২৬ ও ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় আরো ছয়টি মামলা হয়েছে। আগের মামলাগুলোর মতো এগুলোতেও হেফাজতের নেতাদের নাম না থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে সমালোচনা।
এর আগের করা ৩৯ টি মামলাতেও তাণ্ডবে জড়িত সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশকে।
এসব মামলায় আসামি ৩০ হাজারের বেশি। এসব মামলায় এখন পর্ন্ত ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ হেফাজতের কর্মী নেই। মঙ্গলবার সব শেষ মামলাগুলো হয়।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, গত ২৬ ও ২৮ মার্চ ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির ওই তাণ্ডবের পর শুধু সদর মডেল থানায় ৪০টি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া আশুগঞ্জ থানায় দুটি, সরাইল থানায় দুটি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করা হয়। ৪৫টি মামলার মধ্যে ছয়টিতে ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে তাদের মধ্যে হেফাজতের কোনো নেতা-কর্মীর নাম নেই। বাকি ৩৯ মামলায় সবাই ‘অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী’। কোনো কোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাদের অনুসারী দুষ্কৃতিকারীদের’ কথা উল্লেখ করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘তাণ্ডবের সময়ের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। বেশ কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হরতালের দিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরে সন্দেহভাজন আরমান আলিফ।
রবিবার রাতে রাতে সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকা থেকে র্যাব-১৪ এর একটি দল গ্রেপ্তার করে। পরে পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় আরমান তার ভাড়া বাসায় তল্লালি চালিয়ে ম্যুরাল ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন এবং চারটি গুলি জব্দ করা হয়।
এর আগে ম্যুরাল ভাঙচুরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
আরমান আলিফের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ফুলকারকান্দি গ্রামে। তবে পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়ার পর সেটি জ্বলতে থাকে
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে।
হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে একজন নিহত হয়।
পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে মাদ্রাসাছাত্ররা। তখন পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারায় পাঁচজন।
নিহত ব্যক্তিদের নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রতিবাদে রোববারের হরতাল ডাকে হেফাজত। হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে ব্যাপক তাণ্ডব। বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, গণগ্রন্থাগার, সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ ও মিলনায়তন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানায়।
আজকালের খবর/এএইস