প্রকাশ: রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:২১ PM

মাদারীপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অদক্ষতা, ঘুষ বাণিজ্য নাকি অদৃশ্য প্রভাবের কারণে বন্ধ হচ্ছে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো। জেলা প্রশাসন অভিযানের নামে এসব ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে। জরিমানার টাকা দিয়ে যাথারীতি ভাটাগুলো সচল রাখে মালিকরা। কাঠ পোড়ানোর কারণে একদিকে বন উজার হচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে এই ভাটাগুলো। বিভিন্ন অভিযোগ এবং মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হলেও এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে প্রশাসনের কর্তারা যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাটি দিয়ে ইট তৈরি করে মাঠজুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভাটার চুল্লির কাছে ছোট বড় বিভিন্ন গাছ কেটে এনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আবার অনেক ভাটায় স’ মিল বসিয়ে গাছগুলোকে কেটে চুল্লিতে দেওয়ার মতো করে উপযোগী করছে। কিছু কিছু ভাটায় কাঁচা ইট সাজিয়ে চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকরা চুল্লিতে দিচ্ছে স্তূপ করে রাখা গাছের টুকরো। আবার কিছু কিছু ভাটায় শ্রমিকরা পোড়ানো ইট চুল্লি থেকে বের করছে। কিছু ভাটা ইট পোড়ানোর জন্য রোদে শুকানো কাঁচা ইটগুলো চুল্লির ভিতরে সাজিয়ে রাখছে পোড়ানোর জন্য। ভাটাগুলো রাখ ঢাক না রেখে প্রকাশ্যেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজগুলো করছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা নামের একটি ইউনিয়নেই ইটভাটা আছে ২৬টি। জনবসতি এলাকায় ইটভাটা করার নিয়ম না থাকলেও জেলার অধিকাংশ ইটভাটাই জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এমনকি পৌরসভার মধ্যে তৈরি হয়েছে ইটভাটা। এই ইটভাটাগুলো কাঠ পোড়ানোর কারণে যেমন উজার হাচ্ছে গাছ তেমনি ইট বানাতে ফসলি জমির মাটি কেঁটে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কৃষি খাতকে।
পাঁচখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা নিউজ টোয়ান্টিফোর মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি বেলাল রিজভী বলেন, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইট ভাটা মালিকরা। এতে আশেপাশে বাসিন্দারা স্বাস্থ্যগত হুমকিতে পরেছে। এছাড়া গত বছর একটি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে ম্যাজিট্রেট হামলার শিকার হলেও মামলা করেনি জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের অনৈতিক যোগসাজশ থাকায় তারা জেলায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারে ঊর্ধ্বতনদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সঠিক তদন্ত করে অবৈধ ইটভাট উচ্ছেদ করা এবং তাদের অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ইটভাটাগুলোর আশেপাশের অনেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটাগুলো ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। যেখানে ইটভাটা আছে তার আশেপাশের জমিতে ফসল ভালো হয় না। এছাড়া ফল গাছে ফল হয় না। আমরাও বিভিন্ন অসুখ বিসুখে ভুগছি।
মাদারীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এসএম শরিফুল ইসলাম জানান, মাদারীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস নতুন হয়েছে। এখানে লোকবল নেই। ৩ জন স্টাফ এর মধ্যে ১ জন ট্রেনিং এ আছে। আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। যেগুলো অবৈধ পাচ্ছি সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। জেলায় কোন ইটভাটা বন্ধ হয় নাই তাহলে আপনার কোন ইটভাটা বন্ধ করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনে আবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জেলায় যেন কোনো ইটভাটায় কাঠ পোড়াতে না পারে। প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে এবং অনেক ইটভাটায় কাঠ পোড়ালেও জেলা প্রশাসক দাবি করেন আমাদের মোবাইল কোর্ট সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
আজকালের খবর/ওআর