
রংপুরের পীরগঞ্জে অবস্থিত রংপুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুটি হলে সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। র্যাগিংয়ের শিকার এক শিক্ষার্থী গুরতর আহত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় জড়িত ১২ জনের নামে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ, কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। র্যাগিংয়ের ঘটনা ফাঁস হওয়ায় ক্যাম্পাস তোলপাড়। কলেজে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নে করতোয়া নদী তীরে প্রতিষ্ঠিত রংপুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কলেজটির ৫ম ব্যাচের ১২ শিক্ষার্থী তাদের জুনিয়র ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এর আগেও কলেজটিতে র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পীরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে রাতে অধ্যক্ষ মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী ৫ম ব্যাচের ১২ শিক্ষার্থী যথাক্রমে আবু বক্কর সিদ্দিক, আলিফ, সিজান, রুবেল, রাকিবুল ইসলাম সিআর, নেফাউর সিআর, হাসিব সিআর, জীবন, আবু সাঈদ, সাকিব, অমিত এবং রাকিবুল ওয়াইই ৬ষ্ঠ ব্যাচের ৬০ শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় র্যাগিং (নির্যাতন) করে। এ সময় টুকুরিয়া ইউনিয়নের এক ছাত্রী গুরতর আহত হলে মুমূর্ষু অবস্থায় দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিহাব, ইমন, বিকাশসহ ৬০ শিক্ষার্থীকে ৫ম ব্যাচের উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের র্যাগিং থেকে বাঁচতে এবং তাদের শাস্তির দাবিতে তারা অধ্যক্ষ বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়।
র্যাগিংয়ে জড়িত ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল, কলেজ ক্যাম্পাসকে স্থায়ী র্যাগিং মুক্ত ঘোষণাসহ ৪ দফা দাবি করা হয়েছে। নাম প্রকাশে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কলেজ প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে দিনদিন র্যাগিং বেড়েই চলেছে।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, তদন্ত কমিটিতে যাকে প্রধান করা হয়েছে, তাকে শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করছেন। কলেজে বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তারা।
র্যাগিংয়ে আহত শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, আমার মেয়ের বান্ধবীরা আমাকে মোবাইল ফোনে জানাইলে আমি রাতেই কলেজে যাই। আহতাবস্থায় এ্যাম্বুুলেন্স ভাড়া করে চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিয়ে যাই। বর্তমানে সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে আছে। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী অধ্যাপক এসএম কবির বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান করে আজ এ চিঠি পেয়েছি যেহেতু তদন্ত চলমান এ বিষয়ে স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষীদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হবে।
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিযোগে পেয়েছি, ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজকালের খবর/ওআর