
আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। নববর্ষের উৎসব আসে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। এমন সর্বজনীন উৎসব আর একটিও নেই। নানা মাত্রায় এটি সারাদেশে পালিত হয়। যা কিছু পুরোনো, যা কিছু জীর্ণ, তা পেছনে রেখে নতুনকে আমরা বরণ করি। আমরা নতুন করে শুরু করি। প্রকৃতিও নবরূপে সাজে। সবকিছু যেন আরও সবুজ হয়ে ওঠে। গাছে গাছে নতুন পাতা, ফুলের সমারোহ আর পাখির কণ্ঠে গান যেন উৎসবে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। এ এক অন্য রকম অনুভূতি।
বৈশাখ আসার আগেই এবার চারদিকে কাঠ ফাটা রোদ ও ভ্যাপসা গরম। তারপরও বাঙালির বাঙালিয়ানায় কোনো কমতি নেই এ দিনটিতে।
বাঙালির এই উৎসব চিরন্তন। সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে পহেলা বৈশাখ হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রাণের উৎসব। এবার একই সঙ্গে এসেছে রমজান ও পহেলা বৈশাখ। একদিকে সংযম অন্যদিকে আনন্দ। পহেলা বৈশাখের মাত্র কয়েকদিন পরই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। তাই এবার উদযাপনের ক্ষেত্রে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ যেন অনেকটা একাকার। বৈশাখের এই রঙিন উৎসব ছড়িয়ে পড়ুক ঈদেও।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইতিহাসের চৌকাঠে পা দিলে যেটা উঠে আসবে তা হলো- একসময় বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ বলতে কিছুই ছিল না। প্রথমে ‘ফসলি সন’ আর পরে ‘বাংলা বর্ষ’ নামে বঙ্গাব্দ শুরু হয় মোগল সম্রাট আকবরের আমলে। তারই নির্দেশে তৎকালীন মশহুর জ্যোতির্বিজ্ঞানী বাংলাভাষী ফতেউললাহ সিরাজি প্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করেন। তিনি এটি করেছিলেন সৌর সাল আর তখনকার সময়ে প্রচলিত হিজরি সনের ভিত্তিতে। হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে খাজনা আদায় করার রীতি ছিল তখন। সম্রাট যখন দেখলেন চাঁদের ভিত্তিতে হিসাব করা হিজরি সনের কারণে ফসলের মৌসুমভিত্তিক খাজনা আদায়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়, তখনই তিনি নতুন কিছু করার চিন্তা করেন। এ চিন্তারই ফসল বাংলা বর্ষ।
রমজানের মধ্যেও সারা দেশেই নানা আয়োজনে পালিত হবে বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সরকারও জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রতিবারের মতো এবারও পহেলা বৈশাখের প্রভাতী আয়োজনের সূচনা হবে রাজধানীর রমনার বটমূলে। ছায়ানটের বর্ষবরণের এই আয়োজন শুরু হবে সকাল সোয়া ৬টায়, চলবে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে সকাল ৯টায়। এ বছর এর প্রতিপাদ্য ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।’ বিশ্বজুড়ে যে হিংসা, হানাহানি, যুদ্ধ চলছে, তা থেকে পরিত্রাণ ও শান্তির প্রত্যাশা থাকবে এতে। চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে ফের চারুকলায় ফিরবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের বাধ্যবাধ্যকতা দেওয়া হলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আলোচনা সভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
এছাড়া সরকারিভাবে সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী শোভাযাত্রা আয়োজন করা হবে। রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।
আজকালের খবর/বিএস