বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আতিকুর রহমান
বেকারত্ব দূরীকরণে সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:৪৮ PM
দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়ার বদলে ক্রমেই কমছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রতিনিয়ত শিল্প-কারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধের ঘটনা অহরহ। এমনকি গত পাঁচ মাসে শতাধিক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া আরো কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের শমিকরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত। এর সঙ্গে আবার পুঁজির ঘাটতি, ডলারের উচ্চমূল্য, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে চরমভাবে ভুগছে দেশের শিল্প-কারখানাগুলো। যার কারণে দেশে তেল-চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন, রড-সিমেন্টসহ নির্মাণশিল্পের তৈরি উপকরণ, ওষুধ, সিরামিক ও বস্ত্র খাতের মতো বৃহৎ শিল্পগুলোতে উৎপাদন ব্যাপক হারে ব্যাহত হচ্ছে। সেসঙ্গে ব্যাপকহারে বেকারত্ব বাড়ছে। নানাবিধ ঝামেলার কারণে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তেমন বাড়ছে না। যার আওতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে; যা আগামীর বাংলাদেশের জন্য শুভকর হবে না। ফলে পরিস্থিতি আরো প্রকট হওয়ার আগেই এক্ষুনি পদপেক্ষ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আতিকুর রহমান। 

দৈনিক আজকালের খবরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। দৈনিক আজকালের খবরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

আজকালের খবর: দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না, শিল্পখাতে অস্থিরতা রয়েছে। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। এ পরিস্থিতির কারণ ও এর থেকে উত্তোরণের উপায় কী?

মো. আতিকুর রহমান: দেশে বিনিয়োগ ক্রমেই কমছে। গত পাঁচ মাসে অর্ধশতাধিক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। এছাড়া আরো কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান ধুঁকছে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের শমিকরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত। এমনিতে দেশে কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। তাছাড়া দেশে আগে থেকেই বেকারত্বের সঙ্কট রয়েছে। দেশে বর্তমানে চার কোটির বেশি মানুষ বেকার। এর মধ্যে শিল্পখাতে বিনিয়োগ হ্রাস, কারখানা বন্ধ হওয়ায় অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ দেশের শিল্পখাতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে নতুন বিনিয়োগ না এলে, কারখানাগুলো সচল না থাকলে, বেকারত্ব সঙ্কট আরো বাড়বে। কাজ হারিয়ে এসব শ্রমিকের বড় একটি অংশ চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, পোশাক খাতে চাকরি হারিয়ে অনেক শ্রমিক কারখানা মালিকদের হুমকি দিচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। ফলে শ্রমখাতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে শ্রমখাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসার জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন করে শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কমবে অস্থিরতা, শক্তিশালী হবে অর্থনীতি। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কেও উদ্যোগ নিতে হবে। ৫ আগস্টের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও বেকারত্ব নিরসনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি শিল্প ও কর্মসংস্থান খাতে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে নিরসন করতে হবে। সরকারের উদ্যোগ নতুন প্রকল্প আনতে হবে। শ্রমখাতে অস্থায়ী মজুরিভিত্তিক কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ধারাবাহিকতা সচল রাখার উদ্যোগ দরকার। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্ট ড. ইউনূস দেশের শিল্পপতিদের নিয়ে বৈঠকে বসতে পারেন। শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। কীভাবে এ খাতে আরো উন্নতি করা যায়, বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে এগোতে হবে। পাশাপাশি যারা বেকার, তাদের জন্য নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শিল্প-কারখানা গড়তে হবে।

আজকালের খবর: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কি ভূমিকা রাখতে পারে?

মো. আতিকুর রহমান: এক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে আরো সক্রিয় ভূমিকায় আনতে হবে। যুব উন্নয়ন এখন উন্নয়নের বদলে অনুন্নয়ন অধিদপ্তর হয়ে গেছে। আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে আমরা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে কিছু প্রস্তাব বা পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কিছু কিছু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কাজে ধীরগতি, দুর্নীতিসহ নানা কারণে এর সুফল সঠিকভাবে মিলছে না। এজন্য নতুন করে এই অধিদপ্তরকে সক্রিয় করতে হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এটির কর্মপরিধিও বাড়ানো দরকার। প্রত্যন্ত এলাকায় ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে হবে। তাছাড়া কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। গ্রাহক পর্যায়েও অনেকে আছেন, যারা এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী হয়েও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন না। আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ ওঠে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। সর্বোপরি দেশ থেকে বেকারত্ব দূরীকরণে সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করা দরকার।

আজকালের খবর: বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ কী কী উদ্যোগ নিয়েছে?

মো. আতিকুর রহমান: আমাদের সংগঠনের বিষয়ে বলতে পারি, ১১ বছর ধরে আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব নিরসনে কাজ করছি। বেকার সম্প্রদায়ের চাওয়া-পাওয়ার কথা সরকারের বিভিন্ন মহলে তুলে ধরছি। সর্বোপরি আমরা সবাই বেকার। ফলে আমাদের পক্ষে বড় কোনো প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। তারপরও বেকার উন্নয়ন পরিষদ ময়মনসিংহে ছোট পরিসরে মাছচাষ, ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক কাজ বাস্তবায়নের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এছাড়া আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বেকারত্ব নিরসনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগ জরুরি।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত
অবশেষে মারা গেলেন জবি শিক্ষার্থী আহাদ
সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ : রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা
উত্তরায় দম্পতিকে কোপানোর ঘটনায় পুরো চক্র গ্রেপ্তার: ডিএমপি
ভোলায় ''ডেভিল হান্ট'' রাতভর অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক- ৪
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জবি ডিবেটিং সোসাইটির নেতৃত্বে মুবাশ্বির- মেহেদী
জবিতে কক্সবাজার জেলা ছাত্রকল্যাণের নবীণ বরণ অনুষ্ঠিত
তিস্তা অঞ্চলগত সমস্যা নয়, এটি একটি জাতিগত সমস্যা: গয়েশ্বর রায়
শেখ হাসিনার সামরিক সচিবকে পুলিশে দিলো ছাত্র-জনতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft