প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:১৩ PM আপডেট: ০৪.০২.২০২৫ ৭:২৬ PM
কিশোরী ফেলানী থেকে স্বর্ণা দাশ, চা শ্রমিক গোপাল থেকে পারভেজ, বাঙালি আবালবৃদ্ধবণিতা সহ কোমলমতি শিশু-কিশোরদের প্রাণ কেড়ে নিতে বিন্দুমাত্র মায়া করেনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। কেউ বিপদে পড়লে বাঁচার আঁকুতিতে চিৎকার দেয়, বেড়িয়ে আসে অগনিত সাহায্যের হাত। আবার কারো চিৎকার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটা হয়েছিল ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সমালোচনার শীর্ষে থাকা, ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনের কাঁটাতারে ঝুলন্ত নিথর দেহ। মেয়েকে বিয়ে দিতেই বাবা নাগেশ্বর নয়াদিল্লি থেকে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর দিনহাটা সীমান্তের কাঁটাতার টপকিয়ে আসতে চেয়েছিল নিজ মাতৃভুমি বাংলাদেশে। বাবা নাগেশ্বর এপারে আসতে পারলেও মেয়ে ফেলানীর বিয়ের পিরিতে বসার বুকভরা স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহার জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে মামলা শুরু হলেও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিয়ে প্রহসনের বিচারে নির্দোষ প্রামাণিত হয় প্রধান আসামী অমিতাব সহ বিএসএফ সদস্যরা।
তৎকালীন ভারতের কংগ্রেস সরকার রাজীব গান্ধীর সময়কালে সীমান্তের নিরাপত্তায়, কাঁটাতার চোরাচালান আর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যতটা ভূমিকা রেখেছে তার চেয়ে বেশী পরিমাণ নির্মমভাবে মানুষ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধে দায়িত্ব পালন করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। উইকিপিডিয়ায় উল্লেখিত একটি পরিসংখ্যান স্পষ্ট বলে দেয়, কাঁটাতারের পূর্বে ও পরের পরিস্থিতি কেমন ছিল। সীমান্তের নিরাপত্তায় কাঁটাতার নির্মাণের পূর্বে ১৯৭২ সাল হতে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তথা ১৮ বছরে সীমান্তে মোট ৩৩৮ জন নিহত হয়েছে। আসাম শান্তি চুক্তির পর ১৯৮৯ সাল থেকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া শুরু হয় তবে পূর্ণাঙ্গ শেষ না হলেও এরই মাঝে ১৯ বছরে সীমান্তে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ১১৪ জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিসী কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সীমান্তে নিহত সংখ্যা ৬০৭ জন। এখন বলতেই হয়, সীমান্তের কাঁটাতার চোরাচালান আর অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ফাঁদ, না শুধুমাত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের মারার (মৃত্যু) ফাঁদ?
সাম্প্রতিক সময়ে নওগাঁর ধামুইরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট পাটগ্রাম সীমান্তে, প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা, সিলেটের বিয়ানী বাজারের গোঁজকাটা সীমান্ত এলাকায় প্রায় ২০০ বছরের পুরানো মসজিদ পূর্ণনির্মাণে বাধা। সকল কিছুই আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন উপেক্ষা করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ করে যাচ্ছে। তবে বুক উচু করেই বলতে হয় ভারতের সকল অপচেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও সংগ্রামী জনতা। বীরত্বগাঁথা এই জাতির সাথে কেউ পায়ে পা দিয়ে বিবাদ করতে চায় তাহলে ছাড় দিলেও ছেড়ে দিবে না। বাঙালি সেই জাতি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়, স্বাধীন ভুখণ্ডে উড়িয়েছে লাল সবুজের কেতন। ‘জীবন দিতেও রাজি আমার দেশের এক ইঞ্চি মাটিও দখল করতে দিব না‘- চাপাইনবাবগঞ্জে সাধারণ এক কৃষকের সংগ্রামী কণ্ঠই জলন্ত উদাহরণ।
খোরশেদ আলম রাজু: লেখক ও সাংবাদিক।
আজকালের খবর/আরইউ