বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের নতুন কমিটি গঠন, আহ্বায়ক মেঘ সচিব জিয়ান
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৮ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাংস্কৃতিক জোটের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক পরাক্রম ও স্বকীয়তা রক্ষায় অপারগতা, নির্বাচনের সময় নির্দিষ্ট প্রার্থীদের ট্যাগিং করে তাদের নামে অপপ্রচার, গঠণতন্ত্রের লঙ্ঘন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রামে নিরবতা, অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়া সহ নানা অভিযোগ এনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জোটভুক্ত দুটি সংগঠন। অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর জোটের নতুন আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়। 

কমিটিতে পরিবেশ বিজ্ঞান ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘকে আহ্বায়ক (জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, টি এস সি এর প্রতিনিধি), বাংলা বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবাইর ইসলাম জিয়ানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। 

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন সাংস্কৃতিক জোটের সদ্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না। এসময় জোটভুক্ত সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার ও চিরকুটের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে জোটের অচলাবস্থা ও বিভিন্ন দুরাচারের বিষয়ে একটি লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার টিএসসির সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদা মেহের আফরোজ শাওলি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট তার ঐতিহাসিক পরাক্রম ও স্বকীয়তা রক্ষায় অপারগ হয়েছে। গত এক কার্যকরী বছরে আমরা দেখেছি সকল জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত রাজনীতিতে তাদের নিষ্প্রভতা। কেবল তাই ই নয়, এই নিশ্চুপতা ছাপিয়ে সামনে এসেছে তাদের জনবিচ্ছিন্নতা। আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা বিশ্বাস করি জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সকল কর্মক্ষমতা বিনষ্ট করা হয়েছে।

‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের এই অনাচার প্রকট হয় গত নির্বাচন থেকেই। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে যে প্রহসন পূর্ববর্তী কার্যকরী কমিটি করে গেছে তা আদতে মাইলফলক হয়ে থাকবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়নধারী দুই সংগঠনের কর্তাব্যক্তির নামে গুপ্ত রাজনীতির প্রমাণবিহীন অপপ্রচার করে একটি নির্দিষ্ট পক্ষ ও ব্যক্তিবিশেষ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, স্বতন্ত্রতা ও নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করে। উল্লেখ্য নির্বাচনে কিছু প্রার্থীকে ঘিরে তাদের নামে অপপ্রচার চালানোর নজির এই প্রথম নয়। ১লা এপ্রিল, ২০২২ এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একই অভিযোগে চলচ্চিত্র আন্দোলন সাংস্কৃতিক জোট থেকে সরে দাঁড়ায় ও বিবৃতিতে উল্লেখ করে, ‘নির্বাচন শুরুর আগে চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রার্থী, সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ক্যাম্পাসের অপরাপর অ্যাক্টিভিস্টদের নামে নানা ধরনের অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ এনে নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’করার চেষ্টা করেন জোটের সাবেক ও বর্তমান কিছু নেতৃবৃন্দ’। এবং লক্ষণীয় এই যে, দুবারই নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পরে অনুষ্ঠিত হয়। এই বিলম্বিত সময়ে চলে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর নামে মিথ্যে কুৎসা রটিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা।’

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একটি লিখিত গঠনতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও, তার চরম অবমাননা ও অবমূল্যায়ন আমরা দেখতে পাই। সাধারণ সভার ক্ষেত্রে অর্ধেক সদস্যদের উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ হবে। কার্যনির্বাহী পর্ষদের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ হতে হবে, প্রতিমাসে অন্তত দুইবার কার্যনির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ও প্রতি দুই মাসে একবার সাধারণ সভা আয়োজন করতে হবে। বিগত কার্যকরী বছরে আমরা কোনো কার্যকরী সভার হদিস দেখতে পাইনি। অপরদিকে কেবল চারটি জরুরি সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়।

গঠনতন্ত্র অনুসারে ‘সভার যে কোনো সদস্য সাধারণ সভায় যে কোনো এজেন্ডা উপস্থাপন করতে পারবেন’। অথচ, চারটি জরুরি সাধারণ সভার শেষেরটিতে সদস্যদের কাছ থেকে কোনো এজেন্ডা গ্রহণ না করে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষামূলক এজেন্ডা প্রদান করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

জোটের বিদ্যমান কার্যনির্বাহী পর্ষদ পরবর্তী কার্যনির্বাহী পর্ষদ গঠনের জন্য তাদের মেয়াদ থাকাকালীন সময়েই নির্বাচনের ব্যবস্থার কথা থাকলেও কার্যকরী পর্ষদে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর ছ মাস তিন দিন পরেও নির্বাচনের ব্যবস্থা তারা করছে না। 

এতে আরও বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই নিপীড়ন বিরোধী চেতনাকে ধারণ করে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট যেকোনো নিপীড়ন ও ছাত্র স্বার্থ বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভবিষ্যতে তার কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখবে’। তবুও বিগত কার্যকরী বছরে জোটের পক্ষ থেকে তেমন কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মতৎপরতা দেখা যায় নি। ধর্ষক ও নিপীড়কদের বিচার চাওয়ার লক্ষ্যে তৈরি শিক্ষক- শিক্ষার্থী প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’তে প্রথমে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরবর্তীতে সেখান থেকে সরে দাঁড়ায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। পরবর্তীতে কোটা সংস্কার ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ব্যক্তিগতভাবে জোটের কিছু মানুষের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও সম্মিলিত শক্তি হিসেবে জোটের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ট্যাগিংয়ের অভিযোগ এনে বলা হয়, জোটভুক্ত সদস্য সংগঠনগুলোর সাথে ন্যূনতম যোগাযোগ রাখার কাজটিও ব্যাহত হয়েছে। এমনকি কিছু দুর্বৃত্ত যখন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (টি এস সি), ধ্বনি, জলসিড়ি সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের নামে উড়োচিঠির মাধ্যমে গুপ্ত শিবির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অপপ্রচার চালায় তখনও জোট নিশ্চুপ পুতুলের ভূমিকা পালন করে এবং উক্ত সংগঠনগুলোকে কিছু জানায় না। পরবর্তীতে এই উড়োচিঠির জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটোরিয়াম) এর তৎকালীন (বর্তমানে নারী নিপীড়নের অভিযোগে তদন্তাধীন) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (টি এস সি) র তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম মেঘের নামে গুপ্তরাজনীতির ‘ট্যাগ’ দেবার অপচেষ্টা চালায়। তাকে (জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার অডিটোরিয়ামের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক) জোটের সভাপতির উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এক পর্যায়ে দায় স্বীকার করে নেয় ও আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে তার সংগঠন থেকে ক্ষমা চাইবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরবর্তীতে তা ভঙ্গ করে। এমতাবস্থায় জোটের সভাপতিকে বারংবার জিজ্ঞাসার পরও আমরা কেবল জোটের সভাপতির নিরবতাই দেখতে পাই। 

সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহানের বিরুদ্ধে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অভিযোগ এনে বলা হয়, তিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটরিয়াম) এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার কারণ হল তার পূর্ববর্তী সাধারণ সম্পাদকের সাময়িক অব্যাহতি। কেননা তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় দায়ের হয়েছে একটি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, চন্দন সোমাদ্দার সোম ভুক্তভোগীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছে, আঙ্গুল ভেঙে দিয়েছে, মাটিতে ফেলে বুকের ওপর বসে গলা চেপে ধরেছিল। কান ফাটানো, আঙ্গুল ভাঙার ছবি ও প্রেসক্রিপশনের কিছু ছবি প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের কাছে এসেছে। তার সাথে ছিল অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান। এই নির্যাতন এর কথা সভাপতির উপস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (অডিটোরিয়াম) এর কাছে উত্থাপন করা হলে সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক জানান এটি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এটাকে অত্যাচার বলা যায় না। একজন নারী হয়ে অন্য আরেকজন নারীর ওপর হয়ে যাওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে নিজ সংগঠনের স্বার্থে ধামাচাপা দেয়ার এই প্রবণতা একটি দিকেই নির্দেশ করে, তার পিতৃতান্ত্রিক ও মিসোজিনিস্ট মনোভাবের দিকে। এই মন্তব্যের সাথে সাথে তিনি নিপীড়নবিরোধী মন্ত্রে চলা সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল থাকার অধিকার হারিয়েছেন।

নতুন কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, আগামীদিনে সাংস্কৃতিক জোটের হারানো ঐতিহ্য ও জৌলুস ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। এই কমিটি আগামী ৩০ কার্যদিবসের মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে জোটে আহ্বান করার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে স্বচ্ছ ও ন্যায়ভিত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করবেন।

আজকালের খবর/বিএস 








সর্বশেষ সংবাদ
খুলনায় মুখোমুখি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি
রাষ্ট্রক্ষমতার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করেন: মির্জা ফখরুল
জীবনের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে, নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মোস্তাফিজুর
ভিসির পদত্যাগসহ ৫ দফা না মানলে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের আল্টিমেটাম
মশাল হাতে তিস্তাপারে ন্যায্য হিস্যা চাইলেন আন্দোলনকারীরা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বইমেলায় তারেক রহমানের বই ‘সবার আগে বাংলাদেশ’
বইমেলায় আসছে উস্তাদ হাসান আলী খান স্মারকগ্রন্থ
তিস্তা বাঁচাতে উত্তরের পাঁচ জেলায় কর্মসূচি, পদযাত্রায় জনস্রোত
জবি ডিবেটিং সোসাইটির নেতৃত্বে মুবাশ্বির- মেহেদী
জবিতে কক্সবাজার জেলা ছাত্রকল্যাণের নবীণ বরণ অনুষ্ঠিত
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft