মো. শফিকুল ইসলাম, ধর্মপাশা

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় ৮২টি ছোট-বড় হাওরের মধ্যে ৯টি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন। হাওরগুলো হচ্ছে- চন্দ্র সোনার থাল, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, ঘোড়াডোবা, রুইবিল, সোনামড়ল, কাইলানী, জয়ধনা ও ধানকুনিয়া। এই ৯টি হাওরের মধ্যে চন্দ্র সোনার থাল হাওরে ৩টি, সোনামড়ল হাওরে ৪টি, রুই বিল হাওরে ২টি এবং গুরমার হাওরে ৪টি সুইজগেট রয়েছে। এই ১৩টি সুইজগেটের মধ্যে ১১টি সুইজগেটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কপাটগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের ৮২টি হাওরে ৩১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। ১১টি জলকপাট অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে ৪ হাজার ৪৮৯ হেক্টর আবাদকৃত বোরো ধানের ফসলি জমি অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেলে সুইজগেটের অকেজো কপাট দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৯টি হাওরের মধ্যে ৪টিতে ১৩টি সুইজগেট রয়েছে। এই সুইজগেটগুলো থেকে হাওরের মধ্য পর্যন্ত খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন সঠিক সময়ে না হওয়ার কৃষকরা বোরো মৌসুমের প্রথমে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারে না। তাই কৃষককেরা বাধ্য হয়ে বিলম্বে বোরো ধানের চারা রোপণ করে আসছে। ধান পেকে যাওয়ার আগেই নদীগুলোতে পানির জোয়ার আসে এবং অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ফসল হানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ৯টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধে ১২০টি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্প কাজের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪ হাজার টাকা।
জয়শ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী ও সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকারম হোসেন জানান, এই সুইজগেটগুলো কয়েকবছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে আসছে। হাওর থেকে পানি নামার সময়েই যান্ত্রিক ত্রুটি ও অকেজো হয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, এ বছর ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ১১টি অকেজো সুইজগেটের মধ্যে ৪টি সুইজগেট মেরামত করা হবে এবং ৭টি সুইজগেট আগামী বছর মেরামত করা হবে এবং হাওর থেকে সুইজগেট পর্যন্ত খালগুলো খননের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন আছে। অনুমোদন পেলেই দরপত্রের মাধ্যমে খালগুলো খনন করে স্থায়ীভাবে হাওরের জলবদ্ধতা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বৃষ্টি, অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল আসার আগেই দ্রুত ১১টি সুইজগেটের মেরামত কাজ সম্পন্ন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২টি উপজেলার কৃষকরা অনতিবিলম্বে ১১টি সুইজগেট সংস্কার করে বোরো ধান রক্ষার দাবি জানিয়েছে। সবদিক মিলিয়ে কৃষককেরা সামনে বোরো ফসল উত্তোলনে শঙ্কায় ও দিশেহারা।
আজকালের খবর/ওআর