শিরোনাম: |
প্রিন্ট সংস্করণ
কারাগারে হলমার্ক জিএমের নারী সঙ্গী
জেল সুপার ও জেলার প্রত্যাহার
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
![]() হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত জিএম তুষার আহমেদকে বন্দি অবস্থায় কারাগারে নারী সঙ্গীর ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় পাঁচজনকে প্রত্যাহার করা হলো। গতকাল রবিবার সকালে তাদের প্রত্যাহার করা হয়। তাদের কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন। তিনি জানান, পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধাকে কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।এর আগে শুক্রবার সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। তারা হলেন– কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এর ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন, সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর মো. আবদুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী মো. খলিলুর রহমান। তাদের কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ থেকে প্রত্যাহার করে কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম কেলেঙ্কারি হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের ভায়রা ও হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমদকে কারা কর্মকর্তাদের কক্ষে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আবরার হোসেনকে প্রধান করে উপসচিব (সুরক্ষা বিভাগ) আবু সাঈদ মোল্লা ও ডিআইজি (ময়মনসিংহ বিভাগ) জাহাঙ্গীর কবিরকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবুল কালামকে প্রধান করে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা ফারজানা ও ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এদিকে ওই নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেতে কাশিমপুর কারাগার-১-এর দুজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন কর্মচারীকে ঘুষ দিয়েছিলেন হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদ। তিনি কারাগারের জেলারকে এক লাখ, ডেপুটি জেলারকে ২৫ হাজার এবং সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টর, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষীকে পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়েছিলেন। গত ১৪ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কাছে দেওয়া জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ওইদিন দায়িত্ব পালনরত ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন রত্না রায়। তবে ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে তার সম্পৃক্ততা দেখা গেলেও প্রতিবেদনে এই কর্মকর্তা নিজের কোনো দায় বা অবহেলার কথা উল্লেখ করেননি। প্রতিবেদনে রত্না রায় ওই দিনের ঘটনার জন্য জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধাকে প্রধানত দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার অনুমতি নিয়ে পুরো ঘটনার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. সাকলায়েন ছিলেন। তবে জেলারের জবানবন্দি নেননি এই কর্মকর্তা। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে রত্না রায় বলেন, যেহেতু পুরো ঘটনা জেলারের তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছে, তাই জেলারকে না জানিয়ে ওইদিন যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তবে জেল সুপার রত্না প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে তার অগোচরে ও গোপনে হয়েছে। কারাগারের গেটে জেলারই তাদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং ডেপুটি জেলার তাদের রিসিভ করেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে রয়েছে। সামগ্রিক বিষয়টি ওয়াকিটকির মাধ্যমে না বলে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে মুঠোফোনের মাধ্যমে হওয়ায় কেউ জানতে পারেনি। তার দাবি, তাকে না জানাতেই এসব করা হয়েছে। অবশ্য জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা তার বিষয়ে জেল সুপারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি মাত্র চার মাস আগে এ কারাগারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, জেল সুপারের নির্দেশেই তাদের দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন। তাদের কারাগারে ঢোকার সময় জেল সুপার কারাগারের অফিসেই ছিলেন। তিনি ২০ মিনিট পর বের হয়ে যান। ওই প্রতিষ্ঠানের পরিবারের সবার সঙ্গেই জেল সুপারের সখ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি। কারাগারের সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি কারাগারে প্রবেশের মাঝে কর্মকর্তাদের অফিস এলাকায় কালো রঙের জামাকাপড় পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ। তিনি আসার কিছু সময় পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পরা এক নারী সেখানে প্রবেশ করেন। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় ও ডেপুটি জেলার সাকলাইনের উপস্থিতিতেই ওই নারীকে সেখানে দেখা যায়। তাদের সহযোগিতার বিষয়টিও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে কারাগারের দুই যুবকের সঙ্গে ওই নারী কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষ এলাকায় প্রবেশ করে। তাকে সেখানে রিসিভ করেন খোদ ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। ওই নারী সেখানে প্রবেশ করার পর অফিস থেকে বেরিয়ে যান ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। প্রায় ১০ মিনিট পর কারাগারে বন্দি হলমার্কের জিএম তুষার আহমদকে নিয়ে আসেন। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবুল কালাম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এদিকে, এ ঘটনায় দোষী জেল সুপার, জেলারসহ জড়িত সব কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গত শনিবার তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনএমএস। |