প্রকাশ: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩৬ AM আপডেট: ১২.০২.২০২৫ ১২:০৮ PM
ছবি: সংগৃহীত
কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ঢাকার কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির চালকরা গাড়ি বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো যাত্রী।
গত দুদিনের মত বুধবারও সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন রুটে বাস মিলছে না। মগবাজার, নাবিস্কো, কুড়িল, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, শেওড়া ও বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে শত শত যাত্রী যানবাহনের অপেক্ষায়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, তুরাগ, অনাবিল ও এয়ারপোর্ট পরিবহনের চালকরা কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে চাইছেন না, সে কারণে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাদেরকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি ‘ঠিক হয়ে যাবে’।
ঢাকার খিলক্ষেত নামাপাড়ার বাসিন্দা রাশেদুল আলম বলেন, রাইদা, অনাবিল এবং তুরাগের কোনো বাস সড়কে নেই। ফলে শত শত মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
“বাড্ডা-রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া বা ওইদিকে যেতে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এই রুটে ইকবাল বলে আরো একটা এসি কাউন্টার সার্ভিস আছে, কিন্তু সেটা সকাল ১০টার আগে কাউন্টার খোলে না। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষকে জিম্মি খুবই সহজ।”
কুড়িল বিশ্বরোডের বাসিন্দা এনাম বলেন, “মেয়েকে স্কুলে দিতে উত্তরায় গিয়েছিলাম সিএনজিতে করে। ফেরার সময় প্রতিদিন বাসে ফিরি। কিন্তু আজ কোনো বাস পাইনি। তখন একটা মোটরসাইকেলে ফিরলাম। আসার দেখেছি বিমানবন্দর, খিলক্ষেত কুড়িল বিশ্বরোডে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। গত কয়েকদিন এই সমস্যা শুরু হয়েছে।”
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা হান্নানের অফিস বনানীতে। গত দুদিন বাস না পেয়ে অফিসে যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। এ কারণে বুধবার আর বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন।
“গতকাল অফিসে যাওয়ার সময় দুই আড়াইঘণ্টা বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। পরে অনেক কষ্টে একটা বাস পেয়েছি। বাসায় ফেরার সময়ও একই অবস্থা। এ কারণে দুদিনের ছুটি নিয়েছি, আজ আর কাল বাসা থেকে বের হব না।”
ঢাকার গণপরিবহন নিয়ে করা ফেইসবুক পেজ ট্রাফিক অ্যালার্ট-এ বিষয়টি নিয়ে নানা পোস্ট দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
একটি বাসের দরজায় ঝুলে যাওয়া যাত্রীদের ছবি দিয়ে তাওসিফ সাদাত নামে একজন লিখেছেন, “খিলক্ষেত, সকাল সাড়ে ৮টা। কমপ্লিট কেওয়াস!! টিকেটিং সিস্টেম করার পর আরও বাজে অবস্থা হয়েছে যাত্রীদের জন্য।”
সাফায়েত মাহমুদ নামে আরেকজন লিখেছেন, “বাসের জন্য আরও কষ্ট করতে রাজি আছি। কিন্তু যারা এখন বাস বন্ধ করে রেখেছে তাদের লাইসেন্স বাদ দিয়ে সরকার নিজেদের গাড়ি নামাক।”
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম বলেন, “কয়েকটি পরিবহনের চালকরা কাউন্টারে বাস চালাতে চাচ্ছেন না। এতে কয়েকটি সড়কে বাস কম চলছে। শুরুতে আপত্তি জানালেও ইকবাল, বলাকা পরিবহনের বাস চলাচল শুরু হয়েছে।”
তিনি বলেন, চুক্তিতে গাড়ি চালিয়ে বেশি লাভ করত এমন চালকরা এই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। তাদের ‘বোঝানোর’ চেষ্টা করা হচ্ছে।
“বলাকার গাড়ি চলছে, রাইদার কিছু গাড়িও চলা শুরু করেছে। চালকদের মধ্যে দুইটা গ্রুপ আছে তাদের ডাকছি ওইটা ঠিক করে দিব আজকে। বিমানবন্দর পরিবহন মঙ্গলবার লোকাল করেছিল। মালিকদের পরে প্রেশার দেওয়া হইছে যেন কাউন্টারে চালায়। এটা ঠিক হইতে দুয়েকটা দিন লাগবে আরও।”
সাইফুল আলম বলেন, “পয়সাকড়ি অন্যায়ভাবে ইনকাম করে যদি অভ্যাস হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। তারা এখন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালাত, মালিককে ২০০০ টাকা জমা দেয়। তারা ইনকাম করত ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ন্যায্য বেতন নিলে হয়ত ২ হাজার পাবে। এই একটা বিষয় আছে। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, লাগলে বেতন আরও বাড়িয়ে দেব। পাশাপাশি তাদেরকে ইন্ধনও দিচ্ছে কেউ কেউ।”
ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে গাজীপুরের যেসব বাস চলে, সেগুলোর কাউন্টার পদ্ধতির পরিষেবা শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার।
গোলাপি রঙের এসব বাসের সংখ্যা দুই হাজার ৬১০টি। এতোদিন ২১টি কোম্পানির অধীনে চলা এসব বাসে শৃঙ্খলা আনতে চালু করা হয় ই-টিকেট।
এ পরিষেবা উদ্বোধন করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, ঢাকার ভঙ্গুর ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার প্রথম পদক্ষেপ এটি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো রুটে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।
“ঢাকা বিমানবন্দরে কোনো বিদেশি নাগরিক নামলেই আমাদের বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা চোখে দেখে। একটি বাস আরেক বাসকে গরু-মহিষের মতো গুঁতাগুতি করে। এগুলো নিয়ে ট্রল হয়।”
চালুর পর থেকে গ্রগতি সরনি হয়ে চলাচলকারী বাসের চালকরা বিষয়টির বিরোধিতা শুরু করেন। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার দাবিতে সোমবার ঢাকার সায়েদাবাদে সড়ক অবরোধ করেন চালক-শ্রমিকরা।