলের যোগ্যতায় শেষ দু'জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেও, তাকে সে সময় নেয়া হয়নি। বেশ ক’বছর কলেজে শিক্ষকতার পর আবু হেনা মোস্তফা কামাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তারও পরে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং বাংলা একাডেমী'র মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার গান সমৃদ্ধ করেছে চলচ্চিত্রকেও। “তুমি যে আমার কবিতা” কিংবা “মায়া ভরা এক রাজকন্যা” এখনও মানুষের হৃদয়ে অনুরণন তোলে।
পাকিস্তান টেলিভিশনের উদ্বোধনী দিনে ঢাকা কেন্দ্র থেকে, ফেরদৌসি রহমানের যে গানটি দিয়ে শুরু হয়েছিলো, সেটি তাঁরই লেখা। ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে’, ‘আমি সাগরের নীল’, ‘ভ্রমরের পাখনা যতদূরে যাক না ফুলের দেশে’, ‘নদীর মাঝি বলে’, ‘পথে যেতে দেখি আমি যারে’, ‘এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে গেলে গান’, ‘তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে’ তাঁর লিখা এমন অসংখ্য গান এখনও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেম, হৃদয়ের অন্তরঙ্গ অনুভূতি ফুটে উঠতো তাঁর লেখায়। আধুনিক শিল্পচর্চার এক পরিশিলিত রূপ ছিলো তার কবিতা এবং গানে। পেয়েছেন ‘একুশে পদক’, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক, সা'দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার সহ অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৩৬ সালের ১৩ মার্চ সিরাজগঞ্জের নাগরৌহা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আজকালের খবর/আতে