রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
অনুসন্ধানের নামে সময় ক্ষেপণ চায় না সংস্কার কমিশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪০ PM
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়াসহ সুশাসন নিশ্চিতে বহুমাত্রিক ও বহু পেশার মানুষের সমন্বয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশনের পরিসর বাড়ানো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে সংস্কার কমিশনের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪৭ পাতার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করেন।
 
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংস্কার কমিশন দুদকের আমূল সংস্কারে সাত অধ্যায়ে ৪৭ সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে দাখিল করা হয়। এর মধ্যে বিতর্কিত ধারা বাতিল, দুর্নীতির কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পাল গঠনসহ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দুদকের আইনি সংস্কার, কমিশনের পরিসর বাড়ানো, সচিব ও মহাপরিচালক পদে নিয়োগ–পদায়ন, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নির্মূলে টাস্ক ফোর্স গঠনসহ ৩৭ টিসহ সর্বমোট ৪৭টি সুপারিশ এসেছে প্রতিবেদনে।

প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি করবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনও ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবেন না ও অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে সমর্থ হবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক, সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে। যা সংবিধানে প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করতে হবে। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদের অধীনে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে ন্যায়পালকে এই কৌশলপত্রের যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতায়িত করতে হবে।

তৃতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যে কোনও রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। চতুর্থ সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে। 

৫ নম্বর সুপারিশে যথাযথ আইনি কাঠামোর মাধ্যমে কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের প্রকৃত বা চূড়ান্ত সুবিধাভোগীর পরিচয়-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি রেজিস্ট্রারভুক্ত করে জনস্বার্থে প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। 

৬ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনি আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। দুদকের অনুসন্ধানের নামে যে দীর্ঘসূত্রিতা তার অবসান চেয়ে তদন্তের আগে অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংস্কার কমিশন অনুসন্ধানের এই কার্যক্রম বাতিলের সুপারিশ করেছে, তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দুদকের তফসিলভুক্ত প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত-পূর্ব আবশ্যিক অনুসন্ধানের ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।’ 

সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে তিন সদস্যের পরিবর্তে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের কমিশনে একজন নারী সদস্য যুক্ত করা ও কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর করার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইনে, শিক্ষায়, প্রশাসনে, বিচারে, শৃঙ্খলা বাহিনীতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশায় বা সুশাসন কিংবা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্যূন ১৫ (পনের) (পনের) বৎসরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কমিশনার হইবার যোগ্য হইবেন। প্রতিবেদনে কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বাছাই কমিটির পরিবর্তে ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’র প্রস্তাব করেছেন। 

দুদকের সচিব নিয়োগর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় সচিব নিয়োগের বিধান করতে হবে। তবে সরকারি চাকুরীতে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা বিজ্ঞাপিত পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হলে, মাতৃ সংস্থা থেকে ছুটি সাপেক্ষে তিনি দুদকের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।’ 

এ ছাড়া দুদকের বিতর্কিত চাকরি বিধি ৫৪ এর ২ ধারা ও ৩২ এর ক বাতিল, মহাপরিচালক ও পরিচালক পদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাপরিচালক ও পরিচালক পদসমূহের (প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিযুক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালক ব্যতীত) সকল নিয়োগ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় হতে হবে। 

প্রতিবেদনে, দুদকের স্বাধীন প্রসিকিউশন টিম গঠন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের যে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল, কমিশনের কাজের পরিধি বাড়াতে চলমান ৩৬ জেলা কার্যালয়ের পরিবর্তে প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় চালু ও স্পেশাল জজ আদালত প্রতিষ্ঠা ও অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে। 

সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার দুদক সংস্কারে কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়গুলো পর্যালোচন করছেন কীভাবে সংস্কারগুলো করা যায়।’


আজকালের খবর/ এমকে








সর্বশেষ সংবাদ
কোটি টাকা চাঁদা দাবি, ফাঁদ পেতে ধরা হলো তিনজন
ফেনীতে ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার, বাড়ি থেকে অস্ত্র-বুলেট জব্দ
আওয়ামী লীগ-জাপা ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না: জি এম কাদের
গুলি করে গরু ব্যবসায়ীদের ৭৮ লাখ টাকা লুট
ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে ৭ এবং গাজায় ৩৪ জন নিহত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বগুড়ার সোনাতলায় বিএনপির উদ্যোগে ইফতার মাহফিল
টেকনাফে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ থাকা ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
চুয়াডাঙ্গায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার
পুত্রবধূ অন্তঃসত্ত্বা, শ্বশুর গ্রেপ্তার
ঈদে নিহারকলি নিয়ে আসছেন পরিচালক ফজলুল হক
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft