
ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে ১৬ বছরে আয় হয় ৩৭ লাখ টাকা এবং ট্রানজিটের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট খাতে বাংলাদেশের ব্যয় ৭ হাজার কোটি টাকা বলে মন্তব্য করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এছাড়া, ভারতের মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রানজিটের কারণে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেন যেতে পারে এবং তাদের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ও ভবিষ্যতে চায়নার সঙ্গে যুদ্ধ হলে সরাসরি যেন বাংলার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রেস ক্লাবের দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্যের সময় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে ট্রানজিট বাস্তবায়ণ হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের ট্রানজিট সুবিধার চালুর পিছনে হাত ছিল বর্তমান ইউনূস সরকারের নিযুক্ত শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় এবং রেহমান সোবহান। ২০০৭-০৮ সালে প্রতিদিন হোটলে/রেস্টুরেন্টে সভা/সেমিনার করে করে ট্রানজিটের পক্ষে বক্তৃতা প্রদান করেন। তারা শেখ হাসিনাকে বুঝান ট্রানজিট সুবিধা দিলে বাংলাদেশ প্রতি বছর লাভ করবে ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু গত ১৬ বছরে ঠিক উল্টো চিত্র প্রকাশ পায়।
এ সময় তিনি সাংবাদিকতার ব্যবহারিক দিক নিয়ে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমন্ত্রণ নেই, তার কারণ তরুণদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের আশা আকাঙ্ক্ষা শুনতে চাই। তরুণদের জন্যই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়। নতুন বাংলাদেশে ব্যবহারিক সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জ। সাংবাদিকতায় চারটি চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে পারলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অর্জন করা সম্ভব। তার মধ্যে কর্পোরেট কোম্পানি, কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের সমর্থক, সরকারি চাপ। এই চারটির মধ্যে তিনটি বিষয় পরিবর্তন করা যায় না, কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করা যায়। যার ফলে আমার দেশ পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে লিখতে পাচ্ছি এবং নিজ দলের বিরুদ্ধেও লিখতে পাচ্ছি।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সময় থেকে বিজ্ঞাপন বাণিজ্যের বিষয়ে বলেন, এশিয়াটিক কোম্পানির মাধ্যমে জাকের- নূর পরিবার বিজ্ঞাপন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ৮০ % পুঁজি নিচ্ছে যার বাজার মূল্য বর্তমান চার হাজার কোটি টাকা। আমার দেশ মুনাফা অর্জনের জন্য নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাউকে তোয়াক্কা না করে আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্যাতনের ব্যাপারে বলেন, ২০১৩ সালে আমাকে গৃহবন্দী করা হয়। জানতে পারি বের হলে গুম করা হবে, যার কারণে আমি বের না হয়ে অফিসে থাকি এবং শেখ হাসিনা আমার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের অনুমতি দিলে আমি সেনাবাহিনীকে চিঠি পাঠাই। চিঠিতে সেনাবাহিনীকে বলি আপনারা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে শেখ হাসিনা দিল্লির কাছে বাংলাদেশর সার্বভৌমত্ব দিয়ে দিয়েছে, আর আপনারা বসে বসে তা দেখছেন। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রথম সোচ্চার হয় আমার দেশ পত্রিকা। একটা পর্যায়ে আমাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
এছাড়া তিনি বলেন, আজ এই তরুণদেরকে দেখলে নতুন বাংলাদেশের ছবি ভেসে আসে। ৬ বছর পর দেশে এসে বলি তরুণদের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছি। আগে আমি ভাবতাম এই তরুণ শুধু ফেসবুক এবং স্মার্ট ফোনো আসক্ত, কিন্তু আমার সে ধারণা ভুল প্রমাণ করে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলন আগে এদেশের আলেম সমাজকে ক্লাস হিসাবে দেখতে পারতো না এলিট মিডিয়াগুলো। এই এলিট মিডিয়ার প্রচারের মাধ্যমকে ভেঙ্গে দিয়ে জুলাইয়ের গণঅভূত্থানের পর ৪৩ দিনে ৪৩ আলেমের নিযার্তনের কাহিনি তুলে ধরি। এজন্য এবার থেকে আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ পাবে জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান এবং সেটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দৈনিক আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এবং জাবি প্রেস ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো এবং সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আজকালের খবর/ওআর