সারোয়ার জাহান রাজিব। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা বুক চিরে বয়ে চলা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক নরসুন্দা নদী। এই নদীটি প্রাকৃতিকভাবেই শৈল্পিকার আকৃতির। একসময় বর্ষার মৌসুমে ছোট-বড় অসংখ্য নৌযান চলাচল করতো।
কালের বিবর্তনে আজ সেই নদীর উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপার করতে পারে দুই পাড়ের মানুষ। বর্ষায় নদীটির জ্বলে ভরে থাকলেও পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে নদী শুকিয়ে যায়। বর্ষায় স্রোতের কারণে নদীর তলদেশে পলি জমে। পলি পড়া নরসুন্দা নদীর বুক এখন বিস্তৃর্ণ ধান ক্ষেত। হঠাৎ করে দেখে বুঝার কোন উপায় নেই।
খরস্রোতের নরসুন্দা নদী প্ৰাণ হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। পুরোনো বহ্মপুত্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা এই নদী উজান থেকে আসা পলিমাটিকে চর জেগে ভরাট হয়েছে। এখন সেখানে বোরো ধান রোপণ করেছেন স্থানীয়রা। মাইলের পর মাইল নদীতে এখন চোখ জুড়ানো সবুজ ধান ক্ষেত। নদীর পলী মাটি উর্বর থাকায় ধান ফলানোর খরচও কম। তাই খুব সহজেই লাভের মুখ দেখে কৃষক। শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচল। একারণে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষ। নদী শুকানোর ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের সংকটও দেখা দিয়েছে। এছাড়া প্রজননের অভাবে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির নামীদামী দেশীয় মাছ। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে আবাদি জমির সেচ কাজে পানির সংকটে পড়েছেন নদীর পাড়ের প্রান্তিক কৃষকেরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ প্রক্রিয়া। প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে নরসুন্দা নদীর তলদেশ খননের দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন ও নান্দাইল নদী রক্ষা সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট নরসন্ধান নদী কেন্দ্রিক পেশায় নিয়োজিত সাধারণ মানুষ।
জানাগেছে, নরসুন্দা নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত, পুরোনো বহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী "নরসুন্দা"। নদীটি নান্দাইল উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শহর হয়ে ভাটি অঞ্চলে গিয়ে হাওরে মিশেছে। কিশোরগঞ্জ, নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর এই নরসুন্দা নদীর তীরেই অবস্থিত। নদীর দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৮০ মিটার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা এ বিষয়ে বলেন, বর্ষার মৌসুমী খরস্রোতের কারণে ভেসে আসা উর্বর পলিমাটির জন্যই কিটনাসক ও কোন প্রকার সার প্রয়োগ না করেই ফসল ভালো হয় এবং কৃষকের খরচ কম হয়।
আজকালের খবর/ এমকে