শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
সমবায় সেক্টর নিয়ে কতিপয় বিনীত প্রস্তাব
মো. মশিউর রহমান
প্রকাশ: রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৬:০৯ PM
সঙ্কটময়তা, সীমাবদ্ধতা উন্নয়নের চরম প্রতিবন্ধক। সব সংকট একেবারে হয়তো নির্মূল সম্ভব নয়। তাই বলে সংকট হ্রাস করাও অসম্ভব নয়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ, সুষ্ঠু জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে সংকট নিরসন করা যায়। সমবায় মানে সমবেত বা যৌথ কর্মপ্রচেষ্টা যাকে বলে কোঅপারেশন। এ থেকে বিচার করলে সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় সমবায় সেক্টরে বিদ্যমান বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি নিরসন সম্ভব।
 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত প্রত্যেকটি সমবায় সমিতির আইন ও বিধি মোতাবেক সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও অভিভাবকত্ব লাভের অধিকার রয়েছে এবং একই সঙ্গে কোন সমবায় সমিতি বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে যথাসম্ভব দ্রুত আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করাও সমবায় বিভাগের পেশাগত দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে সমবায় সমিতির কার্যক্রম মনিটরিং করে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পদ্ধতি একটি সময় সাপেক্ষ সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া যার প্রায়োগিক নানা দুর্বলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনগত সীমাবদ্ধতা দূর করা আশু প্রয়োজন।

যথাসম্ভব দ্রুত বর্তমানে বলবৎ সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর আলোকে সমবায় সমিতি বিধিমালা জারি করা প্রয়োজন।

জরুরিভিত্তিতে সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ জারি হওয়ার পূর্বে সমিতির সদস্য ব্যতীত অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কর্তৃক বৈধভাবে গৃহীত আমানত ফেরত প্রদান ও গ্রহণের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত আইনগত ও বিধির আলোকে যুক্তিসঙ্গত নির্দেশনা প্রদান করা আশু প্রয়োজন।  ৪) সমবায় সমিতির কার্যকরী মূলধন বিধি ৪৬(২) মোতাবেক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরের সদর দপ্তর, প্রশাসনিক বিভাগ, জেলা ও উপজেলা দপ্তরের দায়িত্ব ও এখতিয়ার সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতঃ সুস্পষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত নির্দেশনা জারি করা দরকার।

সমবায় সমিতির মালিকানাধীন জমি এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আইনের ধারা ৩৫ এর বিধান প্রতিপালন নিশ্চিত করার বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের সদর দপ্তর, প্রশাসনিক বিভাগ, জেলা ও উপজেলা দপ্তরের দায়িত্ব ও এখতিয়ার সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা দরকার।

সাধারণ সদস্যগণের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সমবায় সমিতির মালিকানায় জমিজমা ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কমিটি নিয়োগের বিধান করার বিষয়টি সুবিবেচনার দাবী রাখে।

উল্লেখ্য যে, নিবন্ধন ব্যতিরেকে ‘সমবায়’ শব্দটি ব্যবহার করলে সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ এর ধারা ৯ এ অনধিক ৭ (সাত) বছর কারাদন্ড বা অন্যূন ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দÐযোগ্য অপরাধ। এছাড়া, একই আইনের ধারা ২৩(ক), ২৩(খ), ৩২, ৫১, ৮১, ৮০, ৮২, ৮৩, ৮৪ এ কোন সমবায় সমিতি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ধারায় বর্ণিত অপরাধ করলে মামলা দায়ের করা কিম্বা দÐ আরোপ করার কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি সম্পর্কে বিদ্যমান সমবায় সমিতি আইন বা বিধিমালায় স্পষ্ট কোন বিধান না থাকায় বর্ণিত ধারাগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে আইনগত সীমাবদ্ধতা নিরসনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারি করা দরকার।  

সমবায় সমিতির কার্যক্রম মনিটরিং ও সে আলোকে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে আইনের ধারা ২২ ও ৮৪ এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে ধারা ৪৯ এর বিধান মোতাবেক সম্পাদিত তদন্ত প্রতিবেদন এবং ধারা ৪৩ এর বিধান মোতাবেক সম্পাদিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন এর মতো ক্ষেত্র বিশেষে ধারা ৪৮ এর বিধান মোতাবেক সম্পাদিত ‘‘পরিদর্শন প্রতিবেদন’’ কে আইনগত ভিত্তি প্রদান করা হলে সমবায় সমিতির কার্যক্রম মনিটরিং ও সে আলোকে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ এর ধারা ২৬(১) এর বিধান মোতাবেক অনেক সমবায় সমিতি উহার সদস্য ছাড়াও উহার সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ করে। কিন্তু বিগত ১৭ ফেব্রæয়ারি ২০১৩ তারিখে সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ জারি হওয়ার ফলে সমবায় সমিতি কর্তৃক সমিতির সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ করার সুযোগ রহিত হয়। ফলে আমানতকারীরা একযোগে আমানত ফেরত চাওয়ার কারণে সমবায় সমিতিগুলো ভয়ংকর অবস্থার শিকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেক সমবায় সমিতি কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত আমানত ইতোমধ্যে জমি-জমা ক্রয়সহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করায় এবং গৃহীত আমানতের বিপরীতে বিধি মোতাবেক তারল্য সংরক্ষণ না করায় সমিতি কর্তৃক তাৎক্ষণিভাবে আমানতকারীগণের সমুদয় টাকা এক সঙ্গে পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপায়ান্তর না পেয়ে কোন কোন সমবায় সমিতি উহার মালিকানাধীন জমিজমা বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সমবায় সমিতিগুলো সমিতির নামে ক্রয়কৃত জমিজমা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের কারণে বিক্রয় করতে পারছে না। আমানতকারীগণ বিভিন্নভাবে সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণকে নিয়মিতভাবে ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক চাপ প্রয়োগ, হাত-পা কেটে নেয়ার ও হত্যার হুমকি প্রদর্শনসহ পুলিশ এবং সাংবাদিকগণের নিকট অভিযোগ দাখিল করে চলেছে। কেউ কেউ থানায় ও আদালতে মামলা দায়ের করার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। আমানতকারীগণের অব্যাহত চাপ, প্রাণে মেরে ফেলার অব্যাহত হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের কারণে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণের পক্ষে সমিতির স্বাভাবিক কার্যক্রম ও ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণ প্রাণ ভয়ে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রæত আইনগত গাইডলাইন দিতে না পারলে এক সময় তারা সমিতির অফিসে তালা মেরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কাজেই পূর্বের আইন অনুযায়ী বৈধভাবে গৃহীত আমানত ফেরত প্রদানের জন্য সমবায় সমিতির মালিকানাধীন জমি-জমা বা অন্য কোন সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসনে দ্রæত যুক্তিসঙ্গত নির্দেশনা জারি করা দরকার।
সমবায় সমিতিতে কেউ ১,০০,০০০/০০ (এক লাখ) টাকার বেশি আমানত জমা করলে তার টিআইএন সনদ দাখিল করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

সমিতির সাধারণ সভার অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে এবং প্রচলিত সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালার বিধান অগ্রাহ্য করে সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক গোপনে আমানত গ্রহণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

সমবায় সমিতির নিজস্ব মূলধন (পরিশোধিত শেয়ার মূলধন, পুঞ্জিভুত সংরক্ষিত তহবিল ও মুনাফা থেকে সৃষ্ট অন্য কোন তহবিল এর সমষ্টি) এবং ঋণকৃত মূলধন (সদস্যগণের সঞ্চয় বা চাঁদা, যে কোন ধরনের আমানত ও জমার সমষ্টি) এর অনুপাত সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা দরকার।
সমবায় সমিতি কর্তৃক বিধি মোতাবেক তারল্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করতঃ উক্ত অর্থ সমিতি ও নিবন্ধকের যৌথ নামে ব্যাংক হিসাবে আমানত সুরক্ষা তহবিল সৃষ্টি করা যেতে পারে।

সমবায় সমিতির পুঁজির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উক্ত পুঁজি উৎপাদনমুখী ও লাভজনক খাতে দক্ষভাবে বিনিয়োগ করার বাস্তব পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তোলার জন্য সমিতির কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ধারণা এবং পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করার প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
স্বচ্ছ্তা ও জবাবদিহির স্বার্থে এবং সমিতির প্রত্যেক সদস্যের ব্যক্তিগত ও সমুদয় টাকার অনলাইন তথ্য সংরক্ষণের জন্য সমবায় সমিতির হিসাব ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ করা জরুরি। এ জন্য যথাসম্ভব দ্রæত দেশের সমবায় সমিতিগুলোর ব্যবহারের জন্য অভিন্ন হিসাব সফট্ওয়্যার (অপপড়ঁহঃরহম ঝড়ভঃধিৎব) প্রণয়ন ও চালু করা দরকার।
দেশের সমবায় সমিতির সদস্যদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সমবায় বাজার কনসোর্টিয়ামকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

সমবায় সেক্টরের অমিত সম্ভাবনাকে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের নীতি, কার্যকর পদক্ষেপ, পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পনা ও অঙ্গীকার দরকার।
বর্তমানে যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় সমবায় অধিদপ্তরের লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসহ সামগ্রিক কর্মকৌশলে অনিবার্য পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। কাজেই বাস্তবতার আলোকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমীচীন প্রতীয়মান হয়।
আইনের ধারা ৮ এর বিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সমবায় সমিতি নিবন্ধন চিরতরে বন্ধ করতে হবে।

সমগ্র জেলা, বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাপী কর্ম এলাকা বিশিষ্ট সমবায় সমিতি নিবন্ধন চিরতরে বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে নিবন্ধিত এ ধরণের সমবায় সমিতিগুলোর ব্যাপারে উপযুক্ত আইনগত সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

মো. মশিউর রহমান : যুগ্মনিবন্ধক, বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়, ময়মনসিংহ








সর্বশেষ সংবাদ
নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানী ও কৃষি শ্রমিকদের অবদান রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
ভোটের প্রচারণায় এগিয়ে মনোজ বৈদ্য
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সমতা চায় টিআইবি
স্বাগতম ২০২২, বিদায় ২০২১
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সুবাহর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন
তাদের মাখো মাখো ‘প্রেমের প্রাসাদ’!
‘আমাকে জায়গা দিন, এটা আমার প্রাপ্য’ : লালকেল্লার দাবিদার মোগল সম্রাজ্ঞী
চা দোকানিকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা
ভোটের প্রচারণায় এগিয়ে মনোজ বৈদ্য
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft