শিরোনাম: |
ভ্যাট ফাঁকি: অব্যাহতি চেয়ে ঢাকা ক্লাবের আবেদন নাকচ
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() সাত বছরে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ঢাকা ক্লাবের কাছে ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে রাজস্ব বোর্ড। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের পক্ষ থেকে বকেয়া বা ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের টাকা থেকে অব্যাহতি চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। যা পর্যালোচনা শেষে গত ২৯ মার্চ তাদের আবেদন নাকচ করে এনবিআর। বিষয়টি নাকচ করে ঢাকা ক্লাবকে একটি চিঠিও দেয় রাজস্ব বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটির মূসক আইন ও বিধি শাখার দ্বিতীয় সচিব কাজী রেজাউল হাসান সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বুধবার (৭ এপ্রিল) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) সৈয়দ মু’মেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা ক্লাবের পক্ষ থেকে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শক্তি অব্যাহতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে তাদের চিঠি পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল্য সংযোজন কর বাবদ সরকারি পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা এবং ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবাবদ সাত কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকা। মোট ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকার দাবিনামা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষ মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক প্রদানের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ৫৬ ধারায় সবধরনের কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছে। ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর আইন অনুযায়ী দাবিনামা জারির পাওনা স্থগিত করার সুযোগ নেই। সে কারণে এনবিআর এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে। এর আগে প্রায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আদায়ে এনবিআর থেকে চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করে দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। এমনকি সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত দাবিনামায় ফাঁকির অর্থ আদায়ে ঢাকা ক্লাবের যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা বলা হয়েছিল। ২০১৭ সালে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্তে উদঘাটিত হয়, রাজধানীর অভিজাত ঢাকা ক্লাবের এমন রাজস্ব ফাঁকির তথ্য। সংস্থাটির তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিস ওই বছরের ১৩ জুলাই প্রথম দাবিনামা জারি করে। যদিও ভ্যাট গোয়েন্দা তদন্তে সুদসহ মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার রাজস্ব আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, যা ঢাকা ক্লাব ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সমঝোতায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা নির্ধারিত হয়। দীর্ঘদিনের অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি জানতে সবশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যাট গোয়েন্দা থেকে তাগিদপত্র দেওয়া হয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই প্রথম দাবিনামা ইস্যু করে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এরপর বিভিন্ন সময়ে ১০ বার দাবিনামা জারি করলেও ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধ করেনি অভিজাত এ ক্লাবটি। এর মধ্যে পাঁচবার সময় চেয়ে আবেদন করেও শেষ পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিসের দাবি অনুযায়ী, ক্লাবটির অডিট রিপোর্ট যাচাই করে ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত মূসক বাবদ মোট পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা। এর মধ্যে সেবা বিক্রি খাতে সুদসহ আদায়যোগ্য সম্পূরক শুল্ক এবং সুদসহ উৎসে মূসক বাবদ পাওনা সাত কোটি ১০ লাখ পাঁচ হাজার ২৫৮ টাকা, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্টে বিভিন্ন সেবা কেনার বিপরীতে সুদসহ কর্তনযোগ্য ভ্যাট ৫২ লাখ ৫১ হাজার ২৪১ টাকা ও নিরীক্ষা মেয়াদে স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণ খাতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে অপরিশোধিত মূসক বাবদ পাওনা এক লাখ দুই হাজার ১০৪ টাকা। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমাদের আইন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আইনগতভাবেই ওই দাবিনামা ইস্যু করা হয়েছে।’ এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ক্লাব লিমিটেডে সারা বছরই সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যাতায়াত থাকায় বিভিন্ন ধরনের সেবা বিক্রিও ভালো হয়। ক্লাবটির প্রধান আয় আসে বার থেকে। এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি করা হয়। এছাড়া বুকিং চার্জ, সার্ভিস চার্জ, ভাড়া, বেকারি পণ্য বিক্রি, বিউটি পার্লার, গেস্ট হাউজ ভাড়া, হেলথ সার্ভিস, কার্ড রুম, লন্ড্রি সার্ভিসসহ বিভিন্ন খাত থেকেও আয় করে ঢাকা ক্লাব। আজকালের খবর/আতে |