শিরোনাম: |
প্রিন্ট সংস্করণ
গণপরিবহন চালু:
কমেছে ভিড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সদরঘাট, গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, রামপুরা, মহাখালি ও বনানী এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গতকাল সকাল থেকে নগরীতে গণপরিবহন চলায় একদিকে যেমন ভোগান্তি কমেছে অন্যদিকে স্বস্তি ফিরেছে অফিসগামী যাত্রীদের মধ্যে। গতকাল ভোর থেকেই সড়কে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনের পাশাপাশি প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা চলাচল করে। অফিসগামী মানুষ সকাল থেকেই তাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে গণপরিবহনের ব্যবস্থা দেখে খুব খুশি হয়েছেন তারা। লকডাউন ঘোষণার দুইদিন পর গণপরিবহন চালু হওয়ায় দুর্ভোগ কমেছে অফিসগামী যাত্রীদের। স্বাস্থ্যসুরক্ষা মানতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন এবং ৬০ শতাংশ ভাড়াও কার্যকর রয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে এমন চিত্র ছিল নগরের পরিবহনগুলোতে। গণপরিবহন চালু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। মৌমিতা জান্নাত নামে এক যাত্রী বলেন, ভাড়া বেশি হলেও অন্তত কোনো কাজে বাসা থেকে বের হলে গণপরিবহন পাওয়া যাচ্ছে। এটা স্বস্তির বিষয়। পরিবহন বন্ধ থাকলে কিছুই করা যায় না। রবিউল ইসলাম নামে অফিসগামী এক যাত্রী বলেন, অবশেষে কষ্টের অবসান হলো। গত দুইদিন অফিসের উদ্দেশে বের হয়ে অনেকটা যুদ্ধে নামতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। মোসাররফ হোসেন নামে অন্য এক যাত্রী জানান, নিষেধাজ্ঞার শুরুতে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আমাদের। অফিস খোলা কিন্তু পরিবহন চলাচল করছে না। এমন কোনো নিয়ম হতে পারে বলেন। গত দুইদিন অফিসে যেতে দেরি হয়ে গেছে। বাস নেই তাই রিকশা বা সিএনজিতে অধিক ভাড়া দিয়ে যেতে হয়েছে। আজ থেকে গণপরিবহন চলাচল করায় কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমেছে। ওপর এক যাত্রী বলেন, বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। তারপরেও আমাদের শান্তি , কারণ বাস চলায় একটু দেরি হলেও বাসে যেতে পারছি নয়তো রিকশা ভাড়া দিতে দিতে পকেট খালি হয়ে যেতো। সকাল থেকেই দেখা গেছে, সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী আর ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিয়েই চলাচল করছে। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়নে গত ৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে লকডাউন শুরু হয়। নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই রাজধানীতে ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন পালিত হতে দেখা যায়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন। তবে কেউ কেউ বলছে গণপরিবহন মালিকদের চাপে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমন মন্তব্য ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়। জনগণের দাবির মুখে জনস্বার্থে দুর্ভোগ কমাতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। এ সময় দূর পাল্লার বাস চালুর বিষয়ে সরকারের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দুই একদিনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস চালুর ব্যাপারে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা মোটেও সত্য নয়। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। গত ৩১ মার্চ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য কার্যকর হয়েছে এই বর্ধিত ভাড়া। কথা ছিল, গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। একই সঙ্গে যাত্রীদের সবাইকে শতভাগ মাস্ক পরিধান করতে হবে। আবার প্রত্যেক গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেলপার বলেন, লোকজন তাদের কথা শুনছে না। তারা দ্রুত অফিসে বা গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ভিড় করে উঠছেন। এতে আমাদের করার কী আছে। তিনি বলেন, স্বাস্থবিধির বিষয়টি সবাইকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানার চেষ্টা করা দরকার। এরপরও গাড়িতে অর্ধেকের বেশি যাত্রী উঠতে যাতে না পারে বিষয়টি আমরা দেখছি। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ক সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বুধবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। এনএমএস। |