
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সৌন্দর্য হচ্ছে ভিন্নমতকে সহ্য করা। ভিন্নমত ধারণ, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা, ভিন্নমতের অধিকারকে রক্ষা করা জীবনের বড় অর্জন। মানুষের প্রথম কাজ সহমর্মিতাবোধ তৈরি করা। ভিন্নমত সত্ত্বেও এক টেবিলের দুইদিকে যেন আমরা বসতে পারি।
তিনি আরও বলেছেন, লাইব্রেরিতে কিংবা বইমেলায় ভিন্নমত, ভিন্নমতের লেখকের বই পাশাপাশি থাকে। কিন্তু কেউ কারোর বিরুদ্ধে বলছে না। ভিন্নমত সহ্য করার শিক্ষা এবং পরস্পরের পাাশে দাঁড়ানো সহমর্মিতাবোধ মানুষের আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। ভিন্নমত সহ্য করতে পারলে মুক্তভাবে চিন্তা করা যায়। এটা না করতে হলে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। দেশ বহুত্ববাদিতার সমাজ। বহুত্ববাদ গ্রহণ করতে হবে। ভিন্নমত সহ্য করতে পারলে আমরা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারব।
আজ মঙ্গলবার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামের ওরিয়েন্টশন বক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এস আব্দুল আওয়ালের সভাপত্বিতে আরও বক্তব্য দেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আখন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এ আব্দুর রাজ্জাক।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো. নজরুল ইসলাম। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, জুলাই-আগস্ট শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রচলিত জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গা। শিক্ষকরা সূত্র ধরিয়ে দেবেন। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চারদেয়ালের বাইরের বন্ধু, স্বজন তথা চারপাশ থেকে শিখবেন। প্রথমেই কোন কিছুকে নাকচ করে দিবেন না অথবা গ্রহণ করবেন না। প্রচলিত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশ থেকে, সমাজ থেকে, বঞ্চিত মানুষের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করবেন। গত ৫৪ বছর ধরে মানুষ নিজ উদ্যোগে অনেক কিছু অর্জন করেছে। ফলে সমাজ এগিয়েছে। ২০২৪ বলে দিচ্ছে আপনারা পারেন। এই কমিটমেন্ট ধরে রাখতে হবে। আপনাদের কমিটমেন্ট হবে সহমর্মিতার। সমতার জায়গা আপনারা সৃষ্টি করবেন। সুবিধাভোগীদের দায়িত্ব সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করা করা। তাদের সাথে যেন বৈষম্য তৈরি না হয়। তাদের প্রতি সহমর্মি হতে হবে। ব্যবহার আচরণ জ্ঞান দিয়ে বৈষম্যের কাঠামো হ্রাস করতে হবে। সবার প্রতি সহমর্মিতার বোধ তৈরি করতে হবে। আপনার জ্ঞান যেন প্রযুক্তিগত হয়। আপনার সাফল্যে পিছনে পর্দার আড়ালে অনেক মানুষ কাজ করে। যাদের অবদানে আপনারা এতদূর এসেছেন; সেই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে আপনি এগিয়ে নেবেন। যে বীর শহীদদরা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন, তাদের মেধা, পরিশ্রম, আন্তরিকতা, সহযোগিতা ও আন্দোলনের ফসল নতুন বাংলাদেশ। আমি অনুভব করি এটার প্রয়োজন ছিল। তাদের অবদান আপনি যদি না স্বীকার করেন তাহলে সেটা ব্যক্তির উদযাপন হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, পৃথিবী প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মেধার, জ্ঞানের শক্তি দিয়ে টিকতে হবে। আপনার জ্ঞান প্রায়োগিক হতে হবে। নতুন নতুন চিন্তার খোরাক সৃষ্টি না করলে সমাজ রাষ্ট্রের ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না। পূর্বসূরীরা পৃথিবী আমাদের জন্য রেখে গেছেন আমরা আপনাদের জন্য রেখে যাচ্ছি- আপনাদের উত্তরসূরীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। পৃথিবীর প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে। কোথাও অন্যায় হলে কণ্ঠস্বর স্পষ্ট হওয়া উচিত। অনায়্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া দরকার। ছোট অন্যায্য একদিন বড় হয়ে যায়। অনায্য সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুন। সৃষ্টিশীল মানুষ সম্পদশালী হয়। সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র করবেন।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আখন্দ বলেন, যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবে তারাই বিশ্ব দখল করবে। শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে দেশের কাজে লাগাতে হবে। জ্ঞান সৃষ্টি করে সংরক্ষণ করে তা বিতরণ করতে হবে ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, জ্ঞানের মা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। তুমি পড়বে, শিখবে, চিন্তা করবে, সৃষ্টি করবে সর্বোপরি জ্ঞান বিতরণ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর এস এম আব্দুল আওয়াল জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক নসরুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় নিজেকে তৈরি করা যায় যেমনি অনেকে বিপদে চলে যায়। তবে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা পরিবেশ দিয়ে সুযোগ সুবিধা দিয়ে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গড়ে তুলব। ল্যাব, প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দেবো। এই গোল্ডেন টাইম যাতে ভালো কাটে সেদিকে আমাদের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলব।
আজকালের খবর/ওআর