ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে আটকে থাকা দুঃখজনক জানিয়ে এবং অবিলম্বে ছবিটি ছাড়পত্র দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আলোচনা সভায় বক্তারা।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ফ্যাসিজমমুক্ত বাংলাদেশে ‘স্বাধীন শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং জুলাই ২০২৪ গণবিস্ফোরণ- গণঅভ্যূত্থানে ছাত্র-জনতার অকৃত্রিম বীরত্ব ও ত্যাগের ইতিবৃত্তের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেডপোস্ট ক্রিয়েশনের ব্যানারে নির্মিয়মান ‘দ্য রিমান্ড-২’-এর পটভূমি, কাহিনী ও চিত্রনাট্য চূড়ান্ত করার নিমিত্তে অংশবিশেষ-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
অ্যাডভোকেট কে এম জাবিরের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘দ্য রিমান্ড’ চলচ্চিত্র সেন্সরে আটকে থাকা দুঃখজনক। অবিলম্বে ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সংস্কৃতি মানবসভ্যতার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। জীবনের পরতে পরতে সংস্কৃতির উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। বিশ্বায়ন, শিল্পায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে সংস্কৃতির উপাদানগুলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনিময় হয়। সঙ্গত কারণে সংস্কৃতির সঙ্গে উপসংস্কৃতির একটি যোগসাজশ থাকে। উপসংস্কৃতির ও অপসংস্কৃতির প্রভাব যখন আধিক্য বিস্তার করে, তখনই মূলত সাংস্কৃতিক সংকট তৈরি হয়, বিদেশনির্ভরতা চলে আসে অনেকের মধ্যে। বাংলাদেশে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের বড্ড প্রয়োজন। এ জাগরণের মধ্য দিয়ে সকল প্রকার অনিয়ম, অন্যায়, নৈরাজ্য চিরতরে রুখে দেওয়া সম্ভব। এ জাগরণের মধ্য দিয়ে অনাবিষ্কৃত সভ্যতার নিদর্শনগুলো জাতীয় সম্পদে পরিচিতি পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে, বিশেষ করে পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে প্রযোজক বেলায়েত বেলাল বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের দানবীয় আক্রমণ ও নির্মম হিংস্রতা এবং রক্তাক্ত রাজপথে ছাত্র-জনতার বীরত্ব, ত্যাগ, সংগ্রাম-লড়াইয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। ঘটনাবহুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরঙ্গে গণআন্দোলন, গণবিস্ফোরণ ও গণঅভ্যুত্থানে অসীম সাহসী ছাত্র-জনতার, বীর বাঙালির বীরত্বের ধারাবাহিক ইতিহাস ‘দ্য রিমান্ড’ চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে।
তিনি জানান, ছবিতে ক্ষমতা ভোগকারী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী, বিদেশে টাকা পাচারকারী, দাম্ভিক রাঘব বোয়ালদের- রিমান্ডের জবানবন্দী নাটকীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ‘দ্য রিমান্ড’ ফিল্মটি একটি ঐতিহাসিক দলিল।
বেলায়েত বেলাল জানান, ছাত্র-জনতার বীরত্ব ও ত্যাগের ইতিহাস স্মরণীয় এবং বরণীয় করে রাখতে- জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড সময়ের অন্যতম চলচিত্র `দ্য রিমান্ড‘র পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। রাষ্ট্রবিরোধী গল্প, বক্তব্য, সংলাপ, থিম কিছু থাকলে সাত দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে জানানো আইনের বিধান ছিল। কিন্তু কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি; আলোচনা বা সংলাপ করেনি। অজ্ঞাত কারণে এখনো সনদপত্র ইস্যু করেনি। অবিলম্বে সনদপত্র ইস্যু করার দাবি জানিয়ে বেলায়েত বেলাল বলেন, চরিচ্চিত্র-নাটক নিয়ে নাটকীয়তা বন্ধ করা হোক।
তিনি জানান, প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন; জবাব মেলেনি। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছাড়পত্র ইস্যু করা না হলে আইনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বৈষম্যহীন বাংলাদেশে দ্য রিমান্ড চলচ্চিত্রটি বৈষম্যের শিকার বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি।
আলোচনায় আরো অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, এনটিভির পরিচালক নুরুদ্দীন আহমেদ, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, সাংবাদিক এরফানুল হক নাহিদ, কামরুল হাসান দর্পণ, সাদিক আল আরমান, নায়ক মারুফ আকিব ও আবির পারভেজ প্রমুখ ।
আজকালের খবর/আরইউ