মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
কাজলা দিদি, সম্পর্কের চিরচেনা রূপ
অলোক আচার্য
প্রকাশ: শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৫১ PM
‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই’- তুমুল পাঠকপ্রিয় এবং যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে থাকা ‘কাজলা দিদি’ কবিতার মাঝেই বেঁচে আছেন কাজলা দিদির স্রষ্টা যোতীন্দ্রমোহন বাগচী। কোনো একটি বিশেষ কবিতা, গল্প বা উপন্যাস দিয়ে কোনো লেখক, কবির মূল্যায়ন করা যায় না এ কথা যেমন সত্যি তেমনিভাবেই সাহিত্য জগতে কেবল একটি বা দুটি সৃষ্টি দিয়েই পাঠকের হৃদয় দখল করে নিয়েছেন এমন সাহিত্য কর্মের সংখ্যাও কম নয়, সাহিত্যিকের সংখ্যাও কম নয়। বহু সাহিত্যকর্মের মধ্যে কোনো একটি সাহিত্যকর্ম সেই সাহিত্যিককে আলোয় নিয়ে আসে। কাজলা দিদি এরকমই একটি কবিতা। শোকগাঁথা কবিতাখানি পাঠকের কাছে এতটাই প্রিয় যে কাজলা দিদি আজ সবার মুখে মুখে। কাজলা দিদির জন্য চোখ ভিজে ওঠে না এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অসম্ভব মন খারাপ করা, বুকে শূন্যতা সৃষ্টি করা একটি কবিতা বলেই হয়তো পাঠকের হৃদয়েই এর ঠাঁই হয়েছে। এই যে কাজলা দিদি নামের একটি চরিত্র সৃষ্টি করে, একটি কবিতা সৃষ্টি করে কবি যতীনন্দ্রমোহন বাগচী বেঁচে আছেন এখানেই কবির স্বার্থকতা। একটি বিশেষ সাহিত্যকর্ম যে অনেক সাহিত্যকর্মকে ছাপিয়ে যায়, পাঠকের হৃদয়ে বাঁচতে হলে এরকম একটি সৃষ্টিই যথেষ্ট কবির এ কবিতাখানিই তার উৎকৃষ্ট স্বাক্ষ্য বহন করে। কবিকে তাই কাজলা দিদির কবি বলেই অনেকে চেনে, জানে এবং ভালোবাসে। 

এটি যে কেবল এই কবির ক্ষেত্রেই ঘটেছে এমনটি নয়, দেশের বাইরের অনেক লেখককে কেবল একটি উপন্যাস বা কবিতা দিয়েই অনায়াসেই চিনে নেওয়া যায়। এটি হয় গ্রহণযোগ্যতার জন্য। উৎকৃষ্ট থেকেও উৎকৃষ্টতর সৃষ্টির খোঁজে সাহিত্য অতৃপ্ত পাঠকেরা যা পেতে চায় তা যদি কবির কবিতায় থাকে তাহলে অবশ্যই সেই সৃষ্টিই অন্যসব সৃষ্টির থেকে আলোচনায় থাকে আজীবন। কাজলা দিদির প্রতি বাঙালির আবেগ চিরকালের। কয়েক যুগ অতিবাহিত হলেও সেই আবেগে এতটুকু চিড় ধরেনি। কিন্তু কেন? প্রথমত, কাজলা দিদি চরিত্রটি একটি আবেগিক চরিত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যে আবেগের প্রতি বাঙালির দুর্বলতা চিরকালের। ভাই-বোন সম্পর্ক, বা দিদির সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক এসব বাঙালির অস্থিমজ্জায় গেঁথে আছে। দ্বিতীয়ত, কাজলা দিদি চরিত্রটি কবিতায় জীবিত নয় মৃত। যাকে হারানোর শোক বোনের ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে। আর তৃতীয়ত ও সর্বশেষ হলো, কবিতার বর্ণনায় গ্রাম বাংলার প্রকৃতির চিরচেনা রূপ উপস্থাপন করা হয়েছে যা সহজেই পাঠককে আকৃষ্ট করে। 

কাজলা দিদি কবিতাটি চতুর্থ শ্রেণিতে পাঠ্য। দিদির জন্য শিশু মনের যে হাহাকার তা আজ পাঠ করা শিশুমনকেও নাড়া দেয়, আলোড়িত করে। কবিতাটি পাঠ করার পর তাদের মনে প্রথম যে প্রশ্ন জাগে তা হলো, কাজলা দিদি কোথায় গেছে? এই কবিতায় দিদি হারানো ছোট্ট এক বোন তার মা’র সঙ্গে দিদিকে নিয়ে নানা কথাবার্তা বলে এবং সে বিশ্বাস করে তার কাজলা দিদি একদিন ঠিক ফিরে আসবে। যে বোনটি জানে না বা তখনো তার বোঝার বয়স হয়নি মৃত্যু কী। এজন্য কাজলা দিদির ছোট্ট বোনটি বলে, ‘ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল/মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল/ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে/বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে/উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল/দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল।’ কিন্তু তার মা তাকে সত্যিটা বলতে পারে না বিধায় মুখ লুকিয়ে কাঁদে। কাজল দিদি চরিত্রটি গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া দিদির প্রতিরূপ। যে তার ছোট ভাইবোনকে পরম স্নেহে বড় করে। মূলত কাজলা দিদি কবিতা লিখতে গিয়ে কবি চিরন্তন বাংলার রুপকেও ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রামীণ জীবনের মমত্বোবোধ, প্রীতি, বোনের প্রতি ভালোবাসা, শোলক বলা সবকিছুর বর্ণনাই নিঁখুত। পরিবারের একে অন্যের প্রতি যে মমতা এবং কাউকে হারানোর যন্ত্রণাও কবিতাটিতে চিত্রিত হয়েছে। কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীকে রবীন্দ্রপরবর্তী বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধানতম সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

তিনি পল্লীপ্রিয় একজন কবি ছিলেন। গ্রাম বাংলা ছিল তা সাহিত্যের উপজীব্য। কাজলা দিদি কবিতায়ও তিনি গ্রামের প্রকৃতির বর্ণনা এনেছেন নিপুণভাবে। বাংলার গ্রামবাংলার সুখ দুঃখ তিনি তার সাহিত্যকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন। বাঁশবাগান, পুকুর, নেবুর তল, ভুঁইচাপা, বুলবুলি ইত্যাদি এরকম বহু শব্দের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন যা পল্লী প্রকৃতির আদি রুপের ইঙ্গিত বহন করে। কাজলা দিদি কবিতাটি কবির কাব্য মালঞ্চ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতা লেখার পাশাপাশি কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী সম্পাদক, যুগ্মসম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। পত্রিকার মালিকও ছিলেন তিনি। গ্রামের চিরাচরিত রূপ তিনি তার কলমে ফুটয়ে তোলার প্রয়াস করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে লেখা, রেখা, জাগরণী, নিহারীকা, অপরাজিতা, বন্ধুর দান, মহাভারতী, পাঞ্চজন্য প্রভৃতি। তার আরো কবিতা রয়েছে যা পাঠকের কাছে ব্যপক সমাদৃত। এরকম একটি কবিতা হলো ‘অন্ধবন্ধু’।  তবে কাজলা দিদি এদের সবার থেকে আলাদা। কাজলা দিদি আজ বাংলার দিদির প্রতিরূপ। যে দিদি না থাকলে বুকের ভেতর বিষাদ ভর করে। কাজল দিদি তাই সর্বকালের একটি স্বার্থক কবিতা এবং স্বার্থক চরিত্র।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
এ বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি তুলবে বিএনপি
চুক্তি মেনেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করা হচ্ছে: ভারত
ঋণগ্রহীতার প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যাংকের মানববন্ধন ও মাইকিং, সামাজিকভাবে হেনস্তা
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল জাপান, সুনামির সতর্কতা
এইচএমপিভি : বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রে তিন নেতার আমন্ত্রণ নিয়ে বিভ্রান্তি, দুঃখ প্রকাশ বিএনপির
৫ আগস্ট ‘সার্বক্ষণিক যোগাযোগে’ ছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাপ্রধান
টিউলিপের পর যুক্তরাজ্যে এবার আলোচনায় সালমানপুত্র শায়ান
শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে
রাজনৈতিক চাপে নিয়োগ বাতিল হচ্ছে ৪৫০০ কর্মচারীর
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft