
বর্ষায় নাটোরের লালপুরের পদ্মা নদী থাকে পানিতে টইটম্বুর। শীতে জেগে ওঠা চরের উর্বর জমিতে শীতকালীন সবজিসহ নানান ফসল চাষাবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। যেদিকে চোখ যাবে, চারদিকে দেখা মিলবে ধুধু বালুচরের পরিবর্তে সবুজের সমারোহ। কেউ করেছেন আখ, গম, ভুট্টা, কেউ চাষ করেছেন ডাল জাতীয় ফসল। ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে শিম, বেগুন, লাউসহ শীতকালীন সবজির খেত। স্বল্প খরচে চরের উর্বব জমিতে ভালো ফলন আর বিক্রি ব্যবস্থা ভালো থাকায় চরের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে কৃষি।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চর এলাকার ৮টি ব্লকে মোট জমি রয়েছে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর। এরমধ্যে ৩ হাজার ৮০৮ হেক্টর জমিতে বছরের ১০ মাস ফসল আবাদ হয়ে থাকে। চরাঞ্চলের ১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে বছরে এক ফসল হয়। আর ১ হাজার ৯৮৮ হেক্টর জমিতে দুই ফসল এবং বাকি ৩৮৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে তিনটি ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় আখ। এ বছর ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে ধান, গম, ৫৫৬ হেক্টরে ডাল, ২৪৬ হেক্টরে তেল জাতীয় ফসল ও ১২৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার নওশেরা সুলতানপুর দিয়াড় সংকর, মোহরকয়া চর ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের ধুধু বালু চর ছেয়ে গেছে সবুজে সবুজে। বিস্তীর্ণ চরজুড়ে হয়েছে বিভিন্ন ফসলের চাষ। এসব ফসল চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
চরের মুনতাজ, জিল্লুর রহমান ও রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর চরে শীতকালীন সবজি, দানাদার, তেল জাতীয় ফসলের ব্যাপক চাষ হয়েছে। পদ্মার চরে উর্বর পলির কারণে ফসল চাষে তেমন সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে অল্প খরচে ফসল উৎপাদন হয়।
তারা আরো বলেন, বর্তমানে চরের জমিতে গম, মসুর, সরিষা, বাদামসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষ শুরু হয়েছে। এই শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকট নিরসন ও সুদবিহীন রবিশস্য চাষের জন্য কৃষকরা ঋণ পেলে চরাঞ্চলের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, বিভিন্ন ডাল জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে তফসিলি ব্যাংক কৃষকদের স্বল্পসুদে ঋণ দিচ্ছে এবং সেচের জন্য বিএডিসির মাধ্যমে গভীর নলকূপ বসাতে পারবেন কৃষকরা। কৃষিবিভাগ থেকে চরে পরিদর্শন করে কৃষকদেরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা যাবে বলে জানান একর্মকর্তা।
আজকালের খবর/ওআর