
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ সড়কের দরিয়ন থেকে জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন হারুয়া-সুটিয়া রাস্তা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কের প্যালাসাইডিং ব্লক ফাটল ধরে ধসে পড়েছে। জানা গেছে, সড়কটি প্রশস্ত করতে গিয়ে বেশকিছু অংশ প্যালাসাইডিং করতে হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণাধীন সড়কে বালুর বদলে ফেলা হচ্ছে কাঁদা মাটি। রাস্তার কোনো কোনো স্থানে ড্রেজার দিয়ে পুকুর থেকে কাঁদা বালিও ফেলা হচ্ছে। রাতের আঁধারে ইউড্রেন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের মালামাল, দেওয়া হয়নি রড। যেখানে ইউড্রেন প্রয়োজন সেখানে ইউড্রেন না দিয়ে করা হয়েছে স্বজনপ্রীতি। এছাড়া ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যেনতেনভাবে নির্মাণ হচ্ছে রাস্তাটি। এলাকাবাসী বলছে, তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের কাজ করার কারণেই সড়কের প্যালাসাইডিং ব্লক ফাটল ধরে ধসে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৪ কিলোমিটার রাস্তায় মোট ইউড্রেন ধরা হয়েছে ১৬টি। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সার্ভেয়ার নূর উদ্দিন জানান, ১৬টি ইউড্রেনের মধ্য ১০টির কাজ করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। ওয়ার্ক অর্ডারে যেভাবে আছে সেভাবেই কাজ হচ্ছে।
সরেজমিন গত সোমবার টাঙ্গনগাতি মোড় সংলগ্ন একটি পুকুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরে পাড় ঘেঁষে প্যালাসাইডিং করা বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। এখানকার প্যালাসাইডিং করা অনেকটাই ধসে গেছে।
নির্মাণাধীন সড়ক এলাকার টাঙ্গনগাতি গ্রামের, উজ্জ্বল মিয়া, মাসুদ মিয়া, মজলু ভূঁইয়া, মুনসুর ও খোকন ভূঁইয়াসহ অন্তত আরো ৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করায় রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে, প্যালাসাইডিং ব্লক খুলে যাচ্ছে। পুকুর থেকে কাঁদা বালু তুলে তার ওপর ব্লক বসানো হয়েছে। ব্লক যে এতদিন থেকেছে, সেটাই বেশি।
তারা আরো বলেন, পুরো রাস্তাতেই কাঁদা মাটি ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে কাঁদা বালু দেওয়া হয়েছে। রাতের আঁধারে রাস্তার বিভিন্ন কালভার্টের (ইউড্রেন) করা হয়েছে রড ছাড়া ও নামমাত্র সিমেন্ট দিয়ে। প্যালাসাইডিং ব্লকের মতো কালভার্টগুলোও কিছুদিন পর ভেঙে যাবে। আমাদের দাবি সরকারি বরাদ্দের সব টাকা দিয়ে মজবুত করে যেন রাস্তার কাজ করা হয়।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, খুলনা অঞ্চলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুজাহার এন্টার প্রাইজ লি. ও স্পার্ক ভিশন লি. যৌথভাবে লেস দিয়ে ৪কোটি ৩০লাখ টাকায় কাজটি পায়। আগামী ২৬মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা আল আমিন নামের একজন কাজটির তদারকি করছেন।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে থাকা যুবলীগ নেতা আল আমিন বলেন, অনিয়মের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কাজের কোনো ত্রুটি হয়নি। কিছু লোককে চাঁদা না দেওয়ার আক্রোশে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। টাঙ্গনগাতি প্যালাসাইডিং ব্লকে পলিথিন দেওয়া হয়নি, যে কারণে মাটির চাপে ফাটল ধরে কিছু অংশ ধসে পড়েছে। এ অংশটি রিপিয়ারিং করে দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছি। মোটামুটি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ হচ্ছে। টাঙ্গনগাতি এলাকায় পুকুরের পাশে নির্মিত প্যালাসাইডিং ব্লক মাটির চাপে ধসে গেছে। এটি পুনরায় সংস্কার করে দেওয়া হবে। এছাড়া আরো খোঁজ-খবর নিচ্ছি, যাতে কোনো অনিয়ম না হয়। অনিয়ম হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজকালের খবর/ওআর