বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর আক্রমণ পুরোপুরি গোয়েন্দা ব্যর্থতা: হাসনাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:২৪ AM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে উল্লেখ করে একে ‘কমপ্লিট ফেইলিওর অব ইন্টেলিজেন্স’ (পুরোপুরি গোয়েন্দা ব্যর্থতা) বলেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এই গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেলসহ নেতাদের গাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ওপর যে হামলা হচ্ছে, তাতে আমরা ভীত নই। কেউ যদি মনে করে থাকে যে হাসনাত-সারজিস থেকে শুরু করে আসিফ-নাহিদ সবাইকে মেরে ফেলবে, লক্ষ হাসনাত-লক্ষ সারজিস-আসিফ-নাহিদ রাস্তায় দাঁড়াবে। বুলেটকে জয় করা তরুণ প্রজন্মকে আপনারা (ষড়যন্ত্রকারী) ভয় পান। আমাদের ওপর যত আক্রমণ হবে, তত দ্বিগুণ শক্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর আক্রমণগুলোকে আমরা কমপ্লিট ফেইলিওর অব ইন্টেলিজেন্স (পুরোপুরি গোয়েন্দা ব্যর্থতা) হিসেবে দেখছি।’ এই ফেইলিওর অব ইন্টেলিজেন্স এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা তদন্তের দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের প্রতি দায়িত্ব নিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসর ও সহযোগীদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান হাসনাত।

ক্যান্টনমেন্ট থেকে যে ৬২৬ জনকে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে, তারা ভারতে বসে এখনো বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে চাইছে—এমন অভিযোগ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এই ৬২৬ জনকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রশাসন বা দায়িত্বপ্রাপ্ত যাঁরাই ভারতে সেফ হাউসে পাঠিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের জবাবদিহি ও প্রশ্নের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের দোসর জঙ্গিরা সদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, মামলা–বাণিজ্য করছে, জনসমক্ষে আসছে। তাদের দমন ও বিচারের সম্মুখীন করার জন্য এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। প্রশাসন ও ইন্টেলিজেন্স উইং যদি মনে করে থাকে তাদের এই নির্লিপ্ত ভূমিকাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেব, এই বিপ্লবী শক্তি স্তিমিত হয়ে গেছে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। খুনি হাসিনাকে আমরা ভয় পাইনি। যদি মনে করে থাকেন আপনারা নির্লিপ্ত থাকবেন, তাহলে আমরা হাসিনার মতো আপনাদের বিকল্প খুঁজে নিতে দুবার ভাবব না।’

প্রশাসনিক সংস্কার দাবি করে হাসনাত বলেন, ১৬ বছর ধরে প্রশাসনের মাঠকাঠামো থেকে সচিবালয়ের সর্বোচ্চ কাঠামো পর্যন্ত প্রশাসনের পদে পদে স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগীরা আখড়া বানিয়ে বসেছে। শুধু হাসিনার পতন হয়েছে, কিন্তু তার মুরিদরা ক্ষমতাকাঠামোর স্তরে স্তরে অবস্থান করছে। গণমাধ্যমেও তাদের অবস্থান রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের দালাল ও পৃষ্ঠপোষকদের চাকরিচ্যুত করে নতুন নিয়োগের সার্কুলারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষের শক্তির মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম করে প্রশাসনিক সংস্কার করা।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, চোখে চোখ রেখে—এমন মন্তব্য করে ভারতের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘ভারত বর্তমানে জঙ্গিবাদের একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যাদের জঙ্গি হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে, তাদের বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করছে। ভারত যদি জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়, পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থায়ন এবং কূটনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলে ভারতের সঙ্গে আমাদের পরবর্তী সম্পর্কটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সুতরাং, ভারতের রাষ্ট্রকাঠামোকে আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করব কি না, সেই প্রশ্ন করার সময় এসেছে। ভারতের উচিত, জঙ্গিদের সহযোগিতা না করে জনগণের সিদ্ধান্তে গঠিত বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানের সরকার ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেওয়া।’

ভারত সব সময় একটা ‘সংখ্যালঘু কার্ড’ খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে একধরনের সাম্প্রদায়িক উগ্রতার বিষবাষ্প অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তারাই সংখ্যালঘু, যারা বাংলাদেশবিরোধী শক্তি এবং যাদের অবস্থান বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে। পাহাড়ে বসবাসকারী এবং হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—কেউ এ দেশে সংখ্যালঘু নন। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অব্যাহত থাকবে। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রকে আমরা ছাত্র-নাগরিক ও সিপাহীরা রুখে দেব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, বাংলাদেশে ও পৃথিবীতে এই প্রথম এমন কোনো বিপ্লব হয়েছে, যেখানে গণভবনের মালিক ও বায়তুল মোকাররমের খতিব একসঙ্গে পালিয়ে গেছে। এত অধঃপতন একটা রাষ্ট্রের কখনোই হয়নি। হাসিনা ১৬ বছরে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, আইনব্যবস্থা, রাষ্ট্রকাঠামো, মসজিদ থেকে মন্দির, পতিতালয় থেকে সচিবালয়—সবকিছুকে ফ্যাসিবাদী শক্তির মধ্য দিয়ে সে এককেন্দ্রিক করে ফেলেছিল। হাসিনা দিল্লির এজেন্ডা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত আতিফুল ইসলাম ও আবু বকর সিদ্দিক। সংগঠনের নির্বাহী সদস্য তারিকুল ইসলাম, মাহিন সরকার, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আজকালের খবর/ এমকে








সর্বশেষ সংবাদ
বেকসুর খালাস বিএনপি নেতা দুলু
পাঁচটি সাংবাদিক সংগঠনের সমন্বয়ে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি
নবীনগরের লোকনাথ আশ্রমে চুরি
লালমোহনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লালফুলের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
নিকলী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে মিঠু-হেলিম নির্বাচিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
তাড়াশে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মহিলা মেম্বারকে মারধরের অভিযোগ
কমলগঞ্জে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
ইবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে রূপসা-গড়াই বাস আটক
কুমিল্লায় জামায়াত নেতার গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন
সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft