কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউপির যুবলীগ নেতার বাবাকে বাড়িতে না পেয়ে তার ছেলে হৃীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা যায়, গ্রেপ্তারের পরে তাকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়, এ বিষয় নিয়ে নানান ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। এমনকি নানা অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও পুলিশ বলেছে অভিযান পরিচালনা করে ওই ছাত্রকে অস্ত্র সরঞ্জাম সহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার স্কুল শিক্ষার্থী টেকনাফের হ্নীলা ইউপির ৫নং ওয়ার্ড দরগাহ পাড়া এলাকার সাবেক মেম্বার রেজাউল করিমের ছেলে তাউসিফুল করিম রাফি (১৪)।
পুলিশের ওসির বরাতে, ভোরে রাস্তায় অভিযান চালিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পুলিশের করা মামলার দুই সাক্ষী আজকালের খবরকে জানিয়েছেন ভিন্ন কথা।
এদিকে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্কুল ছাত্র রাফির গ্রেপ্তার নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে গ্রেপ্তারের চারদিন পর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ বলেছে, গত ২৬ নভেম্বর ভোরে টেকনাফ হ্নীলা দরগাহ পাড়া সাকিনের নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে টেকনাফ থানার ওসি গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে এসআই (নিরস্ত্র) বদিউল আলম, এসআই (নিঃ) মো. আদম আলী, এসআই (নিঃ) তুষার দাশ সঙ্গীয় ফোর্সসহ সড়কের ওপর অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনাকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাফিকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে ১টি বিদেশি অস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি, ৪০ রাউন্ড নীল রঙের কার্তুজ পাওয়া যায়।
রাফির বাবা রেজাউল করিম বলেন, মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু পুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলে খুবই মেধাবী। সে ২০২১ সালে হ্নীলা প্রি ক্যাডেট স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে ড. গাজী কামরুল ইসলাম বৃত্তি লাভ করে। ২০২১ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি ও ২০২২ সালে ৫ম শ্রেণিতে জি এইফ এইচ বৃত্তি পায়। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছেলে অংশ নিতে পারল না।
মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আক্তার ও মৌলভি জামাল হোসাইনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন রেজাউল করিম। এ বিষয়ে সুফাইদা আক্তার বলেন, ওই দিন মধ্যরাতে পুলিশ তার ঘরে ঢুকে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে কিছু খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার আলমিরাতে অস্ত্র পেয়েছে বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়।
মৌলভি জামাল হোসাইন জানান, ভোরে মসজিদের যাওয়ার পথে পুলিশের ওসি তাকে দাঁড় করান। ওই সময় রেজাউলের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করতে দেখেন। ওসি তাকে জানান, অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করা হয়েছে। এরপর একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। এটা মামলার সাক্ষী কি না আমি জানি না।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন জানান, বুধবার রাতে তারা হৃীলা ইউপির ৫নং ওয়ার্ড দরগা পাড়া নামক এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিল। এমন সময় পুলিশ দেখে ২জন পালিয়ে যেতে চাইলে রাফিকে ধরে ফেলে তারা। তারপর তার ডান হাতে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ৪০ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, শিশু রাফি বাবার নির্দেশে নুরুল আমিনের বাড়ির পেছনে অস্ত্র মজুদ করতে যাচ্ছিল। মূলত শিশু রাফির বাবা রেজাউল করিম চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত। সন্ত্রাসী কাজের জন্য লাইসেন্সবিহীন এই অস্ত্র মজুদ করেছিল।
তিনি আরও জানান, শিশু রাফিকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আজকালের খবর/বিএস