
৪৮তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির করিডোরে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সংগঠনটি। এ সময় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা দাবি-দাওয়া পেশসহ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, অফিস সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাফি, অর্থ সম্পাদক শেখ আল আমিন, সাহিত্য সম্পাদক ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
সনাতনী ধর্মের প্রতিনিধি পঙ্কজ রায় সবাইকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যের আহ্বান জানান। সনাতনী ধর্মের বাঁধন বিশ্বাস বলেন, হলগুলোতে গরুর মাংস অন্যান্য সব খাবারের সঙ্গে মিক্স করা হয়। সেটা আমাদের জন্য যায় না। শিবিরের প্রতিনিধির মাধ্যমে অন্তত প্রশাসনকে এটা অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি ছাত্রশিবির এমন একটা মতবিনিময় সভার আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
খ্রিস্টান ধর্মের প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার দাস, যখন মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বে পিছুটান আসবে তখন আমরা এক সঙ্গে থাকবো। মাতৃভূমি রক্ষায় আমরা সবাই এক। আমার এক হয়ে চলবো। মেধা দিয়ে দেশ গড়বো। সবার অধিকার নিশ্চিত হোক সেই প্রত্যাশা রাখি।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধি কোষন চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়ি। আমরা বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। আমি চাই সমতল ও পাহাড়ির মধ্যে পার্থক্য না থাকুক। সবার অধিকার ফিরে পাক। একই ধর্মের মন্টু চাকমা বলেন, বাংলাদেশ একটা বহুজাতির দেশ। সেহেতু সংস্কৃতি ও ভাষা, খাবার, থাকা আলাদা। অন্যান্য হলে একটা করে রুম বরাদ্দ দেয়া হলেও শেখ রাসেল হলে আমাদের কোনো রুম নাই। শেখ রাসেল হলে আমাদের জন্য রুম দেয়া হোক। এছাড়াও ঋতু চাকমা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি অনেক কিছু দেখলাম, জানলাম। মিডিয়া বা অন্য উপায়ে অনেক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হতো। বাস্তবতা ভিন্ন। একই দেশ, একই সঙ্গে থাকি, এটাই আমাদের বড় পরিচয়।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মতামত জানা। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে চাই। আমাদের নিয়ে যে অপপ্রচার হয়েছে, সেই অপপ্রচার রোধকল্পে আমরা আমাদের প্রকাশনা উৎসব করেছি, সেখানে সবাই দেখেছে আমরা কী কী বই পড়ি। এটার মাধ্যমে ছাত্ররা বুঝতে পেরেছে তারা আমাদের উপর কীভাবে ব্লেমগেম খেলতো। আমরা চাই প্রতিটা ধর্মই মূল্যায়ন হোক।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইচ্ছা করলেই সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের ভূমিকা রাখার কিছু সুযোগ আছে। ছাত্রশিবির শুধু একটি রাজনৈতিক সংগঠন, এমনটা নয়। ছাত্রশিবির একটি আর্দশিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছাত্রশিবিরের কাজ হলো একটি আদর্শকে লালন করা। যে আদর্শ সব সময় মানবতার কথা বলে, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, মানুষে পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে, সবসময় মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ করা এবং সেটা আলোকে সমাজে কাজ করা। আমাদের লক্ষ হলো সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই জন্য চাই সৎ, দক্ষ এবং দেশপ্রেমী নাগরিক তৈরি করা। আমরা দেখেছি অনেক রাজনৈতিক দাল কাজ করেছে কিন্তু এদেশে ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয়নি। আমাদের দেশ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তার কারণ আমরা সৎ, দক্ষা ও দেশপ্রমিক নাগরিক তৈরি করেতে পারিনি। এটি করেতে সে গুণাবলির প্রয়োজন সেটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ছাত্রশিবির। সেটা হতে পারে মুসলিমদের মধ্যে, থেকে হতে পারে হিন্দুর, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা যে কোনো ধর্মাবলম্বী মানুষ হতে পরে। সুতরাং অন্য আদর্শের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান- যে যেরকম আদর্শ ধারণ করে, তারা সেটা প্রচার করুন। আমাদের আদর্শ আমরা প্রচার করি। যদি ভালো লাগে ওয়েলকাম, যদি ভালো না লাগে থ্যাংক ইউ।
আজকালের খবর/ওআর