শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
উদীচীর কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনা, যা বলছেন বদিউর
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৬:৫১ PM
কেন্দ্রয়ি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র বিভক্তি এবং উত্তেজনার মধ্যে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে নির্বাচনি অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক বাছাই ঘিরে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে বলে গনমাধ্যমে জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন।

সম্মেলনে এক পক্ষ বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেই আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিতে চাইলেও আরেক পক্ষ সাধারণ সম্পাদক পদে চান জামশেদ আনোয়ার তপনকে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় দুপক্ষের মধ্যে।

নিজেদের পছন্দে কমিটি গঠন করে পৃথক পৃথক বিবৃতিও দিয়েছে দুই পক্ষ।

উদীচীর প্রচার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের সম্পাদক কংকন নাগের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার বলা হয়, ‘অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি এবং অমিত রঞ্জন দে’কে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হয়েছে।’

অন্যদিকে উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সই করা আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।’

শনিবার এমন ঘটনার পর থেকেই উদীচী সভাপতি বদিউর রহমানের ফোন বন্ধ পাওয়া গেলেও উদীচীর ফেইসবুক পেইজে তার লিখিত বক্তব্য প্রচার করা হয় রবিবার। বক্তব্যটি তার দেওয়া বলে জানিয়েছেন বদিউর রহমান।

উদীচীর জাতীয় সম্মেলন ঘিরে একটি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আগে থেকেই শঙ্কা ছিল জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘যার প্রতিফলন ঘটে সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটি গঠনের সময়। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সংসদ সভায় এমন একটি বিষয় নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে উদীচীর কর্মীদের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি বলে আমার বিশ্বাস।’

শনিবারের ঘটনার বর্ণনায় অধ্যাপক বদিউর বলেন, ‘সম্মেলনের শেষ দিন নতুন কেন্দ্রীয় সংসদের প্রস্তাব উত্থাপন করার পর অধিবেশনের সভাপতি হাবিবুল আলম নতুন নামের প্রস্তাব এবং কেউ নাম প্রত্যাহার করতে চান কিনা, তা জানতে চান। এসময় প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদের জন্য নতুন অনেকগুলো নাম প্রস্তাব করা হয়। সব নাম যাচাই-বাছাই শেষে সভাপতি আবার জানতে চাইলে অনেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এমনকি বিষয়নির্বাচনী কমিটির প্রস্তাবকগণের থেকেও অনেকে নাম প্রতাহার করেন। ফলে বিষয়নির্বাচনি কমিটির প্যানেলটি পূর্ণতা হারায়। তা সত্ত্বেও সভাপতি বিষয়নির্বাচনী কমিটির খণ্ডিত প্যানেল পাস করানোর চেষ্টা চালান। এ অবস্থায়, কাউন্সিল হাউজ ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। এই সময় আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সবাইকে শান্ত করার উদ্যোগ নেই এবং সভাপতি হাবিবুল আলমের কাছে মাইক্রোফোন দেয়ার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং আমাকে মাইক দেননি। আমি বলেছিলাম, আমার এখনও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমি কাউন্সিলরদের শান্ত করার চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু তিনি তা আমলে নেননি।’

বদিউরের ভাষ্য, ‘আমি একবার কথা বলা শুরু করতে পেরেছিলাম। সাথে সাথেই হাবিবুল আলম আমার কাছ থেকে মাইক নিয়ে নেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমি কথা বললে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। আমি সেই সুযোগ না পেয়ে মঞ্চের ডান পাশে একটি চেয়ারে বসে পড়ি। মিনিট দু’য়েক পর সম্মেলনের দুই জন স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে এবং আমাকে ভেতরে নিয়ে বসায়। তখন দুজন স্বেচ্ছাসেবক আমাকে বলে যে, আপনার এখানে একা থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিই।’

কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও তাদের কথায় রাজি হয়ে তাদের সঙ্গে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বলে জানান অধ্যাপক বদিউর।

এ সময় আরো ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ তাকে ঘিরে ধরে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি তাদের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে থাকি। গেটের কাছে গেলে জামসেদ অনোয়ার এসে আমার পাশে দাঁড়ান এবং বলেন, ‘চলুন উদীচী অফিসে যাই’। এর মধ্যে দুয়েকজন বলে, ‘আমরা মিছিল করবো’। আমি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে না যাওয়ার কথা বললে বেশ কয়েকজন উত্তেজিত কর্মী আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে এবং একটি রিকশায় তুলে বসায়। তখন রিকশা ও মিছিল সামনের দিকে এগোতে থাকে। আমার সাথে একজন হৃষ্টপুষ্ট কর্মী। তিনি আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে বসে থাকেন। আমি যখনই তাকে কোন প্রশ্ন করি, তিনি বলেছেন যে, ‘আমরা উদীচী অফিসে যাবো’। উদীচী অফিসের সামনে পৌছালে বেশ কয়েকজন আমাকে স্বাগত জানায় এবং ভেতরে যেতে বলে। এসময় তাদের সাথে হেটে উদীচী অফিসের গেটের দিকে যেতে বাধ্য হই।”

অফিসে প্রবেশের পর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “উদীচী অফিসে জামসেদ আনোয়ার তপন আমার ডানদিকে এসে বসেন। তখন অসংখ্য মোবাইল, ক্যামেরা আমাদের ছবি ধারণ করে। তখন আমি বলি, ‘আমার শরীরে কুলোচ্ছে না, আমাকে বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা কর’। তখন ওরা বলে, ‘না ওপরে চলুন’। আমি তাদের সাথে উদীচী কার্যালয়ে যাই। তারা আমাকে ডেস্কের মূল চেয়ারে বসার জন্য অনুরোধ করে। তবে আমি বলি, ‘আমি সামনের চেয়ারে বসি এবং এখানেই বসবো’। সেখানেই বসে পড়ি আমি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই জামসেদ জানোয়ার অপন এসে আমার বাম পাশে বসেন। এসময় সামনে বসা ছিলেন হাবিবুল আলমসহ করেকজন। এক পর্যায়ে হাবিবুল আলম আমাকে বলেন, ‘আমরা আপনাকে মাথায় তুলে রাখব’। বিষয়টি শুনে আমার হাসি পেয়েছে। এরপর আরিফ নূর, রহমন মুফিজ এসে জামসেদ আনোয়ার তপনকে বলতে থাকেন, ‘আমাদের নতুন কমিটির প্রথম সভা এখানেই করতে হবে’।”

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক বদিউর বলেন, “জামসেদ আনোয়ার তপনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় আমি নিজের অবস্থান বুঝে ফেলি এবং সভা না করার কথা বলি। বিষয়টি সামাল দেয়ার জন্য যখন আমি নিজের অসুস্থতার কথা বলতে থাকি এবং হাবিবুল আলম ও ভামগেন আলোয়ার অপদকে কাছে টেনে আমার শারীরিক অবস্থার কথা বলে আমার কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তারা দায় সংগঠনকে নিতে হবে বলে জানাই। আমি এ-ও বলি যে, ‘আমার মনে হয় এখনই হাসপাতালে যাওয়া উচিত, অ্যাম্বুলেন্স ডাকো’। পরক্ষণেই বলি, ‘আমি আগে বাসায় যাই, সেখানে প্রেসার ও সুগার মেপে প্রয়োজনে বাসা থেকেই হাসপাতালে যেও’। তখন হাবিবুল আলম তার ব্যক্তিগত গাড়িতে আমাকে বাসায় পৌঁছে দেন। বাসায় পৌঁছে আমি মোবাইল বন্ধ করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।”

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
আগামী নির্বাচন পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে: জাতিসংঘ মহাসচিব
রাজশাহীতে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ
দুই দফা দাবিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করলো ইনকিলাব মঞ্চ
ফাল্গুনের ভরা জোৎস্নায় বিষণ্ন নিঃসঙ্গ জীবনানন্দ
চাক বাংলা অভিধান ও চাক সংস্কৃতি চর্চা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
টেকনাফে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখীর চাষ
গৌরীপুরে হোলি উৎসব
কানাডা গিয়ে সরকার বিরোধী লেখালিখি, রাষ্ট্রদূত হারুনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ
মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রূপালি গ্রেপ্তার
অব্যাহত ধর্ষণ, খুন, নৈরাজ্য প্রমাণ করে দেশ চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার: সিপিবি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft