শিরোনাম: |
বেরোবির ভিসি কলিমুল্লাহর দুর্নীতির প্রমাণ পেল ইউজিসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() একই সঙ্গে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া লঙ্ঘনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেছে কমিটি। জানা গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি একনেক সভায় ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ছাত্রীদের আবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা হল’ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য ভবন নির্মাণে ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্কিটেক মনোওয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডকে যৌথভাবে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক একেএম নূর-উন-নবী। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালের ১৪ জুন ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ তদারকির জন্য উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরকে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকৌশলী কাদের উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটের স্বত্বাধিকারী। কিছুদিন পর আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক মনোওয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডের কার্যাদেশ বাতিল করে প্রকৌশলী কাদেরকে দ্বিতীয় পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আর্কিটেক মনোওয়ার হাবিবকে নানাভাবে ভয়ভীতিও দেখানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠে, শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের মূল নকশা পরিবর্তন করে একটি অনিরাপদ ভবন নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে অনুমোদিত ডিপিপির তোয়াক্কা না করেই ভবন দুটির নকশা পরিবর্তন করা হয়। পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয় দুই গুণের বেশি। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনের নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ধরা হয় ৬১ কোটি টাকা। ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে মূল ডিপিপিতে পরামর্শক ফি না থাকলেও বর্তমানে উপাচার্য সেই খাতে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের নানা অসঙ্গতি নজরে এলে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। কমিশন ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচারক ড. ফেরদৌস জামান এবং অতিরিক্ত পরিচালক ড. দূর্গারানী সরকার। ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনোওয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা না করে প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া চুক্তির নিয়মাবলীর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নকশা ও ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে ভবনটির অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই এখানে দ্বিতীয় নকশা ও ডিজাইনের প্রয়োজন আছে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে না। এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
|