বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
৪০ হাজার কোটি টাকার কসমেটিকসের বাজার
জাকির হুসাইন
প্রকাশ: শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:২৭ PM আপডেট: ০৭.১২.২০২৪ ৮:৩৮ PM
সৌন্দর্য সচেতনতায় বিশ্বজুড়ে প্রসাধনীর বাজার ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশেও বর্তমানে এর বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার। দেশি-বিদেশি কোম্পানির পুরোনো প্রসাধন সামগ্রীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য। ত্বকচর্চার পাশাপাশি কালার কসমেটিকসেরও চাহিদা বাড়ছে। প্রসাধনীর বাজার নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) গবেষণা বলছে, দেশে কসমেটিকস খাতের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কালার কসমেটিকস ও সাধারণ ত্বকচর্চার সঙ্গে মেডিকেটেড ত্বকচর্চার পণ্য। তবে বাজারে বিদ্যমান ৮০ শতাংশই নকল ও নিম্নমানের; যা বাজারজাত হচ্ছে নামিদামি মার্কেট থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। এতে বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অথচ দেশেই নীতি সহায়তা পেলে আধুনিক মানের কারখানা গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যেখানে নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৫ লাখেরও বেশি মানুষের।  

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৭৩ লাখ। এসব নারীর ৭০ শতাংশকে প্রসাধনী সামগ্রীর ক্রেতা বলে বিবেচনা করা হয়েছে বিটিটিসির ওই গবেষণায়। সেক্ষেত্রে এসব ক্রেতা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার কালার কসমেটিকস এবং ২৫ হাজার কোটি টাকার ত্বকচর্চার পণ্য ব্যবহার করছেন। লাইট ক্যাসেল পাটনার্স ও অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চের মতো গবেষণা সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, ২০২০ সালে দেশে প্রসাধন পণ্যের বাজার ছিল ১২৩ কোটি মার্কিন ডলারের, যা বেড়ে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১২ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই বাজার ৮ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়বে বলে জানায় গবেষণা সংস্থা দুটি।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারে একটি ৫০০ এমএল জনসন বেবি লোশনের দাম প্রায় এক হাজার টাকা। আমদানি হয়ে দেশে আসতেই এর দাম দাঁড়ায় প্রায় ৮২০ টাকা। পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৮৮০ টাকা। কিন্তু জনসন বেবি’র লোগো বসিয়ে একটি নকল ৫০০ এমএল লোশন তৈরিতে ব্যয় হয় মাত্র ১৯০-২৫০ টাকা। এই নকল লোশন কারখানা মালিকরা ৫০০ টাকায় বিক্রি করলেও উৎপাদনের প্রায় তিনগুণ লাভ হয়। অন্যদিকে মেয়েদের বহুল ব্যবহৃত প্রসাধনী লিপস্টিক। পণ্যটি দেশে উৎপাদন করলে স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ও কর দিতে হয় প্রায় ২০৫ টাকা। কিন্তু আমদানি করলে শুল্ককর লাগে মাত্র ৪৩ টাকা। অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায়ে প্রসাধনী উৎপাদন করতে প্রায় পাঁচগুণ বেশি খরচ করতে হয়। আর কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতাও অধিক লাভের জন্য বিক্রি করেন এসব নকল প্রসাধনী। এসব নকল প্রসাধনীতেও বিভিন্ন কোম্পানির নকল লোগো, বারকোড এবং মনোগ্রাম নিখুঁতভাবে তৈরি করে বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দেখে বোঝার উপায় থাকে না, কোনটি আসল আর কোনটি নকল। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নকল পণ্য ব্যবহারের কারণে অনেকেই বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি এসব প্রসাধনী ব্যবহারে এমন কিছু জটিল রোগ হচ্ছে, যার চিকিৎসায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে অনেকেই নানান ধরনের চর্মরোগ এবং ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া শিশুদের কোমল শরীরে এসব নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে অনেকের অঙ্গহানির মতো ঘটনাও ঘটছে।

বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, সব ধরনের প্রসাধনী ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। আর নকল প্রসাধনী বহুগুণে ক্ষতিকারক। কেউ যদি কোনো প্রসাধনী ব্যবহার না করে, তাহলে তার ত্বকে কোনো সমস্যা হবে না। অনেক মেয়েরা মুখের অনাকাক্সিক্ষত দাগ দূর করতে অনেক ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। দাগ দূর হওয়ার পর থেকে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক চিকিৎসক রয়েছেন যারা লেজার চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে উল্টাপাল্টা জিনিস ব্যবহার করেন। এতে করে দেহের বিভিন্ন স্থানে দাগের সৃষ্টি হয়। কসমেটিকসের বিক্রিয়ার কারণে এসব দাগ তৈরি হয়। বিশেষ করে এই কসমেটিকস যখন সূর্যের আলোর সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটায়, তখন এগুলো বেশি সমস্যা তৈরি করে এবং একাধিক কসমেটিকস ব্যবহার করলে বেশি হয়। নকল কসমেটিকস ব্যবহারে স্কিন ক্যানসারের বিষয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ কসমেটিকসে পারদ, ক্রোমিয়ামসহ অনেক ক্ষতিকারক উপাদান থাকে। সেগুলো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। দীর্ঘদিন ধরে এসব নকল কসমেটিকস ব্যবহারে স্কিন ক্যানসার হতে পারে। 

গবেষণা সংস্থা এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, নিম্নমানের প্রসাধনীতে উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার হয়। এগুলো নীরবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এবং জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভোক্তাদের পণ্যে প্যারাবেন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারকদের আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এসব রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার এখন সময় এসেছে।  

প্রসাধনী আমদানিকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী আমদানি করে। তাদের হিসাব বিবেচনা করলেও ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনীর বাজার কালোবাজারিদের দখলে। তবে এ খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, লাগেজ ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক কম শুষ্ক দিয়ে বিদেশি পণ্য আমদানি করেন। কসমেটিকস পণ্যের আমদানিকারকদের হয়ে ফ্রেইট এজেন্সিগুলো এতে জড়িত থাকে। কিছু পণ্যের শুল্ক বেশি থাকায় বাজারে অনেক সময় সেসব পণ্যের সরবরাহ কমে যায়। তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা সেসব পণ্য নকল করে বাজারে ছাড়েন। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, বিদেশি মানহীন পণ্য আমদানির ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা চলে গেছে বিদেশে। ফলে সরকারের উচিত নিম্নমানের পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেশি উৎপাদকদের নীতিসহায়তা দেওয়া। তাতে অর্থপাচার কমে রাজস্ব বাড়বে। 

রাজধানীর পুরান ঢাকায় নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো নকল করে প্রসাধনী তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে বহু বছর ধরেই। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই অবৈধ ব্যবসাকে যেন ‘ঐতিহ্য’ হিসেবেই নিয়েছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা জামিনে বেরিয়ে আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। এসব নকল প্রসাধনীতেও বিভিন্ন কোম্পানির নকল লোগো, বারকোড এবং মনোগ্রাম নিখুঁতভাবে তৈরি করে বসিয়ে দেয়া হয়। ফলে দেখে বোঝার উপায় থাকে না, কোনটি আসল আর কোনটি নকল। অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এসব নকল পণ্য সহজেই ছড়িয়ে যাচ্ছে শহরের নামিদামি মার্কেট থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো কসমেটিকস পণ্য নেই যা নকল হয় না। মোড়কজাত এসব পণ্য যখন বাংলাদেশে আসে, তখন অনেক ধাপ পার করতে হয়। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে পণ্যে আমদানিকারকের তথ্য থাকতে হবে। কিন্তু আপনারা দেখবেন বেশিরভাগ পণ্যের আমদানির তথ্য থাকে না। এতে প্রমাণিত হয়, এ কসমেটিকসগুলো আমদানির প্রোপার চ্যানেলে আসছে না। এগুলো অবৈধ পণ্য। সফিকুজ্জামান আরো বলেন, ‘এছাড়া দেশের আনাচে-কানাচে এখন নকল পণ্য তৈরির কারখানা হয়েছে। যারা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য যা মারাত্মক হুমকি।

জানা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকায় এমন অনেক নকল কারখানা রয়েছে, যেখানে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধনী। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিছুদিন পরপর আবিষ্কার করছে নকল প্রসাধনীর কারখানা। এসব কারখানায় অভিযানের পর মালিককে গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া এবং জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। কিছুদিন পর কারাগার থেকে বের হয়ে একই ব্যক্তি কারখানার নাম কিংবা স্থান পরিবর্তন করে পুনরায় চালু করছেন সেসব অবৈধ কারখানা। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। 

র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় প্রায় হাজারটি। এসব অভিযানে মামলা হয় প্রায় সাড়ে সাত হাজারটি। মামলায় সর্বমোট জরিমানা করা হয় ৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ১৯৭৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারদণ্ড প্রদান করা হয়। কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর এবং পুরান ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজার, লালবাগ, ইসলামবাগ, ইমামগঞ্জ ও নবাবপুরে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ করে সিলগালাও করে দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার নকল পণ্য। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামের মতোই ভয়ঙ্কর এসব নকল পণ্য এবং অবৈধ কারখানাগুলো। এসব নকল প্রসাধনী রাজধানীর নামিদামি মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। এদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবার তারা আগের ব্যবসায় ফিরে যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক নোভেরা বিনতে নূর বলেন, দেশে বাজারজাতকৃত নিম্নমানের পণ্য যে কোনো মূল্যে নির্মুল করা হবে। অপরাধীদের এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে কাজ করছে বিএসটিআই। তিনি বলেন, গত একবছরে বিএসটিআই প্রায় ১০ কোটি টাকার নকল প্রসাধনী জব্দ করে ধ্বংস করে। নকল প্রসাধনী যতবারই তৈরি করবে আমরা তাদের ধরবো এবং শাস্তির আওতায় আনবো। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সোর্স রয়েছে। বিএসটিআইয়ের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছে। নকল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিএসটিআই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, কোনো ধরনের কসমেটিকস জাতীয় পণ্য তৈরি করার জন্য যারা বাসা ভাড়া দেবেন, তাদের অবশ্যই দেখতে হবে কোম্পানিটির বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না। অন্যথায় বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিএসটিআই। 

এদিকে শুল্ককর জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত না হওয়ায় বিদেশি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। দেশে যখন মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে অনেক কোম্পানি এগিয়ে আসছে, তখন অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। দেশে গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। তাতে ডলার সাশ্রয় হবে, কর্মসংস্থানও বাড়বে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, সম্ভাবনাময় দেশীয় প্রসাধনী বা কসমেটিকস শিল্প খাতের বড় বাধা এ সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট। এতে হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় বিনিয়োগ। উদ্যোক্তারা আরো বলছেন, আমদানিনির্ভর এ শিল্পের পণ্য দেশে উৎপাদিত হলে আমদানি-বিকল্প পণ্য হিসেবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বর্তমানে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে ওষ্ঠাধার প্রসাধন, চক্ষু প্রসাধন, হাত, নখ বা পায়ের প্রসাধন, পাউডার, সুগন্ধিযুক্ত বাথ সল্ট এবং গোসল সামগ্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রসাধনসামগ্রী।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌন্দর্যপণ্যের এ দুই ধরনের বাজারই বড় হলেও কালার কসমেটিকসে দেশি বিনিয়োগের বেশ কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নীতিগত সহায়তা ও স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় শুল্ক-কর সুবিধা পাওয়া গেলে চাহিদা পূরণে দেশীয় শিল্প গড়ে উঠতে পারে, যার মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে বলে মনে করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। 

অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি পণ্যের নামে বাজারে চোরাই পণ্য আনা হচ্ছে, যা দেশি বাজারের জন্য যেমন হুমকি, পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জামাল উদ্দিন বলেন, কসমেটিকসের বাজারের পরিসর অনেক। কিন্তু সে অনুযায়ী দেশীয় শিল্প গড়ে ওঠেনি। আমাদের দেশের চাহিদার বড় অংশই পূরণ হয় শুল্ক ফাঁকি দেওয়া কসমেটিকস ও নকল পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে। যে কারণে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। এখন সরকারের উচিত দেশি এ খাতকে এগিয়ে নেওয়া। তিনি বলেন, বাজারের চাহিদা পূরণে অসৎ ব্যবসায়ীরা হয় মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য দেশে আনছে, না হয় স্থানীয়ভাবে নকল পণ্য তৈরি করে তা সরবরাহ করছে। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যেমন বিপাকে পড়ছে, তেমনি নকল পণ্যের ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। দেশীয় শিল্প স্থাপনে সরকারের পলিসি সাপোর্ট বড় একটি বিষয়। এখন কসমেটিকসের কাঁচামাল ও তৈরি পণ্যের দাম বেশি পড়ে যায়। কারণ কাঁচামালে শুল্ক-কর বেশি, বিপরীতে সরাসরি কসমেটিকস আমদানিতে শুল্ক-কর কম। যে কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে না। 

জানা গেছে, ত্বকচর্চায় দেশের ছয় থেকে সাতটি স্থানীয় কোম্পানি এ খাতের ৮০ শতাংশ বাজার নিজেদের দখলে রেখেছে। এর মধ্যে আছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ, কোহিনূর কেমিক্যালস, কেয়া কসমেটিকস, অ্যারোমেটিক কসমেটিকসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সম্প্রতি এ বাজারে বড় বিনিয়োগ করেছে রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। যারা এ ত্বকচর্চা পণ্যের সঙ্গে কালার কসমেটিকসেও বিনিয়োগ করছে। 

এ প্রসঙ্গে রিমার্ক এইচবি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, প্রসাধনীর পুরো বাজার অনেক সম্ভাবনাময়। দেশে গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। তাতে ডলার সাশ্রয় হবে, কর্মসংস্থানও বাড়বে। সে চিন্তা থেকে বড় পরিসরে এ খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া বিদেশি প্রসাধনী নকল ও শুল্কফাঁকি দিয়ে আনা হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে এ খাত দ্রুত বড় হবে। দেশে প্রসাধনীর ভবিষ্যৎ বাজারও অনেক বড়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ইসহাকুল হোসেন সুইটও বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকারের নীতিসহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজন বলেও মনে করেন। তিনি বলেন, কেন দেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি এমন বৈষম্য আর উল্টোনীতি? সব ক্ষেত্রে দেশি শিল্প সহায়তা দেওয়া হয়, শুধু কসমেটিকসের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এটা উচিত নয়।

সার্বিক বিষয়ে বিএসটিআইর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, দেশের বাজারে যে হারে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য পাওয়া যায় তার ভিড়ে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এক ধরনের প্রতিযোগিতায় পড়ে। সেক্ষেত্রে নতুন নতুন দেশি প্রতিষ্ঠান অথেনটিক পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে যেভাবে কাজ করছে তা দেশের জন্য অনুসরণীয়। তাই পর্যাপ্ত সুযোগ ও নীতি সহায়তায় এই শিল্পখাত থেকে সরকার আরো বেশি রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো কালার কসমেটিকস তৈরি হয় না। এই চিত্র বদলাতে এগিয়ে এসেছে রিমার্ক। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় তাদের কারখানা আমরা পরিদর্শন করেছি। নিওর ব্র্যান্ড নামে এখানে তৈরি হবে সাধারণ কালার কসমেটিকস। আবার হার ল্যান হবে এক্সক্লুসিভ কালার কসমেটিকস। এছাড়া সাবান-শ্যাম্পু থেকে শুরু করে মেকওভারের নানা পণ্য এখন থেকে বাংলাদেশেই তৈরি হবে। এটি দেশের এ খাতে একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
লালমোহনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লালফুলের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
নিকলী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে মিঠু-হেলিম নির্বাচিত
পীরগঞ্জে সেলাই মেশিন বিতরণ
মহেশপুরে স্কুলছাত্র নিহত
চিলাহাটিতে বাউ মুরগি পালনের আগ্রহ বাড়ছে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
তাড়াশে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মহিলা মেম্বারকে মারধরের অভিযোগ
কমলগঞ্জে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
কুমিল্লায় জামায়াত নেতার গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন
সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
ইবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে রূপসা-গড়াই বাস আটক
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft