
নাটোর জেলায় শব্দদূষণজনিত অপরাধে ৯১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১৯২টি বিভিন্ন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন খুলে জব্দ করা হয়েছে। শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর হাসপাতাল, বিসিক, পৌরসভাসহ পাঁচটি স্থানে সর্বোচ্চ শব্দদূষণ হয়। সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালরে সামনে, যার মাত্রা ৭৭ দশমিক ১ ডেসিবল। খুব শিগগিরই স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিসসহ জেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হবে।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নাটোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শব্দ দূষণের ক্ষতিকারক দিক ও প্রতিকার বিষয়ক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপনের আওতাভুক্ত এ সেমিনারের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম।
সেমিনারে জানানো হয়, শব্দদূষণজনিত কারণে শুধুমাত্র ঢাকাতেই বছরে এক দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন ২৬০০ জন, প্রতিবছর মাতৃগর্ভ থেকে বধির হয়ে জন্ম নিচ্ছে ২৫০০ জনেরও বেশি শিশু। শব্দদূষণে ২৫ শতাংশ মানুষ রাতে ঘুমাতে পারে না এবং ৪০ শতাংশ মানুষ কানে কম শোনে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মানসিক চাপ, অনিদ্রাসহ ৩০টি রোগের ঝুঁকি রয়েছে। একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে ৪০ ডেসিবল মাত্রায় কথা বলেন আর সহ্য করতে পারেন ৭০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ।
সেমিনারে আরো জানানো হয়, শব্দদূষণজনিত অপরাধের শাস্তি প্রথমবার অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দণ্ডিত হবে। শব্দদূষণ রোধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, শব্দদূষণ মানুষকে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে যানবাহনগুলোতে যাতে হর্ণ না বাজে, সেজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোড়দার করতে। খুব শিগগিরই স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হবে। শব্দদূষণ রোধ নিয়ে কোনো সংগঠন কাজ করলে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।
আরো বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্ব প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. ফজলে এলাহী, ট্রেনিং অ্যান্ড ক্যাম্পেইন স্পেশালিস্ট গাজী মহ্বিুর রহমান, স্থানীয় কালেক্টরেট স্কুলের সহকারী শিক্ষক প্রদীপ রায়, বাসচালক মাইনুল ইসলাম, ট্রাক চালক একরাম হোসেন, শাওন প্রমুখ। এ সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।
আজকালের খবর/ওআর