শিরোনাম: |
প্রিন্ট সংস্করণ
মার্কিন গণতন্ত্রে পঁচন
ভয়াবহ আশংকা
নিউজ ডেস্ক
|
![]() এছাড়া বিশ^ব্যাপী সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েকদিন বাকি থাকলেও তাকে অভিশংসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসে অভিশংসন প্রস্তাব এনেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এ নিয়ে আজ ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ আর এক সপ্তাহ। কিন্তু ক্যাপিটলে তাণ্ডবের পর সেটুকু সময়ও আর তাকে দিতে চান না ডেমোক্র্যাটরা। তারা অবিলম্বে ট্রাম্পের বিদায় চান। সে জন্য প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে তিনি সংবিধান অনুসারে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে সরিয়ে দেন। কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্ট এখনো সে রকম কোনো পদক্ষেপ নেননি। রিপাবলিকানরাও এর বিরোধিতা করেছেন। তাই ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব এনেছেন। আজ তারা এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি চেয়েছেন। ট্রাম্পের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়ে রিপাবলিকান সদস্য পিটার মেইজার বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। তিনি সিএনএনকে জানিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, ট্রাম্প শাসন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ঠিক এ কথাই ডেমোক্র্যাটরা বলছেন। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন, সংবিধানের ২৫তম সংশোধন অনুসারে ট্রাম্পকে যেন তিনি অবিলম্বে সরিয়ে দেন। রিপাবলিকানরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা চাইছেন, আজ ইমপিচমেন্ট নিয়ে ভোটাভুটি হয়ে যাক। তবে ৪৩৫ সদস্যের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়ে গেলে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব যাবে সিনেটে। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাব পাস হতে হবে। তা হলেই ট্রাম্পকে সরানো যাবে। আরো ভযাবহ আশংকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা-এফবি আই জানিয়েছে, তাদের কাছে সারা দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনে ‘সশস্ত্র বিক্ষোভের’ পরিকল্পনা করা হচ্ছে এমন তথ্য রয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে। একে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ হতে পারে। এফবি আইয়ের অভ্যন্তরীণ একটি বুলেটিনে এমনটি বলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ওই বুলেটিন হাতে পেয়েছে। ট্রাম্প-সমর্থক ও কট্টরপন্থিদের অনলাইন পোস্টগুলোতে ১৭ জানুয়ারি সারা দেশে এবং ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে সশস্ত্র মহড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের দিনটিকে সামনে রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। নিয়োজিত করা হচ্ছে ফেডারেল, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের গণনা এবং জো বাইডেনের বিজয় প্রত্যয়নের জন্য কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলাকালে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটলে সশস্ত্র বিক্ষোভকারীদের হামলার পর এই বাড়তি নিরাপত্তার আয়োজন করা হচ্ছে। সেদিনের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন। ওয়াশিংটনের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের ওই হামলা পুরো পরিকল্পনার ‘শুরু মাত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এফবি আইয়ের বুলেটিনে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ওয়াশিংটনের ইউএস ক্যাপিটলের বাইরে শপথ নিতে ভীত নন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস ২০ জানুয়ারি ক্যাপিটল প্রাঙ্গণে খোলা ময়দানে শপথ নেবেন। গত বুধবার কয়েক ঘণ্টার জন্য এই ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ দাঙ্গাবাজদের দখলে চলে যায়। সোমবার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চ্যাড উল্ফ বলেছেন, ‘২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা বাড়াতে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসকে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। ছয় দিন আগেই অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।’ সোমবার বিকেলে ট্রাম্প মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন চ্যাড উল্ফ। তিনি ট্রাম্প মন্ত্রিসভার তৃতীয় পদত্যাগকারী ব্যক্তি। প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় অন্তত ১৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। মুখ খুললেন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া: ক্যাপিটল হিলে হামলার পর থেকে নিরব থাকা ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন। ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের দাঙ্গার প্রায় এক সপ্তাহের মাথায় সোমবার এক বিবৃতিতে মেলানিয়া বলেন, সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের চামড়ার রং কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতাকে ব্যবহার করে সহিংসতা ঘটানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের দিনে ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডবে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জন প্রাণ হারান। ট্রাম্পের উসকানিতেই এই হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান- উভয় দলই নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু স্বামীর উগ্র কর্মকাণ্ডে স্ত্রী মেলানিয়া কী বলেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত তিনিও নিন্দায় সরব হয়েছেন। ট্রাম্পের বিতর্কিত কর্মকান্ড: নির্বাচনের দিন নিজেকে আগাম জয়ী ঘোষণা এবং কোনো প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়া নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনায় মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের প্রতি তৈরি হয় বিরক্তি। এমনকি তার দলের অনেক নেতাকেও সরব হতে দেখা যায় এই অবস্থানের বিরুদ্ধে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন, ততদিনই একের পর এক তৈরি করে গিয়েছেন বিতর্ক। মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ সংক্রান্ত কথার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা হয়। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির চার বছরে সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত প্রচারণা। ব্যবসায়ী ট্রাম্প যে রাষ্ট্রীয় কাজে কিছুটা দুর্বল তা বিভিন্ন অবস্থায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যক্তিগত সাফাই গাওয়া কিংবা দীর্ঘসময় পর্যন্ত প্রেস ব্রিফিং করা- সবকিছুতেই তার কিঞ্চিৎ অদক্ষতা প্রকাশ হয়েছিল। সেই সঙ্গে ব্রিটেনে গিয়ে রাণী এলিজাবেথের সঙ্গে রাজকীয় ভোজে প্রটোকল ভঙ্গ করা, ভারতে এসে ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলতে গিয়ে বেশ হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসার মতো ঘটনা ট্রাম্পের চার বছরের অজস্র কাজের মাঝে একেবারেই আলাদাভাবে মনে রাখার মতো। ট্রাম্পের এমন আচরণের প্রতি বৈশ্বিক নেতারাও যে খুব বেশি খুশি ছিলেন না তা স্পষ্ট হয়েছিল ২০১৯ সালের ন্যাটো সম্মেলনে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পর্দার পিছনে ট্রাম্প সংক্রান্ত হাস্যরস বেশ সাড়া ফেলেছিল নেটিজেনদের মাঝে। কোভিড সংক্রান্ত সময়েও একের পর এক হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে গিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাস্ক ব্যবহারের কারণে প্রতিদ্বন্দী জো বাইডেনকে ভীতু বলে আখ্যা দেয়া, “একটা জাদুর মত কোভিড-১৯ চলে যাবে” কিংবা “এটি দৃশ্যত কাউকেই আক্রান্ত করেনা,” অথবা মানুষের শরীরেই জীবাণুনাশক ইনজেকশন করার মতো অদ্ভুত প্রস্তাব রেখেও হাস্যরসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর বাইরে ইসলামের প্রতি তার বিদ্বেষ কিংবা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের দিক থেকে ট্রাম্পের চার বছর উল্লেখ করার মতো। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের সবচেয়ে আলোচিত পদক্ষেপ ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা। আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলের সমঝোতা চুক্তিতে বড় প্রভাব রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ব্যর্থতার পাল্লাই একটু বেশি ভারি বলা যায়। অভিসংশনের মত বড় বিতর্ক ট্রাম্পের সঙ্গী ছিল আগে থেকেই। ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তিতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কংগ্রেসের সম্মান ক্ষুন্ন করার মত দুই অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিসংশনের প্রস্তাব আসে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ইতিহাসে কেবল তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন লজ্জা পেতে হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কোভিড ইস্যুতেও বড় আকারের ব্যর্থতার গল্প লিখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ছয় দশমিক তিন মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। মৃত্যু ও শনাক্তের হারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিশ্বের অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, ১৯৪৫ এর পর থেকে সব যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যত সৈন্য মারা গিয়েছে, কেবল এই কোভিড-১৯ ভাইরাসেই তার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়াও কৃষাঙ্গ অধিকার ক্ষুন্ন করা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে মন্দাভাবের দায়ও আছে তার কাঁধে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমানে শূন্যের অল্প উপরে। প্রায় আট দশমিক চার শতাংশ বেকারত্ব নিয়ে বর্তমানে দেশটিতে ১৩ মিলিয়ন ব্যক্তি বেকার অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বড় এক ব্যর্থতা হিসেবেই একে দেখতে চাইবেন মার্কিন জনগণ। এনএমএস। |