রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত চায়না টাউন মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগে মার্কেটটি বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার দায়ে ১৭ জনকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে শপিং মলের ক্রেতা- বিক্রেতাদের বিভিন্ন অংকে জরিমানা করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ভ্রাম্যমান আদালত। মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা কিংবা সঠিক নিয়মে মাস্ক না পরার কারণেই এসব ব্যক্তিকে জরিমানা গুনতে হয়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, মাস্ক নিশ্চিত না করলে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, তারই অংশ হিসেবে চায়না মার্কেট বন্ধ করা হলো। অন্য কোনো মার্কেটও যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে। এদিকে চায়না টাউন মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মার্কেটে আসা অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল না। এমনকি দোকানদারদের মুখেও মাস্ক ছিল না। মার্কেটের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল না। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ লেখা ব্যানার ছিল না। এর আগে গত সোমবার জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার থেকে নো মাস্ক নো সার্ভিস। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার দায়ে ১৭ জনকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল হক বলেন, ১৭ জনকে বিভিন্ন অংকে মোট সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা রিয়াদ নামের এক ব্যক্তিকে মাস্ক না পরায় ৫০০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত।
রিয়াদ বলেন, মাস্ক ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে খুলে গিয়েছিল। টাকার অংকটা যদিও বেশি, তবুও আমার মনে হয় ম্যাজিস্ট্রেট যা ভালো মনে করেছেন, তাই ঠিক আছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। শপিং মলের দ্বিতীয় তলায় ইমরান ফ্যাশন নামের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মী আলী আসগরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। তিনি জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে খানিকক্ষণের জন্য মাস্ক খুলে রেখেছিলেন। দ্বিতীয় তলায় রোকসানা নামের একজন ক্রেতাকে সঠিক নিয়মে মাস্ক না পরায় ২০০ টাকা জরিমানা করা হলে তিনি জানান, গরমে নিঃশ্বাস নিতে না পারায় মাস্ক নীচে নামিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এদিকে অভিযান চলাকালীন একটু পর পরই বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা যায়।
অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল হক সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সবার জন্য আবশ্যক। শপিং মলের বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয় পক্ষকেই মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। বিক্রেতারা মাস্ক ছাড়াই দোকানে কাজ করছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে রফিকুল হক বলেন, এতে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়পক্ষকেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে শপিং মল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলাকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের প্রশাসনিক বিভাগের সিনিয়র অফিসার আবদুল্লাহ বলেন, সোমবার রাতের ঝড়ের পর থেকে এই সমস্যা হচ্ছে। নিজস্ব জেনারেটরেও কিছু সমস্যা রয়েছে। এজন্য শপিং মলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এটি সমাধানে কাজ চলছে।
এদিকে দিন যতোই যাচ্ছে ততোই জমে উঠছে রাজধানীতে ঈদ কেনাকাটা। সকাল থেকে ক্রেতাদের ভিড় নিউমার্কেট, গাউসিয়া চাঁদনিচকসহ সব শপিংমলে। করোনার সময়ে বাড়তি ভিড় এড়াতে অনেকেই সকাল সকাল কেনাকাটা করছেন। সকালে কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাসমাগম বাড়তে থাকে। শিশু ও মেয়েদের কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেশি লক্ষ করা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, করোনার এ সময়ে অর্থ সংকটে আছেন অনেকে। তবু পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করছেন তারা।
শেষদিকে শপিংমল খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানোর দাবি বিক্রেতাদের। বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় বিক্রি কম। তাই দোকান খোলা রাখার সময় বাড়ানোর কথা জানান তারা। এদিকে গণপরিবহন খোলা থাকলে বিক্রি আরো বাড়ার প্রত্যাশার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। শেষ দিকে বিক্রি বাড়লে লকডাউনে বন্ধ থাকার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা। এনএমএস