বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অনলাইন যুগে কাগজের সংবাদপত্র
মোহাম্মদ মাসুদ খান
প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩:৪৪ PM
বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পাঠক মহলে কাগজে ছাপানো সংবাদপত্রের ব্যাপক কদর দেখা গেছে। দেশের সর্বত্র সংবাদপত্রের প্রচুর চাহিদা ছিলো। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, বাস, লঞ্চ, বিমান, ট্রেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাস স্ট্যান্ড, লাইব্রেরিসহ সবখানেই সংবাদপত্রের অগণিত পাঠক দেখা যেতো।   

১৯৭৬ সালে আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই আমার সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। আমাদের পাশের বাসা মানে আতিকদের বাসায় ইত্তেফাক রাখা হতো। দৈনিক ইত্তেফাক ছিলো সে সময় খুবই জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক পত্রিকা। জনপ্রিয়তা ও প্রচারে এর সমকক্ষ কোনো দৈনিক তখন ছিলো না। মনে পড়ে স্কুল থেকে ফিরেই বেলা ১১ টার দিকে আতিকদের বাসায় ঢুকেই পত্রিকাটি পড়া শুরু করতাম। প্রথমেই চোখ বোলাতাম খেলার খবরের পাতায়। ইত্তেফাকের শেষ পাতা মানে অষ্টম পৃষ্ঠার বাম দিকে প্রথম দুই কলামজুড়ে খেলার খবর প্রকাশিত হতো। তখন ফুটবল ছিলো খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা। ঢাকা স্টেডিয়ামে প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলা নিয়মিত হতো। মোহামেডান, আবাহনী, ওয়ান্ডারাস, বিজেআইসি, ওয়ারী, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ইত্যাদি ক্লাব দলগুলো প্রথম বিভাগে ফুটবল খেলতো। অধিকংশ সমর্থকই আবাহনী ও মোহামেডান দুই শিবিরে বিভক্ত ছিলো। আবাহনীর হয়ে খেলতেন কাজী সালাউদ্দিন, চুন্নু, নান্নু, টুটূল, আনোয়ার, হেলাল, অমলেশ, মোতালেব প্রমুখ, পক্ষান্তরে মোহামডানে খেলতেন মেজর হাফিজ, এনায়েত, বাটু, মঞ্জু, সান্টু প্রমুখ। তাই খেলায় কে হারলো আর কে জিতলো তা জানার জন্য এতোটাই উদগ্রীব থাকতাম যে ইত্তেফাক হাতে নিয়ে প্রথমেই চলে যেতাম অষ্টম পাতায়। ইত্তেফাকের দ্বিতীয় পাতা ছিলো সম্পাদকীয় পাতা। পাঠকদের চিঠিপত্রও একই পাতায় ডান দিকে ছাপা হতো। ৬ষ্ঠ পাতায় থাকত ছোট ছোট বিজ্ঞাপন যেমন, পাত্র পাত্রী, পড়াইতে চাই, সন্ধান চাই, ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি।  সপ্তম পাতা মানে শেষ পাতার আগের পাতায় স্থান পেতো সিনেমার বিজ্ঞাপন। 
ইত্তেফাক পত্রিকাটি প্রথম পর্যায়ে ১৯৪৯ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং ইয়ার মোহাম্মদ খানের হাতে চালু হয়। তখন ইত্তেফাক ছিলো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। পরবর্তীকালে মওলানা ভাসানী তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সম্পাদকের দ্বায়িত্ব প্রদান করেন। ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পদনায় ইত্তেফাক দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। ইত্তেফাক পত্রিকাটি পাকিস্তান আমলে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনমত গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা রাখে। ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামরিক শাসক আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের শাসন আমলের তীব্র বিরোধিতা করে। 

১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র ব্যরিস্টার মইনুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন মনজুর পরিচালনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। ইত্তেফাক বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দৈনিক হিসাবে আজ ২০২৫ সালেও সুনামের সাথে টিকে আছে।  

নীচতলার খালাম্মা (লোনো ভাই, নাঈমের আম্মা) ছিলেন সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার নিয়মিত পাঠক। বেগম পত্রিকাটি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম নারী সাপ্তাহিক। ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের সওগাত প্রেস থেকে পত্রিকাটি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রথম সম্পদিকা বেগম সুফিয়া কামাল। দীর্ঘদিন বেগম পত্রিকার সম্পদকের দ্বায়িত্বে ছিলেন বেগম নূরজাহান। সাপ্তহিক বেগম বর্তমানে মাসিক পত্রিকা হিসাবে কোনমতে টিকে আছে। 

সহপাঠি বন্ধু মুশফিক বাবুদের বাসায় রাখা হতো দৈনিক বাংলা। দৈনিক বাংলায় রনবী’র টোকাই নামে ধারবাহিক কার্টুন চিত্র ছাপা হতো। টোকাই ছিলো শিল্পী রফিকুন নবীর এক অসাধারণ সৃষ্টি। টোকাই কার্টুন দেখার জন্য প্রতিদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। তাই এক ফাঁকে বাবুদের বাসায় ঢু মারতাম। রনবী’র আঁকা টোকাই কার্টুনগুলো ছিলো খুবই হাস্যরসাত্মক পূর্ণ। শিল্পী রফিকুন নবী ওরফে রনবী’র টোকাই ছিলো একজন কিশোর, তার বসবাস ছিলো ফুটপাতে, পরনে থাকতো পুরোনো ছেড়া, ময়লা, ঢোলা ও হাটুর নীচ পর্যন্ত লম্বা একটি জামা।  সে ডাস্টবিনের আবর্জনা থেকে ফেলে দেওয়া বাতিল জিনিস টোকাত। তাই রনবী তার নাম দিয়েছিলেন টোকাই। ফুটপাতের এই  কিশোর টোকাই এর মুখ দিয়ে শিল্পী রফিকুন নবী সমাজের অসংগতিগুলো পাঠকের মাঝে তুলে ধরতেন। টোকাই কার্টুন পড়ে পাঠকরা নির্মল আনন্দ পেতেন।  সে সময়কার কয়েকটি কার্টুনের কথা এখনো মনে পড়ে। এখন যেমন সড়কগুলো বিভিন্ন কারণে বার বার খোঁড়া হয় ঠিক তেমনি চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগেও কম বেশী একইভাবে সড়কগুলো প্রায়ই খোঁড়া হতো।  একারণে রনবী একটি কার্টুন চিত্র আঁকেন।  কার্টুন চিত্রে দেখা যায় একটি গুরুত্বপুর্ণ সড়ক খোড়া হচ্ছে যেখানে সাইনবোর্ডে লেখা ‘টিঅ্যান্ডটি লাইন স্থাপনের কাজ চলিতেছে’।  টোকাইর বন্ধু এ অবস্থা দেখে টোকাই কে জিজ্ঞাসা করলো ‘এই রাস্তাডাতো মাত্র কয়েক মাস আগে পাকা করলো,  এখন আবার দেখতাছি টিঅ্যান্ডটি লাইন বসানোর কথা কইয়া নতুন রাস্তাডারে আবার খোড়তাছে, এক বারেইতো কামডা করতে পারতো বার বার না খুইড়া’। বন্ধুর কথা শুনে টোকাই উত্তর দেয় ‘আরে বোকা, হেরা কি কম বুঝে, একবারে যদি ওয়াসা, বিদ্যুৎ, টেলিফোন সহ সব কাজ কইরা ফালায় তাইলে কি আর হেগো কামাই হইবো? যতবার খুড়বো ততবার কামাইতে পারবো, তাই হেরা একবারে কাম শেষ করে না, বার বার করে আর বার বার খোঁড়া খুঁড়ি করে’।  

দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত রনবী’র আরেকটি কার্টুনের কথা মনে পড়ে। কর্টুনটি ছিলো খেলা নিয়ে। আশি দশকের শেষ দিকে এশিয়ান কাপ হকিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে ১৭-০ গোলে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। তখন রনবী’র চিত্রিত টোকাই কার্টুনটি ছিলো নিম্নরূপ-
 
খবর : এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ ১৭-০ গোলে পরাজিত। খবরটি দেখে টোকাই মন্তব্য করছে ‘বহির্বিশ্বে দেশকে পরিচিত করার এর চেয়ে আর সহজ পথ কোথায়।’

দৈনিক বাংলা ১৯৬৪ সালের ৬ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক বাংলার নাম ছিলো দৈনিক পাকিস্তান। ১৯৭৫ সালে দৈনিকটি জাতীয়করণ করা হয়েছিলো। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দৈনিক বাংলার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পঁচিশ বছর পর ২০২২ সালে একই নামে ভিন্ন একটি পত্রিকা বের করা হলেও তা পাঠক মহলে মোটেও সাড়া ফেলতে পারেনি। 

সত্তর দশকে আরো কয়েকটি বাংলা দৈনিক দেখা যেতো, তাদের মধ্যে সংবাদ, সংগ্রাম, আজাদ, বাংলার বাণী ছিলো উল্লেখযোগ্য। 

ইংরেজি দৈনিক ছিলো দ্যা বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস, নিউ নেশন ইত্যাদি সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিলো বিচিত্রা, রোববার, চিত্রালী’র মতো ম্যাগাজিনগুলো। 

তখন শিশু কিশোরদের জন্যও পত্রিকা প্রকাশিত হতো। সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা ছিলো শিশু কিশোরদের জন্য দারুণ এক জনপ্রিয় পত্রিকা। শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত হতো মাসিক শিশু। বাংলা একাডেমি থেকে বের হতো ত্রৈমাসিক ধান শালিকের দেশ। কিশোর বাংলা, শিশু ও ধান শালিকের দেশে লিখে পরবর্তীতে দেশের নাম করা লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ছড়াকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকেই। শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, আবু সালেহ, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, সুকুমার বড়ুয়া, আহমাদ উল্লাহ, আমীরুল ইসলাম, আনজীর লিটন, ওয়াসিফ-এ-খোদা,  সাংবাদিক ও ছড়াকার ওবায়দুল গনি চন্দন প্রমুখ তাদের অন্যতম।  

১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় ক্রীড়া বিষয়ক পাক্ষিক পত্রিকা ক্রীড়া জগত। মাহমুদ হোসেন খান দুলালের সম্পদনায় আজও পত্রিকাটি টিকে আছে। 

সত্তর দশকের শেষ দিকে ১৯৭৮ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় মাসিক রম্য পত্রিকা উন্মাদ। মাসিক উন্মাদ পাঠক মহলে ব্যাপক আলোড়ন জাগায়। এর সম্পদাককে উন্মাদক হিসেবে অভিহিত করা হয়। উন্মাদের প্রতিষ্ঠাতা ইশতিয়াক হোসেন, কাজী খালিদ আশরাফ ও সাইফুল হক হলেও এর বর্তমান উন্মাদক মানে সম্পদক কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব।  

সে সময় দৈনিক পত্রিকার দাম ছিলো পঞ্চাশ কিংবা ষাট পয়সা। ১৯৮২ সালে ট্যাবলয়েড সাইজ কিশোর বাংলা এক টাকায় পাওয়া যেতো। আশির দশকেও পাঠকদের কাছে সংবাদপত্র খুবই সমাদৃত ছিলো। মফস্বল শহর ও গ্রামে দেখেছি দুই-তিন দিনের পুরোনো দৈনিক পত্রিকাও পাঠক আগ্রহভরে পড়তেন। ডাকযোগে সেখানে দৈনিক পত্রিকা পৌঁছাত এক/দুই দিন পর। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় আশির দশক ছিলো বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বর্ণ যুগ। এ সময়টাতে মুদ্রণ শিল্পের কারিগরী উন্নতিও লক্ষ্য করা যায়। কম্পিউটারের কল্যাণে ম্যানুয়াল লেটার কম্পোজের সাথে কম্পিউটার ওয়ার্ড কম্পোজ প্রযুক্তি যুক্ত হয়। ফটোকম্পোজ প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে ছাপার মানেরও বিপুল উন্নতি সাধিত হয়।   নতুন দৈনিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব, খবর, জনতা, দিনকাল সহ আরো কয়েকটি দৈনিক।  

সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে ১৯৮৪ সালে আভির্ভুত হয় সাপ্তাহিক যায় যায় দিন। শফিক রেহমান সম্পাদিত সম্পাদিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন সাংবাদিকতার ধারা বদলে দেয়।  শফিক রেহমানের ‘দিনের পর দিন’ কলাম পড়ার জন্য পাঠকরা সপ্তাহজুড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। মিলা ও মইনের কথোপথন পাঠকের কাছে দারুণ উপভোগ্য ছিলো। সাইদুর রহমানের কলাম শতাব্দীর স্মৃতি পড়ে পাঠক সমৃদ্ধ হতেন। যায়যায়দিনের প্রতিটি কাভার স্টোরি ছিলো ব্যতিক্রম। প্রচ্ছদ পরিকল্পনাতেও ছিলো ভিন্নতা। যায়যায়দিনের প্রতিটি কভার স্টোরি তৎকালীন সামরিক শাষক জেনারেল এরশাদের ক্ষমতার ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো।  মনে পড়ে ছিয়াশির বিতর্কিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। নির্বাচনের পরে ৩০ মহিলা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন নিয়ে যায়যায়দিন ‘ত্রিশ সেট অলংকার’ নামে এক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জেনারেল এরশাদের রোষানলে পড়ে শফিক রেহমান একাধিকবার কারাবরণ করেন। তিনি সে সময় দেশ ছাড়াও হন। যায়যায়দিনকে অনুসরণ করে সে সময় আরো কিছু সাপ্তাহিক প্রকশিত হয়। খবরের কাগজ, বিচিন্তা, সুগন্ধা, নগরী তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। 

যায়যায়দিন ছিলো একটি রাজনৈতিক পত্রিকা। রসকসহীন রাজনীতিকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক পত্রিকা কতটা পাঠকপ্রিয়তা পেতে পারে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। 
আশির দশকে ৮৬ সালে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে পূর্ণিমা আত্মপ্রকাশ করে। এ ছাড়া অনেকগুলো বিনোদনমূলক সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকা আশি দশকের বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। চিত্রবাংলা, নিপুন, তারকালোক তাদের মধ্যে অন্যতম।

নব্বই দশকেও অনেকগুলো নতুন দৈনিক ও সাপ্তাহিক বাজারে আসে। নাইমুল ইসলাম খান সম্পাদিত দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ, আতিক উল্লাহ খান মাসুদের জনকণ্ঠ, মতিউর রহমান চৌধুরী সম্পদিত বাংলা বাজার, মতিউর রহমান সম্পাদিত প্রথম আলো পত্রিকাগুলোর কথা আমাদের জানা। 

ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার এস এম আলীর সম্পদনায় ১৯৯১ সালের ১৪ জানুয়ারি বাজারে আসে। ইংরেজি দৈনিক হিসেবে ডেইলি স্টার শুরু থেকেই পাঠকপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে মাহফুজ আনামের সম্পাদনায়  পত্রিকাটি ইংরেজি পত্রিকার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৯৮ সালে সাপ্তাহিক হিসেবে শাহাদাত চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক ২০০০ পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়।
 
একবিংশ শতাব্দী বাংলাদেশে কাগুজে সংবাদপত্রের জন্য সুখকর নয়। দৈনিক আমার দেশ, সমকাল, যুগান্তর, আমাদের সময়, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মতো অনেকগুলো পত্রিকা একবিংশ শতাব্দীতে আমরা দেখতে পাই। এ সময় প্রকাশিত অনেকগুলো পত্রিকা করপোরেট মালিকানাধীন হওয়ায় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। এদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ পাওয়া যায়।  

এ সময়টাতে বহু অনলাইনভিত্তিক নিউজপোর্টাল তৈরি হয়। বাংলাদেশে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অনলাইন সংবাদ জগতের পুরোধা। এখন সংবাদের জন্য পাঠকদের পরের দিন প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার জন্য আর অপেক্ষা করতে হয় না। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে পাঠকগণ মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের সংবাদ পেয়ে যান।  এখন খবর প্রকাশের বহু মাধ্যম হয়েছে। টেলিভিশন, স্যাটেলাইট চ্যানেল ও অনলাইনে এখন চব্বিশ ঘণ্টা সংবাদ দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমেও খবর শেয়ার করা হয়। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স সহ নানা মাধমে মানুষ প্রতি মুহূর্তে যে কোনো সংবাদ ও ঘটনার কথা জানতে পারেন। যে কোন সংবাদ এখন লাইভ প্রচার করতে দেখা যায়। 

কাগুজে পত্রিকাগুলো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ বের করছে। তাই পাঠক আগের মতো আর সংবাদপত্র পড়ে না। সংবাদপত্র বিক্রয়কেন্দ্রে পাঠকদের ভীড় আর নেই। এক সময় দেয়ালে সাঁটানো পত্রিকা পড়ার জন্যও পাঠকরা লাইন ধরতেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পত্রিকা পড়ার জন্য শিক্ষার্থী পাঠকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। 

এখন আর এ সকল চিত্র নেই। সংবাদপত্র বিক্রয়কেন্দ্রও খুঁজে পাওয়া যায় না, পাড়া মহল্লায় পত্রিকা হকারদেরও দেখা যায় না। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এর কিছু ব্যতিক্রমও পাঠকদের চোখে পড়েছে। দৈনিক আমার দেশ, সমকাল ও যুগান্তর পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আমার দেশ পুরোনো জনপ্রিয় দৈনিকগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে সমানতালে টিকে আছে। একজন বিচারপতির সাথে স্কাইপ কথোপোথন প্রকাশ করার জন্য ২০১০ সালে আওয়মী লীগ সরকার আমার দেশ প্রথমবার বন্ধ করে। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল পুনরায় পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ দৈনিক আমার দেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। মাহমুদুর রহমানের সম্পাদনায় দৈনিক আমার দেশ গত কিছু দিনে অনেকগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছে যা পাঠক মহলে প্রশংসা পেয়েছে।
  
পচিশ ত্রিশ বছর আগে যেমন পাঠক পত্রিকা পড়ায় আগ্রহী ছিলেন এখন সে আগ্রহ চলে এসেছে মানুষের মুঠোফোনের মাঝে। খবরের জন্যই হোক আর অন্য কোনো নেশার জন্যই হোক সবাই এখন বুঁদ হয়ে থাকেন তাদের হাতে থাকা ছয় ইঞ্চি স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে। এক কথায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র শিল্প যেন হারিয়ে গেছে অনলাইন আর ই-পেপারের মাঝে। কাগজের সংবাদ পড়ার জন্য সত্তর আশি দশকের মতো পাঠকদের আগ্রহ এখন আর নেই বললেই চলে।প্রযুক্তির উন্নতিই কি কাগজের সংবাদপত্রের এমন বেহাল দশার কারন?  এমন প্রশ্ন এসেই যায়।  

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, ঢাকা।  
 
অঅজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
রেললাইনের পাশে আওয়ামী লীগ নেতার মাথা কাটা লাশ উদ্ধার
বেবিচক চেয়ারম্যানের সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত
অবশেষে মারা গেলেন জবি শিক্ষার্থী আহাদ
সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ : রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
পূর্বধলায় ডেভিল হান্টের অভিযানে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
তিস্তা অঞ্চলগত সমস্যা নয়, এটি একটি জাতিগত সমস্যা: গয়েশ্বর রায়
শেখ হাসিনার সামরিক সচিবকে পুলিশে দিলো ছাত্র-জনতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ
মশাল হাতে তিস্তাপারে ন্যায্য হিস্যা চাইলেন আন্দোলনকারীরা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft