ক্যাম্পাস সংস্করণ, কাজের অগ্রগতি, আত্মসমালোচনা ও পরবর্তী ক্যাম্পাসের রূপরেখা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার টিএসসিসির শিক্ষক লাউঞ্জে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত তিনটি সাংবাদিক সংগঠনের (ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক সমিতি, প্রেস ক্লাব) প্রায় ৩০ জন জাতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক তানভীর মাহমুদ মন্ডলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন- ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবির সৌরভ, ইসমাইল হোসেন রাহাত, সায়েম আহমেদসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির আহ্বায়ক তারিক সাইমুম ও সদস্য সচিব ফারহানা নওশীন তিতলী, প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম, ইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শাহেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হক জায়িমসহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকরা ক্যাম্পাস সংস্কারে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং দেশ, রাষ্ট্র এবং ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীবান্ধব সকল যৌক্তিক দাবিতে পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইটকে সাংবাদিকরা সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। জুলাই বিপ্লবে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের আমি সহযোদ্ধা হিসেবে দেখি। কারণ কে সাধারণ শিক্ষার্থী, কে কার নেতা, কে কোন জায়গায় কাজ করে বা কে সাংবাদিক এসব থেকে বের হয়ে জুলাই বিপ্লবের সময় একে অপরের সহযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলাম। এমন সাক্ষীও হয়েছি যখন পুলিশ আমাকে আটক করার জন্য প্লান করে তখন ফোনে জানিয়ে দিত ভাইয়েরা। বিশেষ করে যখন নেটওয়ার্ক অচল করে দিয়েছিল তখন মোবাইলে ছোট ছোট টেক্সট পাঠিয়ে সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছিল।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিগত সরকারের আমলে মিডিয়া হস্তক্ষেপ বা কন্ঠরোধ করার সংস্কৃতি দেখেছি। বর্তমানে গণমাধ্যম কর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবেই প্রশাসনের অংশ নয়। তারা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে প্রশাসনের প্রেশার গ্রুপ হয়ে কাজ করবে।
প্রশাসনিক কাজের জটিলতা ও সার্টিফিকেট উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কিছু গণমাধ্যমে এ বিষয়ে রিপোর্ট হয়েছে। আমরা দেখেছি পরীক্ষা ফি কমানোর কথা থাকলেও কমানো হয়নি। ইতোমধ্যে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি ও রোডম্যাপ দিয়েছি। এছাড়াও আমরা আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে টিম ওয়ার্ক তৈরি করে দিব, যাতে সহজে বিষয়গুলো দেখভাল করতে পারে। গ্রুপিং করে কাজ করলে সহজে পরিত্রাণ পাবো বলে আশাবাদী। এক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের কেউ না। তবে শিক্ষার্থীদের অধিকারে এবং অনিয়মে আমরা চাপ সৃষ্টিকারী গ্রুপ হিসেবে কাজ করে যাব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা জুলাই বিপ্লবের সময় দলমত নির্বিশেষে ঐক্যের মাধ্যমে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রসঙ্গ চলে আসতেছে। যদিও সামনে আসে তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মে যে উদ্দেশ্য বা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা কাজ করেছি সেই উদ্দেশ্যই থাকবে। যদি কারো অতীত অন্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে তাকে আগের সংগঠন থেকে পুরোপুরি ছেড়ে চলে আসতে হবে।
ছাত্র সংসদ (ইকসু) প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে সমন্বয়ক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। এক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে কথা উঠেছে। সুতরাং আমরাও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চাই না। বরং আশার আলো হচ্ছে- যদি ইকসু নির্বাচন হয় তাহলে অন্যান্য লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আমি মনে করছি।
গণহত্যার দোসর বা অভিযুক্তদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগে গণহত্যার বিচার হবে পরে অন্য কিছু। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও যারা গণহত্যার দোসর রয়েছে তাদেরকে কখনও সুযোগ দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি যারা দোসর ও অভিযুক্ত তাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। যাদের হাতে শহিদদের রক্তের দাগ লেগে আছে তাদেরকে আমরা পুনর্বাসনের কখনও সুযোগ দিব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সিট বণ্টনের নীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, শুধু মেধা নয়। দূরত্ব, পারিবারিক অবস্থা ও মেধার বিবেচনায় আসন বণ্টন করতে হবে। সেই নীতি বা নিয়ম আগেও ছিল তবে বাস্তবায়ন ছিল না। আমরা এখনও বাস্তবায়ন চাচ্ছি। যদি আমাদের মধ্যে কেউ সিট বাণিজ্য বা অন্য কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে তাহলে আমাদেরকে অবহিত করবেন। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।
ক্যাম্পাসে বর্তমান তিনটা সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে, অন্য কোনো সংগঠন যদি আসতে চায় সেক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা কী হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সাংবাদিক কাজে যদি প্রশাসন চাপ সৃষ্টি করে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা কখনও চাইবো না যে পকেট সংবাদিক এখানে ঠাঁই পাক। আমাদের সাথে নির্দিষ্ট কোনো পকেট সাংবাদিকদের কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই।
কথায় কথায় আন্দোলনের নামে প্রধান ফটকে তালা দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, কথায় কথায় মেইন গেইটে তালা দেওয়ার রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজন হলে সকল সংগঠন ও ছাত্রদের নিয়ে প্রতিহত করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা ভিসি স্যারকে জানিয়েছি- তালা দেওয়ায় কুষ্টিয়া ঝিনাইদহগামী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কারো যদি অধিকার আদায় করা লাগে এখন স্যার নিজেও সবার জন্য দরজা খুলা রেখেছে। আগের প্রশাসন এরকম সুযোগ দিতো না। তবে এখন যে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে সরাসরি দেখা করতে পারবে। স্যার দাবি-দাওয়া গুরুত্বের সাথে কর্ণপাত করে থাকেন।
এছাড়া এ সময় তিনি সকল ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম বা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আজকালের খবর/ওআর